দুটি স্বরধ্বনি: ই ঈ

দুটি স্বরধ্বনি: ই ও ঈ

দুটি স্বরধ্বনি: ই ও ঈ

কার-চিহ্ন: হ্রস্ব-ই = ি ,দীর্ঘ-ঈ = ী।

কোথায় লিখব হ্রস্ব-ই, কোথায় দীর্ঘ-ঈ ?

কোনটা শুদ্ধ – ইদ না ঈদ ? বাড়ি না বাড়ী ?  কোনটা অশুদ্ধ – টিকা না টীকা ? কৃতি না কৃতী ? এগুলো বাংলা ভাষা-শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষিত বাঙালিদের কাছে ধাঁধা।

প্রথমেই বলি, উচ্চারণ ভুল হলে বানান ও অর্থের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। যেমন- ‘আমরা’ ও ‘আমড়া’, ‘আবরণ’ ও ‘আভরণ’, ‘গা’ ও ‘গাঁ’। উচ্চারণ অভিন্ন, কিন্তু বানান ও অর্থ ভিন্ন, এমন শব্দও দুর্লভ নয়। যেমন- ‘কালি’ ও ‘কালী’, ‘নিচ’ ও ‘নীচ’, ‘ধ্বনি’ ও ‘ধনী’। আবার উচ্চারণ, বানান ও অর্থ অভিন্ন, এমন শব্দও আছে। যেমন- জেলা, সে, তিনি, পাকা, পোকা, ব্যাধি। মূলকথা হলো, বাংলা শব্দের উচ্চারণের সঙ্গে বানানের সাদৃশ্য খুব কম।

বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হয়। আমরা এগুলোকে বলি ‘তৎসম’ শব্দ। এ জাতীয়  শব্দে আমরা কখনো ‘ই’, কখনো ‘ঈ’, কখনো-বা যুগপৎ ‘ই’ ও ‘ঈ’ লিখি। যেমন-

১. হ্রস্ব-ই  

অঞ্জলি (শ্রদ্ধাঞ্জলি), অতিথি (-শালা, – পাখি), অপিনিহিতি, অভিষিক্ত, অভিসন্ধি, অধিপতি, উল্লিখিত, কোটিপতি, ‍গিরি (-পথ), তিতিক্ষা (ত্যাগ আর -), তিথি (পূর্ণিমা -), দিবানিশি, দিগ্বিদিক, দ্বিরুক্তি, নিরবিচ্ছিন্ন, নির্দেশিকা, নিরামিষ, নিরিবিলি, নির্লিপ্ত, নিষিদ্ধ (- পণ্য), নিষ্কৃতি, নিবিঢ় (- কর্মসূচি), নিশ্চিদ্র (- নিরাপত্তা বেষ্টনী), নিশ্চিহ্ন, পরিস্থিতি, পরিধি, প্রতিলিপি, প্রতিনিধি, প্রতিকৃতি (বঙ্গবন্ধুর -), বিনিদ্র) (- রজনী), বিধিলিপি, বিনিয়োগ, বিকৃতি (ভাষার -), বিভূতি (-ভূষণ), বিভক্তি, বিস্মৃতি, যুধিষ্ঠির।

২. দীর্ঘ-ঈ

আত্মজীবনী, উদীচী (- শিল্পীগোষ্ঠি), কর্মজীবী (- মহিলা হোস্টেল), ক্ষীণ (- আলো), গ্রীষ্ম (-কাল), গ্রহীতা (ঋণ-), জয়ন্তী (জন্ম-), জীর্ণশীর্ণ (অসুস্থ – শরীর), তীর্থ (মরু- হিংলাজ), তীব্র (- ক্ষোভ), তীক্ষ্ণ (- দৃষ্টি), তপস্বী (বিড়াল -), দীর্ঘস্থায়ী, নীরব (- পাঠ), নীরস (- বচন), নীলাম্বরী (- শাড়ি), পরীক্ষার্থী, প্রতীক্ষা (দীর্ঘ -), প্রবীণ (- হিতৈষী সংঘ), বর্ষীয়সী (- নারী), বাগ্মী (বিশিষ্ট -), বিবরণী (Statement), বীভৎস (- দৃশ্য), ভাগীরথী (- নদী), শশী (- লজ, রবি-), শীঘ্র (শুভস্য শীঘ্রম), মনীষী (- সক্রেটিস), মহীয়সী (- রোকেয়া), শ্রীমতী (- ইন্দিরা গান্ধী), লক্ষ্মী (- চক্রবর্তী, -পুর), সমীচীন, স্বামী-স্ত্রী।

