WhatsApp Image 2022-08-31 at 11.32.35 AM

বাঙালির চোখে সাদা-কালো

দেশে দেশে কালে কালে সাদার মাহাত্ম্য ধ্বনিত হয়েছে। সাদা মানেই সুন্দর। সাদা মানেই স্বর্গীয় কোনোকিছু। সাদা মানেই চোখ ধাঁধানো মন ভোলানো অপার রহস্যাবৃত মানসিক প্রশান্তির নিবাস। অপরদিকে কালো মানেই অন্ধকার। সব মুছে দেওয়ার কারিগর। কালো মানেই বিদঘুটে কোনোকিছু। কালো মানেই দুর্যোগের আভাস। কালো মানেই অভিশপ্ত নগরীর ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটের গাঁথুনি থেকে ভেসে আসা ক্রন্দনরতার চিৎকার।

সাদার প্রতি দুর্বলতা এবং কালোর প্রতি প্রচ্ছন্ন ঘৃণা স্থান বিশেষে প্রকাশ্যে ঘৃণা আমাদের চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। আমাদের পোষা বিড়াল কিংবা কুকুরটির বহিরাবরণ যদি সাদা কিংবা সাদা গোত্রীয় রঙের হয়ে থাকে তাহলে পোষ্যগুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসাও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। আবার, কোনো প্রতিষ্ঠানের কিংবা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, সাদা কবুতর ওড়ানো হচ্ছে কারণ সাদা কবুতরকে শান্তির প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সাদা কবুতরের পরিবর্তে যদি কালো কবুতর ওড়ানো হতো তাহলে কী পৃথিবী অশান্তির ভাগাড় হতো! এতো গেলো মামুলি পোষা প্রাণীর কথা। চামড়ায় মেলানিনের আধিক্যের দরুন মানুষের পৃথিবীতে মানুষের দ্বারা মানুষই সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের শিকার হয়।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ শোষণ, নিষ্পেষণ এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে চামড়ার রঙের তারতম্যের জন্য। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বর্বরতার ইতিহাস অনেক পুরাতন। সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গদের নিগ্রো, আফ্রিকান কাফ্রি, বর্বর, জন্তু-জানোয়ার ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করতে আমরা অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর এই স্বাচ্ছন্দ্য মূলত ছন্দ-তাল-লয় পায় আমাদের শৈশব থেকেই। সাধারণত, শৈশব থেকেই আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় যে, ফর্সা মানেই সুন্দর এবং কালো মানেই ভয়ঙ্কর এবং কুৎসিত। কালোকে পূর্বেই একটি ছাঁচে ফেলে দেওয়া হয় এবং এই ছাঁচেই কালো সম্পর্কিত সমুদয় আদিম ধারণা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মস্তিষ্কের এই ছাঁচই যত্নের সাথে লালন করা হয়। ইউরোপে কৃষ্ণাঙ্গের প্রতি শ্বেতাঙ্গের ঘৃণা-বিদ্রূপ-অবহেলা অনেকটাই প্রকাশ্যে ঘটে থাকে। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলে অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে কালোর প্রতি অবহেলা অনেকটা প্রচ্ছন্ন হলেও প্রবল।

এখনও যদি প্রতিবেশীর ঘর থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে তখন গৃহকর্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন থাকে – ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে? ফর্সা নাকি কালো? আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই। মেয়েদের বেলায় ফর্সা হওয়া ফরজ। আর যদি ফর্সা না হয় তাহলে তার আশু ভবিষ্যতের করুণ পরিণতির কথা চিন্তা করে মা-বাবা শিউরে ওঠেন। ভবিষ্যতে মেয়ে বিয়ে দিতে যৌতুক লাগবে এবং যৌতুকের অর্থ সঞ্চয়ের বয়স এবং মেয়ের বয়স সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। আবার, কোনো কালো চামড়ার পুরুষ যদি সৌভাগ্যক্রমে সাদা চামড়ার কোনো মেয়েকে বিয়ে করার গৌরব অর্জন করতে পারে, তাহলে সমাজের মানুষের উপমা ব্যবহারের ঘনঘটা দেখে যে কেউ মূর্ছা যেতে পারে। এহ! বাদুড়ের গলায় মুক্তোর মালা কিংবা কাকের গলায় সীতাহার – ইত্যাদি বলে ঐ পুরুষকে বিদ্রুপবাণে জর্জরিত করা হয়।

এমনকি আমাদের এই অঞ্চলের অনেক প্রবাদ-প্রবচন কিংবা গানেও বর্ণবাদ প্রকট। উদাহরণস্বরূপ : নদীর জল ঘোলাও ভালো, জাতের মেয়ে কালোও ভালো। এই প্রবাদটি বিশ্লেষণ করলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কালোর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকানো হয়েছে। মূলত এই প্রবাদটিতে কালো মেয়েকে চূড়ান্তভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। উঁচু বংশের মেয়ে কালো হলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু নিচু বংশের মেয়ে কালো হলেই সমস্যা! অর্থাৎ জাত ভালো হলে কালো আলো ছড়াবে অন্যথায় কালো মানেই অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অনন্য নিদর্শন  ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। বড়ু চণ্ডীদাসের ‘ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ‘দানখণ্ডের ১৩ নম্বর পদে কৃষ্ণের প্রতি রাধার অভিব্যক্তি নিম্নরূপ :

কাল হাণ্ডির ভাত না খাঁও।

কাল মেঘের ছায়া নাহিঁ জাওঁ।

কালিনী রাতি মোঁ প্রদীপ জালিআঁ পোহাঁও।

কাল গাইর ক্ষীর নাহিঁ খাও।

কাল কাজল নয়নে না লওঁ।

কাল কাহ্নাঞিঁ তোক বড় ডরাওঁ।।

অর্থ : কালো হাঁড়ির ভাত খাই না, কালো মেঘের ছায়াতে যাই না, কালো (অর্থাৎ আঁধার) রাত্রি প্রদীপ জ্বেলে কাটাই। কালো গরুর ক্ষীর খাই না, কালো কাজল চোখে নিই না। কালো কানাই তোকে অত্যন্ত ভয় করি।

উপর্যুক্ত ছন্দোবদ্ধ ছত্রগুলো অতীত সাহিত্যে কালোদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ মাত্র। আমাদের এই অঞ্চলে, এরূপ অমূল্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশক সাহিত্য অনেকটাই সহজলভ্য। সাহিত্য হলো সমাজের প্রতিচ্ছবি। জীবনের প্রতিচ্ছবি। সময়ের প্রতিচ্ছবি এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি। সমাজ বিনির্মাণে এবং সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহিত্যের ভূমিকা বর্ণনাতীত। সেই সাহিত্যেও বর্ণবাদ প্রকট।

কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের সৃষ্টিকর্মে নায়িকাদের রূপ-লাবণ্যের বর্ণনা দিয়ে থাকেন। সাধারণত নায়িকার বদনকে দুধে-আলতা মাখানো রঙের সাথে, নায়িকার পদযুগলকে ধবধবে শাদা বকের পালকের সাথে তুলনা করে থাকেন। তদ্রূপ কবিদের পথ অনুসরণ করে প্রণয়ী তার প্রণয়িনীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ফর্সা গোত্রের প্রাণীর সাথে তুলনা করে থাকে। এবং এরূপ তুলনাই স্বতসিদ্ধ রীতি। এর ব্যতিক্রম (যেমন: কাক কিংবা হারগিলার সাথে তুলনা) ঘটলেই অনেক সময় সম্পর্কের তাঁর কেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পুঁজিবাদ এবং বর্ণবাদের সম্পর্ক অনেকটা প্রণয়ী-প্রণয়িনীর সম্পর্কের মতো। কালোকে হীনমন্যতা রোগে আক্রান্ত করাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না পুঁজিবাদ। কারণ বর্তমানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বৃহৎ বাজারের প্রয়োজন হয়। আর এই বৃহৎ বাজার সৃষ্টির জন্য কালোর মধ্যে হীনমন্যতার ইনজেকশন পুশ করা হয়। কালোর সম্মানহানিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আমাদের বর্বর মানসিকতার গণমাধ্যমগুলো। এমনকি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বর্ণবাদ চর্চায় সর্বোচ্চ সম্মানী পাওয়ার দাবিদার।

