WhatsApp Image 2022-07-21 at 10.47.49 AM

সন্ধি ও বানান

বাংলা বানান সম্পর্কে একটি কৌতুক প্রচলিত আছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তখন হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ। একদিন একটি অপরিচিত বালক− চেহারা ও  পোশাকে জীর্ণশীর্ণ− তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল এবং তাঁকে বলল− ‘মহাশয়, আমি দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী।’ প্রত্যুত্তরে বিদ্যাসাগর বললেন− ‘তা তো কথা শুনেই বুঝতে পারছি।’  

কৌতুকটির মর্মার্থ কী?  

বালকটির আর্থিক দারিদ্র্য যেমন সত্য, তেমনি ভাষাজ্ঞানের দারিদ্র্যও পীড়াদায়ক। বিদ্যাসাগর কৌতুকচ্ছলে সে-দিকটিতে ইঙ্গিত করেছেন।

উল্লেখ্য, দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা। এটি বিসর্গ সন্ধিজাত শব্দ।

বাংলা ভাষায় এমন বহু সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হয়, যেগুলো সন্ধিজাত। যেমন, উপরি + উক্ত = উপর্যুক্ত। কিন্তু ‘উপর্যুক্ত’ নয়− বরং ‘উপরোক্ত’ শব্দটি বহুপ্রচলিত। সংসদ্ বাঙ্গালা অভিধানমতে, ‘উপরোক্ত’ প্রচলনে সিদ্ধ। কিন্তু বাংলা একাডেমির বানানবিধিমতে, ‘উপর্যুক্ত’ বানানই ব্যাকরণসিদ্ধ ও শুদ্ধ।

আমাদের ধারণা, বানান ব্যাকরণসিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘অত্যান্ত’ কি শুদ্ধ? সন্ধির সূত্রমতে, অতি + অন্ত = অত্যন্ত। তদ্রূপ, অতি + অধিক = অত্যধিক। ‘কটুক্তি’ কি শুদ্ধ? সন্ধির সূত্রমতে, কটু + উক্তি = কটূক্তি। তদ্রূপ, অনু + উদিত = অনূদিত। কিন্তু অতি + উক্তি = অত্যুক্তি। ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’ কি শুদ্ধ ? সন্ধির সূত্রমতে, শ্রদ্ধা + অঞ্জলি = শ্রদ্ধাঞ্জলি। তদ্রূপ, গীত + অঞ্জলি = গীতাঞ্জলি, জল + অঞ্জলি = জলাঞ্জলি, পুষ্প + অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলি।

‘রবি’/’রবিঠাকুর’ শুদ্ধ। সন্ধির সূত্রমতে, রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র। অতএব ‘রবীন্দ্রনাথ’ ঠাকুর শুদ্ধ। সন্ধির সূত্রমতে, শরৎ + চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র। কিন্তু ‘শরৎচন্দ্র’ চট্টোপাধ্যায় কি শুদ্ধ? প্রচলিত বানানবিধিমতে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম যেভাবে রক্ষিত বা নিবন্ধিত হয়েছে, সেভাবেই ব্যবহৃত হবে। সেহেতু ‘শরৎচন্দ্র’ (লেখকের নাম) শুদ্ধ।  সেহেতু ‘কালিদাস’ নয়− ‘কালীদাস’ শুদ্ধ, ‘চণ্ডিদাস’ নয়− ‘চণ্ডীদাস’ শুদ্ধ।

নিচের তালিকাটি লক্ষ  করা যাক:

ভুল বানানশুদ্ধরূপ
উল্লেখিত ইতিপূর্বে ইতিমধ্যে এতদ্বারা দূর্ঘটনা পুরষ্কার শিরচ্ছেদ সুস্বাগত সুস্বাস্থ¨ উৎ + লিখিত = উল্লিখিত  ইতঃ + পূর্বে = ইতঃপূর্বে ইতিঃ + মধ্যে = ইতোমধ্যে এতৎ + দ্বারা = এতদ্দ্বারা দুঃ + ঘটনা = দুর্ঘটনা পুরঃ>পুরস্ + কার = পুরস্কার শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ সু + আগত = স্বাগত স্বস্থ + য = স্বাস্থ¨