৩.  হ্রস্ব-ই ও দীর্ঘ-ই

অদ্বিতীয়, অগ্নিপরীক্ষা, অভিবাসী, আশীবিষ, কামিনী, কীর্তি, কিন্নরী, কিরীট, গান্ধীজি, গীতাঞ্জলি, গীতি (পল্লি-), জীবিকা (জীবন ও -), জীবিত, জ্যোতিষী (রাজ-), ত্রিপদী, ত্রিমোহিনী, ত্রিবেদী (রামেন্দ্রসুন্দর -), দ্বিমুখী (- আচরণ), ত্রিমুখী (- সংঘর্ষ), দীপ্তি (-মান লেখক), দুর্বিনীত (- কাল), নিরীহ (- প্রাণী), নির্বাহী (- পরিচালক), নীলমণি (-লতা),  দধীচি, ধরিত্রী (- সম্মেলন), নামীদামি (- ইশকুল), নীলিমা (বিধ্বস্ত -), নাতিদীর্ঘ (- বর্ণনা), নির্ঝরিণী, নিমীলিত (- চক্ষু), নিপীড়িত (বঞ্চিত ও -), পরীক্ষিত, পরিসীমা, বাহিনী (মুক্তি-), প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিবন্ধী, পিপীলিকা, পুনর্মিলনী, বহুব্রীহি, বিপত্নীক, বিদুষী (- রাজকন্যা), বার্ষিকী (জন্ম- শত-), বাল্মীকি (মহর্ষি -), বিদেশিনী,  বিভীষিকা (-ময় ২১ আগস্ট), বিলম্বী (- ফল), ভীতি (রোগ-), বুদ্ধিমতী, বিভীষণ (ঘরভেদী -), মন্দাকিনী, মরীচিকা (আশা -), মহিষী (- কর্ণাবতী), রীতিনীতি, সম্প্রীতি, সাময়িকী, স্বীকৃতি, সীমিত, স্রোতস্বিনী।

উল্লেখযোগ্য যে, এগুলোতে সংস্কৃত ব্যাকরণ ও অভিধানের বানানরীতি অনুসৃত হয়েছে। কিন্তু বাংলা অ্যাকাডেমির সূত্রমতে, যে-সব সংস্কৃত শব্দে ই/ঈ, উ/ঊ উভয়ই সিদ্ধ, সেইসব শব্দে ই, উ ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ আধুনিক বাংলা বানানরীতি ও পদ্ধতিতে বিকল্প বর্জিত হয়েছে। যেমন-

ই/ঈ > ই

অঙ্গুলি (-স্পর্শ, বৃদ্ধাঙ্গুলি), অক্ষি (মীনাক্ষি), অটবি, অন্তরিক্ষ, অবনি, আবলি (শর্তাবলি, নিয়মাবলি), আলি (বর্ণালি, স্বর্ণালি), আরি (পূজারি, দিশারি), ঔষধি (মহৌষধি), কাকলি (পাখির কল-), কিংবদন্তি (জীবন্ত – ), কুপি, কুহেলি (শীতের -), খঞ্জনি, গহিন (- বালুচর), গণ্ডি (ইশকুলের -), গোষ্ঠি (হালদার-), চিৎকার (আর্ত -), চুল্লি (গ্যাস-), ঝিল্লি (-মুখর সন্ধ্যা), তরি (জীবন-), তরণি (ভাসাও -), ধমনি (শিরা ও -), ধরণি (- দ্বিধা হও), ধূলি (-কণা, গো-), পঞ্জি (দিন-, বর্ষ-), পদবি (পদ ও -), পন্থি (রাম-, মোল্লা-), পল্লি (-বধূ), প্রণালি (-বদ্ধ, রন্ধন-), বিপণি (-বিতান), বেদি (শহিদ-), বীথি (খেজুর-), বেণি (সর্পিল -), ভঙ্গি (অঙ্গ-, ভ্রু-), মসি (অসির চেয়ে – বড়), মঞ্জরি (পুষ্প-), মাঢ়ি (>মাড়ি), মৌলি (তুষার-), যুবতি (সদ্য -), রাখি (-বন্ধন), লহরি (সুর-), শ্রেণি (-কক্ষ, বৃক্ষ-), সঙ্গিন (রোগীর তো – অবস্থা), সরণি (বিজয়-), সারণি (Table), সূরি (পূর্ব-, উত্তর-), সূচি (কর্ম-), শাশ্মলি (-তরু)।