কালো কিংবা ধলো সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত। তাই ধলো-কালোতে বিভেদ সৃষ্টি মানেই সৃষ্টিকর্তার অপমান। মানুষের আয়ত্ত্বের মধ্যে যা থাকে অর্থাৎ মানুষ যা নিজের প্রচেষ্টায় অর্জন করে সেটি হচ্ছে তার চারিত্রিক গুণাবলি। তাই সুস্থ পৃথিবী গড়তে মানবীয় গুণের কদর এবং পরিচর্যা করা আবশ্যক।

মুন্নি আক্তার সুমি

প্রভাষক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-08-22 at 11.53.20 AM

উপসর্গ ও বানান

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১) মাইকেল মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এর বিষয়বস্তু ৯টি সর্গে বিভক্ত।

এখানে ‘সর্গ’ (‘স্বর্গ’ নয়) অর্থ অধ্যায় বা কাহিনিভাগ।

উপ + সর্গ = উপসর্গ। এর দুটি অর্থ প্রচলিত আছে− ১. রোগলক্ষণ, ২. অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি । আমরা এখানে দ্বিতীয়টি (Prefix − অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ ধারণা নেব।

আপনি স্বপরিবার নিমন্ত্রিত।

এখানে ‘স্বপরিবার’ না ‘সপরিবার’ শুদ্ধ? 

‘স্ব’ (সর্বনাম) অর্থ নিজ। আর ‘স’ (উপসর্গ) অর্থ সহ। অর্থাৎ পরিবারসহ (with family)। ব্যাকরণমতে, ‘সপরিবার’ শুদ্ধ। তদ্রূপ, ‘স্বস্ত্রীক’ নয়− ‘সস্ত্রীক’ শুদ্ধ। ‘স্ববান্ধব’ নয়− ‘সবান্ধব’ শুদ্ধ। ‘স্বার্থক’ নয়−  স + অর্থক = ‘সার্থক’ শুদ্ধ।

 ব্যাকরণমতে, উপ + √সৃজ্ + অ (ঘঞ্) = উপসর্গ। অথবা, উপ (ক্ষুদ্র) যে সর্গ (সৃষ্টি) = উপসর্গ। অতএব উপসর্গ হচ্ছে একপ্রকার ‘ক্ষুদ্রপদ’ বা ‘ক্ষুদ্রসৃষ্টি ‘। প্রশ্ন হচ্ছে, উপসর্গের সাহায্যে আমরা কী করি? উত্তর হচ্ছে, নতুন অর্থবাচক শব্দ সৃষ্টি করি এবং তাতে বাংলা ভাষা শব্দসম্পদে সমৃদ্ধ হয়। অতএব উপসর্গ ‘ক্ষুদ্র’ হলেও তুচ্ছ বা উপেক্ষণীয়  নয়। এর সৃষ্টিশীলতা অফুরন্ত।  

একটি উদাহরণ দিই :

বাংলা উপসর্গ− আ

অর্থ উদাহরণ
অভাব/না অর্থেআকাঁড়া, আকাটা, আগোছালো, আচাঁছা/আছোলা, আচালা, আছাঁকা, আছাঁটা,আছোঁয়া, আঝাল/আঝালা, আঝোড়া, আঢাকা, আনাড়ি, আবাছা, আবাটা, আভাজা,  আধোয়া, আপেষা, আফাটা, আফোটা, আমোছা, আরাঁধা, আলুনি।
মন্দ/নিকৃষ্ট অর্থেআকাঠ/আকাঠা, আগাছা, আকথা, আকাল, আঘাট/আঘাটা, অকর্ম > আকাম

সংস্কৃত উপসর্গ− আ

অর্থ  উদাহরণ
পর্যন্ত অর্থেআকণ্ঠ, আকর্ণ, আজন্ম, আজীবন, আজানু, আপ্রাণ, আপাদমস্তক, আবক্ষ (− মূর্তি), আবাল্য, আব্রহ্ম, আভূমি, আমরণ, আমৃত্যু, আসমুদ্র 
ঈষৎ অর্থেআকুঞ্চিত, আকম্প, আতাম্র, আনত, আনম্র,  আরক্ত/আরক্তিম, আপাণ্ডুর, আভাস, , আশুষ্ক
বিপরীত অর্থেআদান, আগমন, আরোগ্য
অভিমুখে ক্রিয়া অর্থেআক্রমণ, আকর্ষণ
সম্যকরূপে অর্থেআচ্ছাদন, আবাসন, আবেগ, আভোগ, আবাস
ব্যাপ্ত/পূর্ণ  অর্থেআকীর্ণ (জন + আকীর্ণ = জনাকীর্ণ )
গন্ধগ্রহণ অর্থেআঘ্রাণ (মধুকর কমলের − নিয়েছে)
অসিদ্ধ অর্থেআতপ (− চাল)
দম্ভ অর্থেস্পর্ধা  > আস্পর্ধা (আদি স্বরাগম)

ব্যাকরণমতে,  উপসর্গ ‘শব্দ’ নয়− ‘শব্দাংশ’ বা ‘অব্যয়জাতীয় শব্দাংশ’।

নিচের বাক্য-দুটি লক্ষ করা যাক:

বাঘ ও সিংহ হিংস্র প্রাণী।

বাঘ বা সিংহ বনের রাজা।

এখানে ‘ও’, ‘বা’ অব্যয়পদ, কিন্তু উপসর্গ নয়।

ব্যাকরণমতে, যেসকল অব্যয় ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবাচক শব্দ গঠন করে, সেগুলোই উপসর্গ। অর্থাৎ উপসর্গ হচ্ছে কোনো পদের পূর্বস্থ ক্ষুদ্রপদ। তবে এগুলো স্বাধীন পদ নয়। যথা:  আ + কণ্ঠ = আকণ্ঠ, উপ + কূল = উপকূল, সম্ + প্রীতি = সম্প্রীতি। এখানে ‘আ’, ‘উপ’, ‘সম্’  উপসর্গ।

উপসর্গ ৩ প্রকার−

১. বাংলা উপসর্গ (২১টি)

২. সংস্কৃত উপসর্গ (২০টি)

৩. বিদেশি উপসর্গ (২৫টি?)

ব্যাকরণমতে, বাংলা উপসর্গ বাংলা শব্দের পূর্বে এবং সংস্কৃত উপসর্গ সংস্কৃত শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দুয়েকটি ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন− ‘অ’। বহু বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পূর্বে ‘অ’ যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত,  বিদেশি উপসর্গ সকল প্রকার (বাংলা, সংস্কৃত ও বিদেশি) ধাতু ও শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তৃতীয়ত, ৪টি উপসর্গ ( আ, সু, বি, নি ) বাংলা ও সংস্কৃত উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

   কতিপয় উপসর্গযুক্ত শব্দ

উল্লেখ্য, প্র + ছায়া = প্রচ্ছায়া, অপ + ছায়া = অপচ্ছায়া, প্রতি + ছায়া = প্রতিচ্ছায়া। এগুলো সন্ধির নিয়মে সিদ্ধ। উৎ + বাহু = উদ্বাহু, উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস, উৎ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল। এগুলোও

সন্ধির নিয়মে সিদ্ধ । আরও উদাহরণ− বি + উৎপত্তি = ব্যুৎপত্তি, প্রতি + উপকার = প্রত্যুপকার, প্রতি + ইতি = প্রতীতি, প্র + অগ্রসর = প্রাগ্রসর, , সম্ + মান = সম্মান (-জনক), সম্ + উজ্জ্বল = সমুজ্জ্বল, সম্ + মার্জনী = সম্মার্জনী (ঝাঁটা) , সম্ + মিলন = সম্মিলন, সম্ + আরূঢ় = সমারূঢ়, সু + অল্প = স্বল্প। অন্যান্য শব্দ: পরা + অয়ন = পরায়ণ (ণত্ব বিধি), পরি + সেবা = পরিষেবা ( ষত্ব বিধি), সু + সুপ্তি = সুষুপ্তি (ষত্ব বিধি) ।

