WhatsApp Image 2022-05-24 at 1.41.18 PM

মধুর গুণ ও উপকারিতা

মধুর চেয়ে কল্যাণময় দ্রব্য এই বিশ্বমন্ডলে আর নেই্ মধু মিষ্টি ,আধা ঘন পদার্থ,বিভিন্ন রকমের শর্করার এক দ্রবন বিশেষ , যার বর্ন গাঢ় বাদামী থেকে হলুদ হয়ে থাকে। মৌমাছি ফুল থেকে সংগৃহীত রস থেকে মধু তৈরি করে এবং তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করে। মধুর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা নিজে কখনও পচে না এবং অন্য জিনিসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত পচন থেকে সংরক্ষিত রাখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আনুমানিক চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসকরা মধুর সাথে গ্রীজ ও নরম কাপড় মিশিয়ে এক প্রকার মলম বানিয়ে রোগ নিরাময়ে এক সাড়া জাগানো ঔষধ প্রস্তুুতের সূচনা করেন।

আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধুকে “সিফাউন লিন্নাস অর্থাৎ এতে মানুষের জন্য রয়েছে নিরাময় ঘোষনা করে রোগ ব্যাধির মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার পথ নির্দেশ করেছেন। আরও বলা হয়েছে ’ আর দেখ তোমার রব  মৌমাছিদের এ কথা ওহির মাধ্যমে বলে দিয়েছেন, তোমার পাহাড়পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মান করো । তারপর সব রকমের ফলের রস চোষো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো ।

প্রান চঞ্চল প্রকৃতির রাজ্যে গুনগুন শব্দ তোলা ছন্দ বিধুর এ পতঙ্গটির একমাত্র উপহার মধু। মধু শুধু আদর্শ খাদ্যই নয়, মধু একটি মহৌষধ, যার গুন বহুমুখি।

মধুর ব্যবহারঃ 

১.  রোগ নিরাময়ে মধু সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়।

২.  শিশুদের বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়া সব বাবা মায়ের পক্ষেই সম্ভব হয়    না, সে প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী ডাঃ এফ ডব্লিউ সাফল বলেছেন” শিশুর কচিদেহে রক্ত বর্ধক হিসাবে মধুর তুলনা হয় না । মধু সস্তা সহজ পাচ্য, শিশুর বদ হজম হয় না, ডায়রিয়া হয় না । ফলে ওজন বাড়ে। শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদানের দরকার তার সবটুকু মধুতে আছে। কাশি ও কফের জন্য শিশুদের যত ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ঔষধ মধু ।

৩. মধু পোড়া ,কাটা ও ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্যে করে।

৪. মধু হৃদরোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিখ্যাত পুষ্টি বিজ্ঞানী ডঃ আরনল্ড লোরান্ড বলেছেন ,ইঞ্জিনের শক্তি যেমন পেট্রল, তেমনি হৃদযন্ত্রের শক্তি তেমনি মধু। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ- জার্মান ডাঃ ই কচ বলেন, একটি দুর্বল ঘোড়াকে যদি উপযুক্ত পরিমানে খাদ্য সরবরাহ করা হয় , তাহলে অল্প দিনের মধ্যে সে একটি দুর্দান্ত তেজি ঘোড়ায় পরিনত হবে । ঠিক তদ্রুপ হার্টের পুষ্টিকর ও উত্তেজক উপাদান হচ্ছে মধু ।

৫. ডায়াবেটিস নিরাময়ে ও মধু ব্যবহৃত হয় ।

৬. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত –হাদিসে বলা হয়েছে,রাসুলুল্লার (সাঃ) কাছে, মধু অত্যন্তÍ প্রিয় ছিল। তিনি এর ব্যখ্যায় উল্লেখ করেন হুজর (সাঃ) এর কাছে মধু এ কারনে প্রিয় ছিল যে, আল্লাহতালা বলেছেন, এতে প্রতিষেধক আছে। মধুর নিরাময় ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি নিমোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন মধু  বাসি পেটে খেলে – শ্লেষ্মা দূর হয়, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, মস্তিষ্ক শক্তিশালী হয়।

পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর অন্যতম সমাজ বদ্ধ পতঙ্গ মৌমাছি একটি অর্থকারী প্রানী হিসাবে সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে, আর এই পতঙ্গ থেকেই আমরা মধু পাই। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, মধু নিজেই একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ । মধুসংক্রান্ত এ জাতীয় গবেষণা এক দিকে অসুস্থ মানব গোষ্ঠির জন্য বয়ে আনবে নতুন আশার আলো, অন্য দিকে সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে মানুষের এ গবেষনামুখী কর্মতৎপরতা তার জন্য বয়ে আনবে আন্তিক প্রশান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি। সে জন্য আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হেকিমি শাস্ত্র্রে সেসব বিষয়ে গবেষনা শুরু হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সিন্ধুর কাছে বিন্দু বইকি।

নিলুফা ইয়াসমিন

সিনিয়র প্রভাষক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Tags: No tags

Comments are closed.