তৎসম শব্দে ই, ঈ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সূত্র গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

১. স্বরসন্ধিজাত শব্দ

 ই + ই = ঈ

অতি + ইত =অতীত, অভি + ইষ্ট = অভীষ্ট, অতি + ইন্দ্রিয় = অতীন্দ্রিয়, প্রতি + ইতি = প্রতীতি।

ই + ঈ = ঈ

অভি + ইপ্সা = অভীপ্সা, অধি + ঈশ্বর = অধীশ্বর, পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, প্রতি + ঈক্ষা = প্রতীক্ষা।

২. সমাসবদ্ধ শব্দ

ঈ > ই

কালীর দাস = কালিদাস, কালীর দহ = কালিদহ, পক্ষীর কুল = পক্ষিকুল, মন্ত্রীর সভা = মন্ত্রিসভা, প্রাণীর জগৎ = প্রাণিজগৎ, প্রাণীর বিদ্যা = প্রাণিবিদ্যা, প্রাণীর কুল = প্রাণিকুল, শশীর ভূষণ = শশিভূষণ, স্বামীর গৃহ =স্বামিগৃহ।

৩. প্রত্যয়সিদ্ধ শব্দ

ঈ + ত্ব > ই + ত্ব

একাকী + ত্ব = একাকিত্ব, কৃতী + ত্ব = কৃতিত্ব, দায়ী + ত্ব = দায়িত্ব, স্থায়ী + ত্ব = স্থায়িত্ব, স্বামী + ত্ব = স্বামিত্ব, সতী + ত্ব = সতিত্ব ।

ঈ + তা > ই + তা

উপযোগী + তা = উপযোগিতা, প্রার্থী + তা = প্রার্থিতা, প্রতিযোগী + তা = প্রতিযোগিতা, সহযোগী + তা = সহযোগিতা, সহমর্মী + তা = সহমর্মিতা।

ঈ + গণ > ই + গণ

আইনজীবী + গণ = আইনজীবিগণ, কর্মী + গণ = কর্মিগণ, কর্মচারী + গণ = কর্মচারিগণ, পরীক্ষার্থী + গণ = পরীক্ষার্থিগণ, প্রার্থী + গণ = প্রার্থিগণ।

তৎসম শব্দ বাদে বাকি সবই অ-তৎসম শব্দ। এ জাতীয় শব্দে ‘ই’ স্বীকৃত। যেমন-

১. অর্ধ-তৎসম শব্দ

গৃহিণী > গিন্নি (-পনা, -মা), ভগিনী > ভগ্নি (- নিবেদিতা), শ্রী > ছিরি (লোকটার কথার কী -), বিশ্রী > বিচ্ছিরি, প্রীতি > পিরিতি (বড়র – বালির বাঁধ)।

২. তদভব শব্দ

আকর্ষী > আঁকশি, কর্ণধারী > কাণ্ডারি (- হুশিয়ার), ক্রীড় > কেলি (জল-), কুম্ভীর > কুমির, গবী > গাভি (- বৃত্তান্ত), গন্ত্রী > গাড়ি (মোটর-), চক্র > চরকি, তিক্ত > তিতি (-বিরক্ত), দীর্ঘিকা > দিঘি, দেহলী > দেউড়ি, প্রতিবেশী > পড়শি, পক্ষী > পাখি, বংশী > বাঁশি (মেঠো -), বাটী > বাড়ি (বসত-, রাজ-), বিক্রয় > বিক্রি, বীজ  > বিচি (শিমের -), রাজ্ঞী > রানি (- মৌমাছি, মক্ষী-), শাটী > শাড়ি (- কুটির), শিম্বী > শুঁটি (মটর-), শীর্ষ > শিষ (ধানের -), সপত্নী > সতিন, হস্তী > হাতি (-বান্ধা, -শুঁড়),  স্ফুলিঙ্গ > ফুলকি,  স্থলী (Bag) > থলি (পিত্ত-), হীরক > হিরা, হুঙ্কার > হুমকি।