উল্লেখ্য, সাধারণত একটিমাত্র উপসর্গ ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, অ-সম্-পূর্ণ = অসম্পূর্ণ, অন-অতি-বৃহৎ = অনতিবৃহৎ, সম্-প্র-দান = সম্প্রদান। আরও উল্লেখ্য, কতিপয় উপসর্গযুক্ত শব্দে শিষ্ট  কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয়। যথা: অগণিত > অগুনিত, অপিচ (অধিকন্তু) > আরও, আগোছাল > আগোছালো, আফুটা > আফোটা, কমবখ্ত > কমবক্ত, পরিষদ > পর্ষদ, বদমায়েস > বদমাশ, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, সম্বাদ > সংবাদ, সম্বৎসর > সংবৎসর, সম্বরণ > সংবরণ, সম্বিৎ > সংবিৎ, সম্বর্ধনা > সংবর্ধনা।

পরিভাষা সৃষ্টির ক্ষেত্রে উপসর্গ  গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অপরিহার্য।

নিচের তালিকাটি লক্ষ করা যাক:

Anonymous – বেনামী (− লেখক)

Convocation – সমাবর্তন (প্রথম −)

Conference – সম্মেলন (কর্মী-)

Circular – পরিপত্র ( সরকারি −)

Directorate – অধিদপ্তর (স্বাস্থ্য −)

Faculty – অনুষদ (বিজ্ঞান −)

Invention – উদ্ভাবন (টিকা −)

Informal – অনানুষ্ঠানিক ( − পোশাক)

Immigrant – অভিবাসী (তিনি যুক্তরাষ্ট্রে −)

Leap-Year – অধিবর্ষ ( − ২০২৪)

Notice – বিজ্ঞপ্তি (নিয়োগ − )

Opening – উদ্বোধন (অনুষ্ঠান −) 

Perfume – সুগন্ধি (চন্দনের −)

Project – প্রকল্প (আশ্রয়ণ −)

Provost – প্রাধ্যক্ষ (হল −)

Registration – নিবন্ধন (জন্ম-)

Satellite – উপগ্রহ (বঙ্গবন্ধু −)

Supperman – অতিমানব

Synonym – প্রতিশব্দ (বাংলা −)

Terminology – পরিভাষা (রসায়ন −)।

এখানে অনানুষ্ঠানিক, উদ্বোধন, উদ্ভাবন, প্রাধ্যক্ষ, সমাবর্তন, সম্মেলন ও সমারূঢ় সন্ধিবদ্ধ শব্দ। এগুলোর অর্থ, বানান ও ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-08-01 at 3.50.18 PM

Human Migration in Amitav Ghosh’s Gun Island

In Gun Island, Amitav Ghosh deals with two contemporary global issues such as climate change and human migration. In this novel, environmental occurrences have been portrayed as increasingly common issues around the world. The events like storms in Sundarbans, fires in California, tornadoes and floods in Venice have been occurred due to climate change. At the same time, Ghosh links the adventures of a seventeenth century Bengali merchant travelling between the Bay of Bengal and the Mediterranean to the struggles of present-day migrants who are moving across the borders.

            The novel Gun Island begins with Dinanath, a middle-aged Bengali immigrant and rare book dealer living in Brooklyn. In one of his annual visits in Calcutta, he gets entangled in an old legend ‘Gun Merchant’ or ‘Bondooki Sadagar’ who himself got involved with the snake-goddess, Manasa. Ghosh’s skillful use of the legend of Manasa devi along with Dinanath’s quest for resolving the mystery of ‘Gun Merchant’ or ‘Bondooki Sadagar’ allows him to address issues as diverse as climate change, mythology, Venetian history and human migration.

            Amitav Ghosh depicts Dinanath as a successful migrant settled in New York, travelling across the world for his interest and purpose.  He represents the class of ‘Global Citizens’ who enjoys the privileges bestowed upon them in this globalized society, yet he lives an unfulfilled life searching for love, purpose and interests. Another two Bengali teenagers, Tipu, a computer whiz, and Rafi a fisherman, both try to find a route to Europe aided by human smugglers. The stories of Tipu and Rafi were told in the perspective of Bengali refugees in Europe. Gun Island draws a direct parallel between the migrants leaving their homes in quest of better life and the dolphins and other animals are forced to abandon their old and familiar habitats due to rising temperature and pollution revealing the entangled destinies of human and non-human beings on earth.

            Ghosh portrays Tipu and Rafi as having had access to technology since their boyhood and they are good at using digital devices like smartphones, computers. Through internet browsing, they come to know about the safe and secured life in foreign country and have been fascinated by those allurements. Tipu thinks that “the internet is the migrants’ magic carpet; it’s their conveyor belt” (Ghosh 2019, p. 61). This novel reveals the drawbacks and destructive impacts of wrong usage of technology. In an interview, Amitav Ghosh remarks,

            A lot of this is happening because the systems exist, and these systems are not trivial systems.      The human trafficking business is the biggest clandestine industry in the world, even bigger than the drug trade. It reaches very deep into society, especially poor societies. On top of that,

            you have the information system. If you are a poor kid, say in Bangladesh or Pakistan—both of   these countries have higher rates of internet penetration rates than the U.S.—you see these         pictures on your cheap smartphone. You have social media and you are connected to people who can help you move. These technologies are absolutely at the heart of movement.

From internet, Tipu collects information regarding irregular routes to cross national boundaries but people need to have permission from the government in order to cross the borders which have been constrained by the authority of the respective countries. However, in ancient times, such restrictions had not been so strict when people migrated from one country to another.

            Another important issue Ghosh wants to clarify the readers that the systems of the past differ from those of the present as the migrants from India to Venice like Rafi, Tipu and similar expatriates cannot be termed as slaves and they willingly plan to migrate. Here, the author informs us that “the world had changed too much, too fast; the systems that were in control now did not obey any human master; they followed their own imperatives, inscrutable as demons” (Ghosh, 2019, p. 280). In this novel, we find that 21st century Italians are dependent on the labour of the immigrants who have left their birth place deliberately and cross international boundaries to reach economically affluent countries for a secured and improved life.

            In Gun Island, Amitav Ghosh blends ancient myths and legends with the tales of adventurous migrants from various developing countries to explore the endless saga of human migration from diverse developing countries for better future or career.

Alia Rawshan Banu

Senior Lecturer

Daffodil International College

WhatsApp Image 2022-07-26 at 1.44.07 PM

বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের 41তম বৃহত্তম অর্থনীতি।

বিশ্বের 50টি বৃহত্তম অর্থনীতির অংশ হিসাবে বিবেচিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দুটি দেশ ছিল বাংলাদেশ এবং ভারত।

আইএমএফ থেকে তথ্য সহ ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট দ্বারা প্রকাশিত একটি ভিজ্যুয়ালাইজড পরিসংখ্যানে ডেটা দেখা যায়, 50টি বৃহত্তম অর্থনীতি $100 ট্রিলিয়ন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য দায়ী।

যদিও ভারত ষষ্ঠ বৃহত্তম বৈশ্বিক অর্থনীতি রয়ে গেছে, গত বছরের মতোই, বাংলাদেশ 2021 সালে 42 তম থেকে এ বছর 41 তম অবস্থানে উঠে এসেছে।

যাইহোক, এ বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) $397 বিলিয়ন, যা বৈশ্বিক জিডিপির 0.4%, গত বছরের $400 বিলিয়ন চিত্রের তুলনায় কম ছিল।

অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে, শুধুমাত্র ভুটান $3 বিলিয়ন জিডিপি সহ 163তম স্থানে ছিল, যা সর্বনিম্ন বৈশ্বিক জিডিপি অবদানকারীদের মধ্যে একটি।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার জন্য পরিসংখ্যান অনুপলব্ধ কারণ তারা শীর্ষ 50 তালিকায় জায়গা করেনি।

সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, IMF আশা করছে যে 2022 সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় $104 ট্রিলিয়ন নামমাত্র মূল্যে পৌঁছাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নেতা ছিল, যার GDP $25.3 ট্রিলিয়ন- যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় এক চতুর্থাংশ।

চীন 19.9 ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অনুসরণ করেছে।

ইউরোপে সবচেয়ে এগিয়ে জার্মানি $4.3 ট্রিলিয়ন, যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ রিপোর্ট করা পরিসংখ্যানের পর থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল যে ব্রাজিল এখন দক্ষিণ কোরিয়াকে ছাড়িয়ে শীর্ষ 10-এ উঠে এসেছে।