সংস্কৃত ব্যাকরণমতে, বিসর্গ সন্ধি দুই প্রকার: ১. র-জাত বিসর্গ, ২. স-জাত বিসর্গ। অন্তঃ > অন্তর্ + বর্তী = অন্তর্বর্তী। তদ্রূপ, অন্তঃ + ভুক্তি = অন্তর্ভুক্তি। কিন্তু অহঃ + নিশি = অহর্নিশ। অ-যুক্ত t (বিসর্গ) > স হয়। যেমন, তিরঃ > তিরস্ + কার = তিরস্কার। তদ্রূপ, নমঃ + কার = নমস্কার, পুরঃ + কার = পুরস্কার। কিন্তু ই/উ-যুক্ত t (বিসর্গ)> ষ হয়। যেমন, আবিঃ > আবিষ্ + কার = আবিষ্কার। তদ্রূপ, বহিঃ + কার = বহিষ্কার, পরিঃ + কার = পরিষ্কার, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ, ভ্রাতুঃ + পুত্র = ভ্রাতুষ্পুত্র।

উল্লেখযোগ্য যে, সন্ধিতে ‘সমীভবন’ গুরুত্বপূর্ণ।  যথা: উৎ + জ্বল = উজ্জ্বল, উৎ + লাস = উল্লাস, উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস, উৎ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল, চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র, সৎ + জন = সজ্জন,  বিপদ + জনক = বিপজ্জনক। খাঁটি বাংলা সন্ধি: পাঁচ + জন = পাঁজ্জন, দেড় + শ = দেশ্শ, পাঁচ + শ = পাঁশ্শ, চার + লাখ = চাল্লাখ। উল্লেখ্য, এসব বাংলা সন্ধি মূলত কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয় ।

কতিপয় সন্ধিজাত সংস্কৃত শব্দের শিষ্ট কথ্যরূপ আছে। যেমন, দেব + আলয় = দেবালয় > দেউল, মহা + উৎসব = মহোৎসব > মোচ্ছব, রাজ্ + ঞী/নী = রাজ্ঞী > রানি, পুরঃ + হিত = পুরোহিত > পুরুত। আবার (স্ব + অক্ষর =) ‘স্বাক্ষর’ (sign) সন্ধিজাত শব্দ। (স + অক্ষর =) ‘সাক্ষর’ (Literate) উপসর্গ ও সন্ধিজাত শব্দ।

মূলকথা এই যে, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় ধ্বনিরূপগত বা উচ্চারণগত পার্থক্য  আছে। সেহেতু সংস্কৃত সন্ধিতে  হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর (ই/ঈ, উ/ঊ)  স্বীকৃত। বাংলা সন্ধিতে শুধু  হ্রস্বস্বর (ই, উ)  স্বীকৃত। আরও উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় বিসর্গ সন্ধি নেই।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-07-17 at 3.18.16 PM

দলিতদের কবি নজরুল

বাংলা সাহিত্যে সোনার কাঠির পরশ বুলিয়ে সাহিত্য কাননকে সুশোভিত করেছেন যে কজন কবি, তাদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) অন্যতম। নজরুল সাধারণত বিদ্রোহী কবি হিসেবে বরণীয়। কিন্তু তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। তাই তাঁকে শুধু মোটাদাগে ‘বিদ্রোহী’ অভিধায় ভূষিত করলে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি শুধু বিদ্রোহী কবি নন, প্রেমেরও কবি। তিনি শোষিতদের কণ্ঠস্বর। শোষিতদের তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পরম বন্ধু। তিনি মানবতাবাদী কবি। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে সাম্যের কথা ।