৩. দেশি শব্দ

উড়ি (-ধান), কুড়ি (২০), খড়ি (পাট-), খিড়কি (- দরজা), খুপি, খিলান, খুঁটি খুকি (ছোট্ট -), ঘুড়ি (- উৎসব), ঘটি (বাটি), চিংড়ি, চুঙি (ইটভাটার -), চুড়ি, ছড়ি (ফটিক-), ছিপি, ঝিঙা, ঝিলিক, ঝুলি (ঠাকুরমার -), ঝুপড়ি, টিপ (সিন্ধুর -/সিংহল দ্বীপ), টিলা (আলু-), টুকরি, ঢিবি (উইয়ের -), ডিঙি, ঢিল, থুতনি, দড়ি, ধুতি, ধিঙ্গি (> ধিঙি) , নেংটি, পাতিল, বিচালি, বঁটি, বাখারি (বাঁশের -), ভিটা, মুড়ি, মুড়কি, মেকি।

৪. বিদেশি শব্দ

আরবি শব্দ

আর্জি, ইহুদি, ইবলিস, উজির, উকিল, ওয়াজি, ওয়ারিশ, কাজি, কারসাজি, খালি (- ঘর), কোরবানি, খালাসি, খাসি (- মোরগ), খতিব, খলিফা, গরিব (গরিবে নেওয়াজ), গাফিলতি, গায়েবি, জরিপ, জরুরি, জলদি, জমিন (মানব-), জামিন, জিনিস, জিম্মাদার, তদারকি, তসবি, তাগিদ, দলিল, দাবি, নিমরাজি, নজির, নসিব, নসিহত, ফরিয়াদ, ফজিলত, বাকি, বেদুইন, মনিব, মর্জি, মঞ্জুরি (- কমিশন), মৌলবি, মিসকিন, মুরব্বি, শরিক, সুন্নি (- মুসলিম), হিজরি (- সন), হাবশি, হিসাব, হিস্যা।

ফারসি শব্দ

আমদানি, কারিগর, কাবিননামা, কারচুপি, কিশতি, খরিদ, খাকি (- পোশাক), খুন-খারাবি, খুশি, জমিদার, জিন্দা, জিঞ্জির, জিন্দিগি, দর্জি, দরিয়া (দিল-), দরকারি, দরদি, দেরি (পথে হলো -),  নিশান, নবিশ (শিক্ষা-), ফন্দি, ফিরিঙ্গি, বন্দেগি, বখশিস, বিবি (- মরিয়ম), বেশি, মালিশ, মির (-পুর), মুফতি, মুরগি, রপ্তানি, শিরনি, শেমিজ, সবজি, সরকারি, সুফি (-সাধক), হাজি (-পাড়া)।

ইংরেজি শব্দ

আর্দালি, এজেন্সি, কফি (- হাউস), কফিন, কিডনি, কেবিন (ঘোষ -), কোম্পানি (ইস্ট ইন্ডিয়া -), কেরোসিন, কৌঁসলি, চিমনি, জার্নি, জার্সি জেলি, জেটি, টিকিট, টিফিন, ট্রফি, ডায়রি, ডিশ, ডেপুটি, নোটিশ, পানসি, ফ্রি, ফেরি (-ঘাট), বান্ডিল, ব্রিটিশ, ব্যাটারি, রাবিশ, লাইব্রেরি, লেডি (- কেনি), স্টিমার, স্ট্রিট (র‌্যাংকিন -)।

অন্যান্য ভাষার শব্দ

পর্তুগিজ:  আলপিন, আলমারি, ইস্ত্রি (Iron), কামিজ, কেরানি, গির্জা, দাবি, টুপি (কিস্তি -), নিলাম, পাউরুটি,    

পাদ্রি, পিস্তল, পিপা (Dram), ফিতা, বালতি, মিস্ত্রি (কাঠ-), যিশু (Jesu)।

তুর্কি: উর্দি, কুলি, বাবুর্চি।

চিনা: এলাচি, চিনি, লিচু।

হিন্দি: কাহিনি, খিচুড়ি, গিরগিটি, চিঠি, চুটকি, পাগড়ি, রুপিয়া, লাড়কি।

পাঞ্জাবি: চাহিদা, শিখ।

অন্যান্য: কিরিচ (মালয়ি), নাৎসি (জার্মান), বর্গি (মারাঠি), লুঙ্গি (বর্মি), স্পুটনিক (রুশ)।

বাংলা শব্দের বানানে হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর থাকলেও উচ্চারণে সর্বত্রই হ্রস্বস্বর (ই, উ) স্বীকৃত। এক্ষেত্রে একটিমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উদাহরণ দিয়েছেন-

তুমি কি খেয়েছ ?

তুমি কী খেয়েছ ?