রাশিয়া 1.8 ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি সহ 11 তম স্থানে রয়েছে।

বিশ্বের কয়েকটি ক্ষুদ্রতম অর্থনীতি মহামারী দ্বারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

IMF র‌্যাঙ্কিং-এ পরিমাপ করা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অর্থনীতি হল টুভালু $66 মিলিয়ন।

নীচের 50 টির বেশিরভাগকে নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের এবং উদীয়মান/উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, 2022 সালে মাথাপিছু আয়ের মাত্রা প্রাক-মহামারীর প্রবণতা থেকে প্রায় 5% কম হবে।

রাশিয়া 2022 সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার -8.5% অনুভব করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও যুদ্ধের খরচ এবং ক্রমবর্ধমান কঠোর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞাগুলি কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে তা এখনও দেখা বাকি।

2022 সালের জন্য বৈশ্বিক বার্ষিক GDP প্রবৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে জানুয়ারী হিসাবে 4.4% হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে এটি 3.6% এ সামঞ্জস্য করা হয়েছে।

যদিও প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রাখে, মহামারী-পরবর্তী সময়ে যে পুনরুদ্ধারের আশা করা হয়েছিল তা চাপা পড়ে যাচ্ছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতির কারণে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনুমানগুলি নীচের দিকে সংশোধিত হচ্ছে।

বর্তমানে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হলেও তা ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পরবে। কেননা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বৈষয়িক অর্থনীতির উপর এক বিরূপ প্রভাব পরছে। এতে করে আগামি দিন গুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্বক হুমকির সম্মক্ষীন হবে।

সাজ্জাদ হোসেন

লেকচারার

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-07-21 at 10.47.49 AM

সন্ধি ও বানান

বাংলা বানান সম্পর্কে একটি কৌতুক প্রচলিত আছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তখন হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ। একদিন একটি অপরিচিত বালক− চেহারা ও  পোশাকে জীর্ণশীর্ণ− তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল এবং তাঁকে বলল− ‘মহাশয়, আমি দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী।’ প্রত্যুত্তরে বিদ্যাসাগর বললেন− ‘তা তো কথা শুনেই বুঝতে পারছি।’  

কৌতুকটির মর্মার্থ কী?  

বালকটির আর্থিক দারিদ্র্য যেমন সত্য, তেমনি ভাষাজ্ঞানের দারিদ্র্যও পীড়াদায়ক। বিদ্যাসাগর কৌতুকচ্ছলে সে-দিকটিতে ইঙ্গিত করেছেন।

উল্লেখ্য, দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা। এটি বিসর্গ সন্ধিজাত শব্দ।

বাংলা ভাষায় এমন বহু সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হয়, যেগুলো সন্ধিজাত। যেমন, উপরি + উক্ত = উপর্যুক্ত। কিন্তু ‘উপর্যুক্ত’ নয়− বরং ‘উপরোক্ত’ শব্দটি বহুপ্রচলিত। সংসদ্ বাঙ্গালা অভিধানমতে, ‘উপরোক্ত’ প্রচলনে সিদ্ধ। কিন্তু বাংলা একাডেমির বানানবিধিমতে, ‘উপর্যুক্ত’ বানানই ব্যাকরণসিদ্ধ ও শুদ্ধ।

আমাদের ধারণা, বানান ব্যাকরণসিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘অত্যান্ত’ কি শুদ্ধ? সন্ধির সূত্রমতে, অতি + অন্ত = অত্যন্ত। তদ্রূপ, অতি + অধিক = অত্যধিক। ‘কটুক্তি’ কি শুদ্ধ? সন্ধির সূত্রমতে, কটু + উক্তি = কটূক্তি। তদ্রূপ, অনু + উদিত = অনূদিত। কিন্তু অতি + উক্তি = অত্যুক্তি। ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’ কি শুদ্ধ ? সন্ধির সূত্রমতে, শ্রদ্ধা + অঞ্জলি = শ্রদ্ধাঞ্জলি। তদ্রূপ, গীত + অঞ্জলি = গীতাঞ্জলি, জল + অঞ্জলি = জলাঞ্জলি, পুষ্প + অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলি।

‘রবি’/’রবিঠাকুর’ শুদ্ধ। সন্ধির সূত্রমতে, রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র। অতএব ‘রবীন্দ্রনাথ’ ঠাকুর শুদ্ধ। সন্ধির সূত্রমতে, শরৎ + চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র। কিন্তু ‘শরৎচন্দ্র’ চট্টোপাধ্যায় কি শুদ্ধ? প্রচলিত বানানবিধিমতে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম যেভাবে রক্ষিত বা নিবন্ধিত হয়েছে, সেভাবেই ব্যবহৃত হবে। সেহেতু ‘শরৎচন্দ্র’ (লেখকের নাম) শুদ্ধ।  সেহেতু ‘কালিদাস’ নয়− ‘কালীদাস’ শুদ্ধ, ‘চণ্ডিদাস’ নয়− ‘চণ্ডীদাস’ শুদ্ধ।

নিচের তালিকাটি লক্ষ  করা যাক:

ভুল বানানশুদ্ধরূপ
উল্লেখিত ইতিপূর্বে ইতিমধ্যে এতদ্বারা দূর্ঘটনা পুরষ্কার শিরচ্ছেদ সুস্বাগত সুস্বাস্থ¨ উৎ + লিখিত = উল্লিখিত  ইতঃ + পূর্বে = ইতঃপূর্বে ইতিঃ + মধ্যে = ইতোমধ্যে এতৎ + দ্বারা = এতদ্দ্বারা দুঃ + ঘটনা = দুর্ঘটনা পুরঃ>পুরস্ + কার = পুরস্কার শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ সু + আগত = স্বাগত স্বস্থ + য = স্বাস্থ¨

সংস্কৃত ব্যাকরণমতে, বিসর্গ সন্ধি দুই প্রকার: ১. র-জাত বিসর্গ, ২. স-জাত বিসর্গ। অন্তঃ > অন্তর্ + বর্তী = অন্তর্বর্তী। তদ্রূপ, অন্তঃ + ভুক্তি = অন্তর্ভুক্তি। কিন্তু অহঃ + নিশি = অহর্নিশ। অ-যুক্ত t (বিসর্গ) > স হয়। যেমন, তিরঃ > তিরস্ + কার = তিরস্কার। তদ্রূপ, নমঃ + কার = নমস্কার, পুরঃ + কার = পুরস্কার। কিন্তু ই/উ-যুক্ত t (বিসর্গ)> ষ হয়। যেমন, আবিঃ > আবিষ্ + কার = আবিষ্কার। তদ্রূপ, বহিঃ + কার = বহিষ্কার, পরিঃ + কার = পরিষ্কার, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ, ভ্রাতুঃ + পুত্র = ভ্রাতুষ্পুত্র।

উল্লেখযোগ্য যে, সন্ধিতে ‘সমীভবন’ গুরুত্বপূর্ণ।  যথা: উৎ + জ্বল = উজ্জ্বল, উৎ + লাস = উল্লাস, উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস, উৎ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল, চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র, সৎ + জন = সজ্জন,  বিপদ + জনক = বিপজ্জনক। খাঁটি বাংলা সন্ধি: পাঁচ + জন = পাঁজ্জন, দেড় + শ = দেশ্শ, পাঁচ + শ = পাঁশ্শ, চার + লাখ = চাল্লাখ। উল্লেখ্য, এসব বাংলা সন্ধি মূলত কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয় ।

কতিপয় সন্ধিজাত সংস্কৃত শব্দের শিষ্ট কথ্যরূপ আছে। যেমন, দেব + আলয় = দেবালয় > দেউল, মহা + উৎসব = মহোৎসব > মোচ্ছব, রাজ্ + ঞী/নী = রাজ্ঞী > রানি, পুরঃ + হিত = পুরোহিত > পুরুত। আবার (স্ব + অক্ষর =) ‘স্বাক্ষর’ (sign) সন্ধিজাত শব্দ। (স + অক্ষর =) ‘সাক্ষর’ (Literate) উপসর্গ ও সন্ধিজাত শব্দ।

মূলকথা এই যে, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় ধ্বনিরূপগত বা উচ্চারণগত পার্থক্য  আছে। সেহেতু সংস্কৃত সন্ধিতে  হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর (ই/ঈ, উ/ঊ)  স্বীকৃত। বাংলা সন্ধিতে শুধু  হ্রস্বস্বর (ই, উ)  স্বীকৃত। আরও উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় বিসর্গ সন্ধি নেই।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-07-17 at 3.18.16 PM

দলিতদের কবি নজরুল

বাংলা সাহিত্যে সোনার কাঠির পরশ বুলিয়ে সাহিত্য কাননকে সুশোভিত করেছেন যে কজন কবি, তাদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) অন্যতম। নজরুল সাধারণত বিদ্রোহী কবি হিসেবে বরণীয়। কিন্তু তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। তাই তাঁকে শুধু মোটাদাগে ‘বিদ্রোহী’ অভিধায় ভূষিত করলে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি শুধু বিদ্রোহী কবি নন, প্রেমেরও কবি। তিনি শোষিতদের কণ্ঠস্বর। শোষিতদের তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পরম বন্ধু। তিনি মানবতাবাদী কবি। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে সাম্যের কথা ।

পরাধীনতা এবং শোষণের নিগড়ে আবদ্ধ জনগোষ্ঠিকে এক চিলতে রোদ এনে দেওয়ার জন্য তাঁর কলম ছিল সদাতৎপর। তিনি নিপীড়িতদের অধিকার আদায়ের জন্য সদা সচেষ্ট ছিলেন যা তাঁর কবিতার পরতে পরতে প্রতিভাত হয়েছে। অজয় নদীর তীরে চুরুলিয়া গ্রাম। আর নদী এবং পাহাড় পরিবেষ্টিত এই চুরুলিয়া গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন নজরুল। যারপরনাই নদীর গতিশীলতা এবং পাহাড়ের উচ্চতা তাঁর চরিত্রে প্রস্ফূটিত হয় যা পরবর্তিতে তাঁর কবিতায় অনন্য নিয়ামক হিসেবে প্রযুক্ত হয়।নজরুলের চোখে সবাই সমান।সমাজের জাত-পাত-উঁচু-নিচুর বিভেদ ভেঙ্গে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তিনি সর্বহারাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সদা তৎপর ছিলেন। তবে নজরুলের সর্বহারা মার্কসীয় সর্বহারা নয়। ঔপনিবেশিক শোষণে পিষ্ট সর্বহারাদের যন্ত্রণাময় জীবন এবং যন্ত্রণা থেকে উত্তরণের আখ্যানই হলো নজরুলের কবিতা।

দলিত বলতে সাধারণত সমাজের নিম্নস্তরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সমাজ কাঠামো প্রধানত দুই শ্রেণির জনগোষ্ঠি নিয়ে গঠিত। এক গোষ্ঠি সমাজ নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অর্থ-বিত্তে দুর্বল জনগোষ্ঠিকেও নিয়ন্ত্রণের ঠিকাদার হিসেবে নিজেদের নিযুক্ত রাখে এবং তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা দলিতদের প্রভু হিসেবে নিজেদের জাহির করে আনন্দ পায়। কাজী নজরুল ইসলাম এই দলিতদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই সৃষ্টি করেছেন চুনিপান্নাসম কবিতাগুচ্ছ। তাঁর কবিতার শিরা-উপশিরায় চৈতালির মতো  ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমাজের শোষিতদের কথা। সমাজ বিনির্মাণে,সভ্যতার বিনির্মাণে, কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুরদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে কবি লিখেছেন কিছু অসামান্য কবিতা। কায়িক শ্রম দিয়ে যারা মানবসভ্যতাকে যুগযুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছেন তারাই দলিত, তারাই আজ সমাজের প্রান্তে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এই বিদঘুটে সমাজ তাদের সঠিক ভাবে মূল্যায়ন না করলেও প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার ডালপালায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধার ফুল সাজিয়ে তাদের মূল্যায়ণ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় ফুটে উঠেছে দলিতদের শোষিত হওয়ার এবং শোষণকে উপেক্ষা করে বিদ্রোহী হয়ে উঠার চিত্র।

‘‘আসিতেছে শুভদিন,

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!’’

শোষিতরা যুগযুগ ধরে শোষকদের অত্যাচার সহ্য করবে না। তারাও শোষকদের শোষণ নির্যাতনের কড়া জবাব দিবে একদিন। কবির সঙ্গে যেনো শোষিতদের হাজার বছরের পুরানো আত্মিক সম্পর্ক। তাইতো তাদের সুখে সুখি এবং তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে কবি লিখেছেন:

“তারাই মানুষ, তারাই দেবতা,গাহি তাহাদেরি গান

 তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’’

প্রেমের কবি নজরুল মানুষে মানুষে সম্প্রীতি চেয়েছেন। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবেই বিচার করেছেন এবং উচুতলার মানুষ, নিচুতলার মানুষ _ সমাজের এই নিকৃষ্ট নিয়মটি তিনি মানতে নারাজ। মানবতাবাদী কবি মানব মনে সাম্যের মোমবাতি প্রজ্বলনের জন্য আজীবন কবিতার শোণিতধারায় বিদ্রোহ প্রবাহিত করেছেন। তিনি সুষম বন্টণের মাধ্যমে সমাজের উঁচু-নিচু,জাত-পাত বিভেদের ইতি চেয়েছেন।

“গাহি সাম্যের গান-

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!”

                                                                                                                                                               মানুষের কবি,মানবতাবাদী কবি,প্রেমের কবি,শান্তির কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত নিপীড়িত শোষিত জনগোষ্ঠীর স্বর ও সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবির সঙ্গে এই প্রান্তিকজনগোষ্ঠীর যেন এক আত্মিক সম্পর্ক। শৈশব থেকেই দরিদ্রতার সঙ্গে বাস করতে করতে কবির আত্মোপলব্ধি থেকেই মুলত এই  আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

কবি ‘চোর-ডাকাত’ কবিতায়ও সমাজের উঁচুতলার মানুষের প্রতি ধিক্কার পোষণ করেছেন। কারণ তারাই বড় চোর অথচ তাদের সামাজিক অবস্থানের কারনে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

“ছোটোদের সব চুরি করে আজ বড়োরা হয়েছে বড়ো।  

যারা যত বড়ো ডাকাত-দস্যু জোচ্চোর দাগাবাজ

তারা তত গুণী জাতি সঙ্ঘেতে আজ।’’

নজরুলের কবিতার মূল সুরই হলো মানবতাবাদ এবং মানবের জয়গান। তিনি শুধু সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকার আদায়ে সচেতন ছিলেন না, তিনি যুগ যুগ ধরে নিষ্পেষণের শিকার হওয়া নারীকুলের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেও কবিতায় শব্দের বাণ নিক্ষেপ করেছেন। নারীরাও সমাজের শোষিতদের কাতারেই দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে।

নারীদের অধিকার আদায়ে এবং তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে কবি সৃষ্টি করেছেন ‘নারী’ এবং ‘বারাঙ্গনা’।

“নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে

 আপনারি রচা অই কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।”

নারীকে শুধু নারী হিসেবে কল্পনা না করে, মানুষ হিসেবে কল্পনা করেছেন কবি। তাই তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে নারীর অধিকার এবং মর্যাদার কথা।

“নাই হ’লে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি

তোমাদের ছেলে আমাদেরই মতো, তারা আমাদের

জ্ঞাতি;”

এই অন্তঃসারশূন্য সমাজব্যবস্থায় মানুষের অধিকার খর্ব করাই যেন মানুষের কাজ। সমাজের চোখে ঘৃণ্য বারাঙ্গনার প্রতি এই অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধই কবিকে করে তুলেছে যুগশ্রেষ্ঠ।

নজরুলের কবিতা সমাজের প্রান্তিক স্তরের মানুষের জন্য মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টির মতোই প্রশান্তিদায়ক। তারা যেন যুগ যুগ ধরে চাতকের মতো কবির অপেক্ষায়ই ছিলেন। তাদের কাস্তে ও কুঠারের ঝনঝনানিতে, শ্রমে ও ঘামে নজরুলের কবিতা বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে। সময় এসেছে নজরুলচর্চা বেগবান করার।

মুন্নি আক্তার সুমি

প্রভাষক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-07-07 at 3.44.57 PM

ডিজিটাল ডেটা

ডিজিটাল ডেটা কী?