এখানে ‘কি’ প্রশ্নসূচক অব্যয় এবং ‘কী’ প্রশ্নসূচক সর্বনাম। কী মিষ্টি আম! (বিশেষণ)

সবশেষে কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১. তৎসম শব্দের বানানে দীর্ঘস্বর (ঈ, ঊ)-এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ। ২. ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে- তদভব শব্দ (৬০%) বাংলা ভাষার প্রাণ, আর তৎসম শব্দ (২৫%) অলংকার। -মন্তব্যটি যুক্তিপূর্ণ। ৩. শব্দের উৎস ও উৎসভিত্তিক শ্রেণি সম্পর্কে জানাটা জরুরি। এবং তা থেকে আমরা বাংলা শব্দের উচ্চারণ ও বানানে ই, ঈ ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারি।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

কীভাবে বাংলাদেশে শুরু করবেন একটি NGO এর কাজ by Sazzad Hossain

কীভাবে বাংলাদেশে শুরু করবেন একটি NGO এর কাজ ?

কীভাবে বাংলাদেশে শুরু করবেন একটি NGO এর কাজ ? তা কি জানেন! আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠা করতে চান। কিন্তু তাদের অনেকেই যানেন না কিভাবে আইনগত বৈধতার মাধ্যমে একটি এনজিও এর কার্যক্রম শুরু করতে হয়।আসুন জেনে নেই কিভাবে বাংলাদেশে একটি এনজিও এর কাজ শুরু করবেন।

বাংলাদেশে এনজিও এর কার্যক্রম অথবা কোন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে দেশি কিনবা বিদেশি তহবিল পরিচালনা করার জন্য উক্ত সংস্থাকে প্রথমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নিবন্ধিত হতে হবে এবং সরকারের নিয়ম কানন মেনে চলতে হবে।

কৃষি, ত্রাণ, মিশনারি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, বৃত্তিমূলক, সামাজিক, কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক সেবা প্রদানের জন্য যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার নিজের ইচ্ছামত সংস্থা (আংশিক বা সম্পূর্ণ বাহ্যিক সহায়তার মাধ্যমে)
প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।তবে অবশ্যই সেটা সরকার অনুমোদিত হতে হবে।

একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা (আইএনজিও) বা স্থানীয় ভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) নিবন্ধিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদনপএ দাখিল করতে হবে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো (এনজিওএবি) (যা বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে) এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয় হচ্ছে এই বিষয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।মূলত এদের কাছেই আবেদন দাখিল করতে হয়।

প্রথমত এনজিও বিষয়ক ব্যুরো (এনজিওএবি)এর নিকট রেজিস্ট্যেশন করতে হবে। তারপর নির্ধারিত ফরমে এনজিওএবি এর প্রয়োজনীয় ফি এবং আনুসাংগিক সকল প্রকার নথিপএ যেমন কার্যকলাপ প্রতিবেদন, অভিপ্রায় পত্র, সংবিধান, রেজিস্ট্রেশন ফি ইত্যাদি এবং ট্রেজারি চালানের অনুলিপি জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।

এনজিওএবি তে আবেদন জমা দেওয়ার পর এটি পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সামাজিক কল্যান মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে ।নথিপএ গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর ধারা আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য
তদন্ত করে একটি তদন্ত রিপোট পাওয়ার পর তা এনজিওএবি কে দেওয়া হলে তারাপর্যালোচনার ধারা ডকুমেন্ট চুরান্ত করে সামনে আগাবেন।

আবেদন অনুমোদনে যে বিষয় গুলো মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবেন তা হলোঃ-
নিবন্ধীকরণের জন্য এনজিও টি কোন প্রকার রাষ্ট্র-বিরোধী কাজ কিনবা সমাজ বিরোধী কাজ কিনবা কোন অপরাধ মূলক কাজের সাথে জরিত কি না।আবেদন কারী সংস্থার সদস্যের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক কেমন,তাদের সামাজিক মর্যাদা,সামাজিক কল্যান মূলক কর্মকান্ড,পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা, তাদের নিজস্ব অফিস আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে
আবেদন অনুমোদন দিবে কি না।যদি আবেদন অনুমোদিত হয় তাহলে উক্ত এনজিও টি বাংলাদেশে কাজ করার অনুমতি পাবে।অন্যথায় তা বাতিল বলে গন্য হবে।

উক্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ করবে ৯০ কার্যদিবসে।তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি ৬ মাস ও লাগতে পারে।

সাজ্জাদ হোসেন

প্রভাষক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