ডিজিটাল ডিভাইসে (মোবাইল/কম্পিউটার) আমরা যে ডেটা রাখি তার সবই কম্পিউটারের ভাষা বাইনারি (0,1) এ রুপান্তর হয়ে তারপর তা মেমোরিতে স্থান পায়। আমরা চাইলেই কোন এনালগ ডেটাকে ডিজিটাল ডিভাইসে রাখতে পারি না, রাখতে চাইলে তাদের অবশ্যই ডিজিটাল ডেটায় রুপান্তর করে নিতে হয়।

প্রশ্ন জাগতে পারে, ডিজিটাল ডিভাইস কী? ডিজিটাল ডিভাইস হচ্ছে এমন ডিভাইস যেখানে বিভিন্ন ইলেকট্রিকাল সার্কিটের মাধ্যমে তড়িৎ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করা হয় এবং বাইনারি ভাষার 0 এবং 1 এর মাধ্যমে সেই ডিভাইসের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয়। আর ডিজিটাল ডিভাইসে আমরা যে ছবি, গান, ফাইল রাখি তা সবই ডিজিটাল ডেটা।

মনে করুন, আপনি A কে কম্পিউটারে রাখবেন, এটা কম্পিউটারে স্থান পাবে 01000001 হিসেবে। এভাবে কোন ক্যারেক্টার এবং চিহ্নের জন্য কী বাইনারি হবে তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। আপনি যদি কোন ছবিকে মেমোরিতে রাখতে চান, সেটাও বাইনারিতে থাকবে মেমোরিতে। ছবি তৈরি হয় অসংখ্য পিক্সেল দ্বারা, পিক্সেল মানে ছোট ছোট বর্গাকার ঘর যেটায় বিভিন্ন রং থাকে এবং ঐ রংগুলোরও আলাদা আলাদা বাইনারি মান থাকে, যার ফলে কম্পিউটার বুঝতে পারে কোন পিক্সেলে কী রং আছে।

ডিজিটাল কোন ডেটা আমরা যখন ডিলিট করে দেই তখন তা কোথায় যায়??

আমাদের ডিলিট করার সাথে সাথেই কোন ফাইল, ছবি, ডেটা ডিলিট হয়ে যায় না। কোন ফাইল কম্পিউটারে রাখলে তা কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ একটা ইনডেক্সিং (বইতে যেমন সূচিপত্র থাকে) চার্টের মাধ্যমে স্টোর করে রাখে যে মেমোরির কোথায় কোন ফাইলটাকে রেখেছে। আমরা যখন সেই ফাইলটাকে ডিলিট করে দেই তখন ইনডেক্স থেকে সেই ফাইলটা মুঝে যায় কেবল, কিন্তু মেমোরিতে কিন্তু থেকে যায়, তাই আমরা সেই ফাইলটাকে আর কম্পিউটারে খুঁজে পাই না। আর যখন আমরা নতুন কোন ফাইল রাখি তখন তা আগের জায়গাতেই রিপ্লেস হয়ে যায় শুধু। আর ডেটা রিকোভার সফটওয়্যার দিয়ে আপনার মুঝে ফেলা ডেটাকে ফিরিয়ে আনা যায় যদি আপনি ডেটা রিপ্লেস না করে ফেলেন। তাই কোন ডেটা একেবারে ডিলিট করে ফেললে এরপর কম্পিউটার আর তেমন ব্যবহার না করে ডেটা রিকোভার সফটওয়্যার দিয়ে তা সাথে সাথেই রিকোভার করার চেষ্টা করতে হবে। PhotoRec সফটওয়্যারটা ব্যবহার করা যেতে পারে যা উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্সে কাজ করে।

 

আব্দুল্লাহ ওমর ফারুক

প্রভাষক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-06-28 at 12.12.02 PM

বাংলা সন্ধি

সম্ + √ধা + ই = সন্ধি।

সম্ অর্থ একসঙ্গে, √ধা অর্থ ধারণ করা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনিকে একসঙ্গে ধারণ করা বা ধরে রাখাই সন্ধি। অর্থাৎ সন্ধি হচ্ছে ধ্বনিসন্ধি (phonic union) । ব্যাকরণমতে, সন্ধি ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

পৃথিবীর সব ভাষাতেই সন্ধির ব্যবহার আছে এবং ভাষাভেদে সন্ধির নিয়মেও ভিন্নতা আছে। সংস্কৃত ভাষায় বহু সন্ধিজাত শব্দ আছে এবং সন্ধির বহু নিয়মও আছে। সে-তুলনায় বাংলা ভাষায় সন্ধির ব্যবহার সীমিত।

আমরা এখানে বাংলা সন্ধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা নেব।

বাংলা সন্ধি ২ প্রকার− স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।

কতিপয় বাংলা সন্ধি সংস্কৃত সন্ধির অনুরূপ। যথা:

. স্বরসন্ধি

অ + অ = আ

পোস্ট + অফিস = পোস্টাফিস।

অ + আ = আ:

গোল + আলু = গোলালু

ঘাম + আছি = ঘামাচি

চাষ + আ = চাষা

বড় + আই = বড়াই

রকম + আরি = রকমারি

বাচ + আল = বাচাল

মাত (মত্ত) + আল = মাতাল

ঠাকুর + আলি = ঠাকুরালি।

অ + এ = এ:

আধ + এক = আধেক

এক + এক = একেক (− দিন)

কত + এক = কতেক

চার + এক = চারেক

পাঁচ + এক = পাঁচেক

তিল + এক = তিলেক

দশ + এক = দশেক

যত + এক = যতেক

শত + এক = শতেক।

তদ্রূপ: কয় + এক = কয়েক, দুই + এক = দুয়েক। উইক-এন্ড = উইকেন্ড।

আ + আ = আ:

ঢাকা + আই = ঢাকাই

মিঠা + আই = মিঠাই

মালা + আই = মালাই

জেঠা + আমি = জেঠামি/জ্যাঠামি

ভাঙ্গা + আনি = ভাঙ্গানি > ভাঙানি

রাঙ্গা + আনি = রাঙ্গানি > রাঙানি

সুতা + আর = সুতার > সুতোর

কাঁসা + আরি = কাঁসারি

জুয়া + আরি = জুয়ারি> জুয়াড়ি

মিতা + আলি = মিতালি

সোনা + আলি = সোনালি

রুপা + আলি = রুপালি

সুতা + আলি = সুতালি > সুতলি।

আ + ই = ই:

গোলা + ই = গুলি

ছাতা + ই = ছাতি

ছোরা + ই = ছুরি

যা + ইচ্ছে + তাই = যাচ্ছেতাই।

আ + এ = আ:

ঢাকা + এর = ঢাকার

খুলনা + এর = খুলনার

পদ্মা + এর = পদ্মার

মেঘনা + এর = মেঘনার।

টীকা: চায়ের বাগান = চা-বাগান। (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ)

ই + ই = ই :

খাসি + ইয়া = খাসিয়া

ভাই + ইয়া = ভাইয়া

ঘড়ি + ইয়াল = ঘড়িয়াল > ঘড়েল

লাঠি + ইয়াল = লাঠিয়াল > লেঠেল।

ই + এ = ই:

কুড়ি + এক = কুড়িক

কোটি + এক = কোটিক

খানি + এক = খানিক > খানেক (মাস-)

গুটি + এক = গুটিক।

এ + আ = এ:

কুঁড়ে + আমি = কুঁড়েমি

ছেলে + আমি = ছেলেমি।

. ব্যঞ্জনসন্ধি

পূর্বে বর্গীয় ১ম বর্ণ এবং পরে বর্গীয় ৩য়/৪র্থ/৫ম বর্ণ অথবা অন্তঃস্থ বর্ণ (য র ল ব) অথবা উষ্মবর্ণ (হ) থাকলে, বর্গীয় ১ম বর্ণের স্থানে ঐ বর্গের ৩য় বর্ণ হয়। যেমন:

এক + গুণ = এগ্গুণ, ক> গ

ডাক + ঘর = ডাগ্ঘর, ক> গ

শাক + ভাত =শাগ্ভাত, ক> গ

টক + গন্ধ = টগ্ গন্ধ, ক> গ

বট + গাছ = বড্গাছ, ট > ড

নাত + বৌ = নাদবৌ, ত > দ

রাত + দিন = রাদ্দিন, ত > দ

আড়ত + দার = আড়তদার > আড়দ্দার, ত > দ

মজুত + দার = মজুতদার > মজুদ্দার, ত > দ

পাঁচ + জন = পাঁজ্জন, চ > জ।

উল্লেখ্য, স্বরলোপ, স্বরসঙ্গতি, সমীভবন, ঘোষীভবন, অল্পপ্রাণীকরণ, দ্বিত্ব ব্যঞ্জন প্রভৃতি বাংলা সন্ধির মূল ভিত্তি।

নিচে সূত্রসহ উদাহরণ দেওয়া হলো:

. স্বরলোপ

মধ্যস্বর লোপ:

অ-লোপ

বড় + আপু = বড়াপু

বড় + দাদা = বড়্দা

মেজ + দাদা = মেজদা

সেজ + দাদা = সেজদা

ছোট + দাদা = ছোড়্দা

√বস্ + অতি = বসতি > বস্তি

√বাট্ + অনা = বাটনা। 

টীকা: বড় + আপা = বড়্’পা। পিক-আপ = পিকাপ, মেক-আপ = মেকাপ।

আ-লোপ  

কাঁচা + কলা = কাঁচকলা

কোথা + থেকে = কোত্থেকে

খুড়া + তুত = খুড়তুত > খুড়তুতো

জেঠা + তুত = জেঠতুত > জেঠতুতো

ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড়

টাকা + শাল = টাকশাল

ভরা + দুপুর = ভরদুপুর

ধোপা + খোলা = ধুপখোলা (− মাঠ)।

ই-লোপ

জাতি + ভাই = জাতভাই

নাতি + বৌ = নাতবৌ

পানি + তা = পান্তা (-ভাত)

পানি + সা = পানসা > পানসে

পাখি + মারা = পাখমারা

বেশি + কম = বেশকম

মিশি + কালো = মিশকালো

সারি + বন্দী = সারবন্দী

মাসি + তুত = মাসতুত > মাসতুতো

পিসি + তুত = পিসতুত > পিসতুতো।

উ-লোপ

উঁচু + কপালি = উঁচ্কপালি।

এ-লোপ

গাছে + পাকা = গাছপাকা (− আম)

ঘরে + পাতা = ঘরপাতা (− দই)

পথে + চলা = পথচলা

বাক্সে + বন্দী = বাক্সবন্দী

পেটে + ব্যথা = পেটব্যথা

পিছে + মোড়া = পিছমোড়া

মনে + গড়া = মনগড়া

মনে + মরা = মনমরা

তালে + কানা = তালকানা

রাতে + কানা = রাতকানা।

মধ্য ও অন্ত্য স্বরলোপ:

কাটা + ছাঁটা = কাটাছাঁটা > কাটছাঁট

ঝাড়া + মোছা = ঝাড়ামোছা > ঝাড়মোছ

দেখা + শুনা = দেখাশুনা > দেখশুন

ভরা + পুরা = ভরাপুরা > ভরপুর

রাখা + ঢাকা = রাখাঢাকা > রাখঢাক

হেলা + দোলা = হেলাদোলা > হেলদোল।

তদ্রূপ: খোদার বান্দা = খোদাবন্দ।

২. স্বরাগম

মধ্য স্বরাগম

বাগ + চা = বাগিচা

√বহ্ + তা = বহতা।

. স্বরসঙ্গতি:

আ + উ = উ:

আব্বা + উ = আব্বু

আম্মা + উ = আম্মু

কাকা + উ = কাকু

জেঠা + উ = জেঠু

কালা + উ = কালু

ধলা + উ = ধলু

খোকা + উ = খুকু

খালা + উ = খালু

দাদা + উ = দাদু (-বাড়ি)

নানা + উ = নানু (-বাড়ি)

মামা + উ = মামু (গ্রাম্য শব্দ)। 

তদ্রূপ: নিন্দার্থে বা স্নেহার্থে− মোটা + উ = মটু, ছোট + উ = ছটু, পাতালা + উ = পাতলু, লম্বা + উ = লম্বু, রাধা + উ = রাধু, হাঁদা + উ = হাঁদু।

অনি (প্রত্যয়) > নি:

√খাট্ + অনি = খাটনি > খাটনি (খাটা-)

√ঘুট্ + অনি = ঘুটনি > ঘুটনি (ডাল-)

√চাল্ + অনি = চালনি > চালনি

√চাঁচ্ + অনি = চাঁচনি > চাঁচনি

√চাট্ + অনি = চাটনি > চাটনি

√ছাক্ + অনি = ছাঁকনি > ছাঁকনি

√ঢাক্ + অনি = ঢাকনি > ঢাকনি।

অনি (প্রত্যয়) > উনি:

√আঁট্ + অনি = আঁটনি > আঁটুনি (বজ্র-)

√কাঁদ্ + অনি = কাঁদনি > কাঁদুনি (ছিঁচ-)

√কাঁপ্ + অনি = কাঁপনি > কাঁপুনি

√কুর্ + অনি = কুরনি > কুরুনি

√গাঁথ্ + অনি = গাঁথনি > গাঁথুনি

√খাট্ + অনি = খাটনি > খাটুনি

√চির্ + অনি = চিরনি > চিরুনি

√নাচ্ + অনি = নাচনি > নাচুনি (− বুড়ি)

√ধুক্ + অনি = ধুকনি > ধুকুনি (ধুক-)

√ধুচ্ + অনি = ধুচনি > ধুচুনি

√রাঁধ্ + অনি = রাঁধনি > রাঁধুনি।

আনি (প্রত্যয়) > উনি:

√উড়্ + আনি = উড়ানি > উড়ুনি (− বুড়ি)

√কুড়্ + আনি = কুড়ানি > কুড়ুনি (পাতা-)

√চুব্ + আনি = চুবানি > চুবুনি

√ঝাঁক্ + আনি = ঝাঁকানি > ঝাঁকুনি

√ঝিম্ + আনি = ঝিমানি > ঝিমুনি

√ফুট্ + আনি = ফুটানি > ফুটুনি।

টীকা: √ছট্ফট্ + আনি = ছটফটানি, √জ্বাল্ + আনি =জ্বালানি, √হাঁপ্ + আনি = হাঁপানি।

আরি > উরি:

√ডুব + আরি = ডুবারি > ডুবুরি

√ধুন + আরি = ধুনারি > ধুনুরি।

আচি > উচি 

√ধুন্ + আচি = ধুনাচি > ধুনুচি।

উলি (প্রত্যয়) > লি

আধ + উলি = আধুলি > আধলি

সুতা + উলি = সুতুলি > সুতলি।

. সমীভবন

কর + তাল = করতাল > কত্তাল

হর + তাল = হরতাল > হত্তাল

দুর + তোর = দুত্তোর

√কাঁদ্ + না = কান্না

√রাঁধ্ + না = রান্না

চার + শ = চারশ > চাশ্শ।

. ঘোষীভবন

অত + দিন = অদ্দিন

এত + দিন = এদ্দিন/অ্যাদ্দিন

কত + দিন = কদ্দিন

যত + দিন = যদ্দিন

অত + দূর = অদ্দুর

এত + দূর = এদ্দুর/অ্যাদ্দুর

কত + দূর = কদ্দুর

যত + দূর = যদ্দুর।

. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন

আর + না = আন্না

আলুর + দম = আলু্দ্দম

ঘোড়ার + ডিম = ঘোড়াড্ডিম

ঘর + করনা = ঘরকন্না

চার + টি = চাট্টি (-খানি)

চোর + নি = চুন্নি (শাঁক-)

জুয়া + চোর = জুচ্চোর > জোচ্চোর

বদ + জাত = বজ্জাত

বি + ছিরি =বিচ্ছিরি

হত + ছাড়া = হতচ্ছাড়া।

. অল্পপ্রাণীকরণ

আধ + লা = আধলা > আদলা

আধ + উলি = আধুলি > আদুলি

কাঠ + রা = কাঠরা > কাটরা (বড় −)

বখা + টিয়া = বখাটিয়া > বখাটে > বকাটে

ভেড়ি + বাঁধ = ভেড়িবাঁধ > বেড়িবাঁধ

সমঝ + দার = সমঝদার > সমজদার

সুখ + তলা = সুখতলা > সুকতলা

সোয়া + লাখিয়া = সোয়ালাখিয়া > শোলাকিয়া (− ইদগাঁ)।

৮. অন্তর্হতি

ঘোড়ার + গাড়ি = ঘোড়াগাড়ি

ঠাকুর + মা = ঠাকুরমা > ঠাকুমা

পাট + কাঠি = পাটকাঠি > পাকাটি

বংশ + শাল = বংশশাল > বংশাল (− থানা)

বাপ + জান = বাপজান > বাজান

মামার + বাড়ি = মামাবাড়ি

শাহ + মাহমুদ = শা-মামুদ

সিংহ + দরজা = সিংদরজা।

সন্ধি শব্দগঠনের একটি পদ্ধতি। এর সাহায্যে আমরা বাংলা শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারি। তবে শ্রুতিকটু ও অর্থবিভ্রাট সৃষ্টি হয়, এমন ক্ষেত্রে সন্ধি প্রযোজ্য নয়। যেমন: কচু + আদা + আলু = কচাদালু, বক + কচ্ছপ = বকচ্ছপ, দুইশ + তিন = দুই-সতিন।  

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-06-22 at 3.26.43 PM

Everyday English: Part 01

Do you feel uneasy to start a conversation in English? Do you hesitate to ask questions or share your opinions? Do you face difficulty in speaking English? Starting a conversation, sometimes, becomes the most difficult part in everyday life. To start a conversation, we have to learn some expressions to use in different situations – formal or informal, at school, college, work place, at sports, birthday or wedding party and in different contexts.

  • We can introduce ourselves in a very simple manner. Suppose, you are talking to a person who is your classmate or your next door neighbour. Your friend’s answer will be in the blank box.

Conversation with a friend:

We can use informal expressions with friends:

  • Hi, what’s up?

Ans: Not much and how about you?

  • The most common answer is “I’m fine, thank you and what about you?”
  • Another friendly answer of “what’s up” is “Having a great day and you?”
  • How’s it going?

Ans: Good or not so good. Passing a very busy day.

Conversation with a colleague or co-worker:

We usually use formal English words at office or work place. Such as

  • How are you doing?

Ans: Having a busy day today.

  • How is your day going?

Ans: Looking forward to the project schedule.

  • Have you heard about the news about our next project?

Ans: Yes, obviously.

  • Do you have any plan for the weekend?

Ans: Nothing special. Thinking to visit my home town.

Conversation in a Party

  • Hello, I’m Nijhum. I don’t think we’ve met yet. Ans: Hi, I’m Siam. I am from Barishal and you?
  • What do you know about Sohel so far?

Ans: Oh! He is a nice guy but a bit stubborn. I know him from his childhood.

  • Have you tried dessert in the party?

Ans: Wow! It’s delicious. I enjoy chocolate cake the most.

  • Do you like tea or coffee after the meal?

Ans: Not that much. Sometimes I love taking ice cream.

In a party, we may start a conversation by asking how the person knows

about the host and his family. In this way, you can continue the conversation by commenting on the foods and dessert items or music etc.

Stay connected for the next part- how to carry on the conversation in different situations.

Alia Rawshan Banu

Sr. Lecturer

Daffodil International College

WhatsApp Image 2022-05-24 at 1.41.18 PM

মধুর গুণ ও উপকারিতা

মধুর চেয়ে কল্যাণময় দ্রব্য এই বিশ্বমন্ডলে আর নেই্ মধু মিষ্টি ,আধা ঘন পদার্থ,বিভিন্ন রকমের শর্করার এক দ্রবন বিশেষ , যার বর্ন গাঢ় বাদামী থেকে হলুদ হয়ে থাকে। মৌমাছি ফুল থেকে সংগৃহীত রস থেকে মধু তৈরি করে এবং তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করে। মধুর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা নিজে কখনও পচে না এবং অন্য জিনিসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত পচন থেকে সংরক্ষিত রাখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আনুমানিক চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসকরা মধুর সাথে গ্রীজ ও নরম কাপড় মিশিয়ে এক প্রকার মলম বানিয়ে রোগ নিরাময়ে এক সাড়া জাগানো ঔষধ প্রস্তুুতের সূচনা করেন।

আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধুকে “সিফাউন লিন্নাস অর্থাৎ এতে মানুষের জন্য রয়েছে নিরাময় ঘোষনা করে রোগ ব্যাধির মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার পথ নির্দেশ করেছেন। আরও বলা হয়েছে ’ আর দেখ তোমার রব  মৌমাছিদের এ কথা ওহির মাধ্যমে বলে দিয়েছেন, তোমার পাহাড়পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মান করো । তারপর সব রকমের ফলের রস চোষো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো ।

প্রান চঞ্চল প্রকৃতির রাজ্যে গুনগুন শব্দ তোলা ছন্দ বিধুর এ পতঙ্গটির একমাত্র উপহার মধু। মধু শুধু আদর্শ খাদ্যই নয়, মধু একটি মহৌষধ, যার গুন বহুমুখি।

মধুর ব্যবহারঃ 

১.  রোগ নিরাময়ে মধু সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়।

২.  শিশুদের বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়া সব বাবা মায়ের পক্ষেই সম্ভব হয়    না, সে প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী ডাঃ এফ ডব্লিউ সাফল বলেছেন” শিশুর কচিদেহে রক্ত বর্ধক হিসাবে মধুর তুলনা হয় না । মধু সস্তা সহজ পাচ্য, শিশুর বদ হজম হয় না, ডায়রিয়া হয় না । ফলে ওজন বাড়ে। শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদানের দরকার তার সবটুকু মধুতে আছে। কাশি ও কফের জন্য শিশুদের যত ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ঔষধ মধু ।

৩. মধু পোড়া ,কাটা ও ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্যে করে।

৪. মধু হৃদরোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিখ্যাত পুষ্টি বিজ্ঞানী ডঃ আরনল্ড লোরান্ড বলেছেন ,ইঞ্জিনের শক্তি যেমন পেট্রল, তেমনি হৃদযন্ত্রের শক্তি তেমনি মধু। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ- জার্মান ডাঃ ই কচ বলেন, একটি দুর্বল ঘোড়াকে যদি উপযুক্ত পরিমানে খাদ্য সরবরাহ করা হয় , তাহলে অল্প দিনের মধ্যে সে একটি দুর্দান্ত তেজি ঘোড়ায় পরিনত হবে । ঠিক তদ্রুপ হার্টের পুষ্টিকর ও উত্তেজক উপাদান হচ্ছে মধু ।

৫. ডায়াবেটিস নিরাময়ে ও মধু ব্যবহৃত হয় ।

৬. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত –হাদিসে বলা হয়েছে,রাসুলুল্লার (সাঃ) কাছে, মধু অত্যন্তÍ প্রিয় ছিল। তিনি এর ব্যখ্যায় উল্লেখ করেন হুজর (সাঃ) এর কাছে মধু এ কারনে প্রিয় ছিল যে, আল্লাহতালা বলেছেন, এতে প্রতিষেধক আছে। মধুর নিরাময় ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি নিমোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন মধু  বাসি পেটে খেলে – শ্লেষ্মা দূর হয়, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, মস্তিষ্ক শক্তিশালী হয়।

পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর অন্যতম সমাজ বদ্ধ পতঙ্গ মৌমাছি একটি অর্থকারী প্রানী হিসাবে সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে, আর এই পতঙ্গ থেকেই আমরা মধু পাই। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, মধু নিজেই একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ । মধুসংক্রান্ত এ জাতীয় গবেষণা এক দিকে অসুস্থ মানব গোষ্ঠির জন্য বয়ে আনবে নতুন আশার আলো, অন্য দিকে সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে মানুষের এ গবেষনামুখী কর্মতৎপরতা তার জন্য বয়ে আনবে আন্তিক প্রশান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি। সে জন্য আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হেকিমি শাস্ত্র্রে সেসব বিষয়ে গবেষনা শুরু হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সিন্ধুর কাছে বিন্দু বইকি।

নিলুফা ইয়াসমিন

সিনিয়র প্রভাষক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