পরাধীনতা এবং শোষণের নিগড়ে আবদ্ধ জনগোষ্ঠিকে এক চিলতে রোদ এনে দেওয়ার জন্য তাঁর কলম ছিল সদাতৎপর। তিনি নিপীড়িতদের অধিকার আদায়ের জন্য সদা সচেষ্ট ছিলেন যা তাঁর কবিতার পরতে পরতে প্রতিভাত হয়েছে। অজয় নদীর তীরে চুরুলিয়া গ্রাম। আর নদী এবং পাহাড় পরিবেষ্টিত এই চুরুলিয়া গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন নজরুল। যারপরনাই নদীর গতিশীলতা এবং পাহাড়ের উচ্চতা তাঁর চরিত্রে প্রস্ফূটিত হয় যা পরবর্তিতে তাঁর কবিতায় অনন্য নিয়ামক হিসেবে প্রযুক্ত হয়।নজরুলের চোখে সবাই সমান।সমাজের জাত-পাত-উঁচু-নিচুর বিভেদ ভেঙ্গে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তিনি সর্বহারাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সদা তৎপর ছিলেন। তবে নজরুলের সর্বহারা মার্কসীয় সর্বহারা নয়। ঔপনিবেশিক শোষণে পিষ্ট সর্বহারাদের যন্ত্রণাময় জীবন এবং যন্ত্রণা থেকে উত্তরণের আখ্যানই হলো নজরুলের কবিতা।

দলিত বলতে সাধারণত সমাজের নিম্নস্তরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সমাজ কাঠামো প্রধানত দুই শ্রেণির জনগোষ্ঠি নিয়ে গঠিত। এক গোষ্ঠি সমাজ নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অর্থ-বিত্তে দুর্বল জনগোষ্ঠিকেও নিয়ন্ত্রণের ঠিকাদার হিসেবে নিজেদের নিযুক্ত রাখে এবং তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা দলিতদের প্রভু হিসেবে নিজেদের জাহির করে আনন্দ পায়। কাজী নজরুল ইসলাম এই দলিতদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই সৃষ্টি করেছেন চুনিপান্নাসম কবিতাগুচ্ছ। তাঁর কবিতার শিরা-উপশিরায় চৈতালির মতো  ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমাজের শোষিতদের কথা। সমাজ বিনির্মাণে,সভ্যতার বিনির্মাণে, কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুরদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে কবি লিখেছেন কিছু অসামান্য কবিতা। কায়িক শ্রম দিয়ে যারা মানবসভ্যতাকে যুগযুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছেন তারাই দলিত, তারাই আজ সমাজের প্রান্তে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এই বিদঘুটে সমাজ তাদের সঠিক ভাবে মূল্যায়ন না করলেও প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার ডালপালায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধার ফুল সাজিয়ে তাদের মূল্যায়ণ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় ফুটে উঠেছে দলিতদের শোষিত হওয়ার এবং শোষণকে উপেক্ষা করে বিদ্রোহী হয়ে উঠার চিত্র।

‘‘আসিতেছে শুভদিন,

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!’’

শোষিতরা যুগযুগ ধরে শোষকদের অত্যাচার সহ্য করবে না। তারাও শোষকদের শোষণ নির্যাতনের কড়া জবাব দিবে একদিন। কবির সঙ্গে যেনো শোষিতদের হাজার বছরের পুরানো আত্মিক সম্পর্ক। তাইতো তাদের সুখে সুখি এবং তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে কবি লিখেছেন:

“তারাই মানুষ, তারাই দেবতা,গাহি তাহাদেরি গান

 তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’’

প্রেমের কবি নজরুল মানুষে মানুষে সম্প্রীতি চেয়েছেন। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবেই বিচার করেছেন এবং উচুতলার মানুষ, নিচুতলার মানুষ _ সমাজের এই নিকৃষ্ট নিয়মটি তিনি মানতে নারাজ। মানবতাবাদী কবি মানব মনে সাম্যের মোমবাতি প্রজ্বলনের জন্য আজীবন কবিতার শোণিতধারায় বিদ্রোহ প্রবাহিত করেছেন। তিনি সুষম বন্টণের মাধ্যমে সমাজের উঁচু-নিচু,জাত-পাত বিভেদের ইতি চেয়েছেন।

“গাহি সাম্যের গান-

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!”

                                                                                                                                                               মানুষের কবি,মানবতাবাদী কবি,প্রেমের কবি,শান্তির কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত নিপীড়িত শোষিত জনগোষ্ঠীর স্বর ও সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবির সঙ্গে এই প্রান্তিকজনগোষ্ঠীর যেন এক আত্মিক সম্পর্ক। শৈশব থেকেই দরিদ্রতার সঙ্গে বাস করতে করতে কবির আত্মোপলব্ধি থেকেই মুলত এই  আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

কবি ‘চোর-ডাকাত’ কবিতায়ও সমাজের উঁচুতলার মানুষের প্রতি ধিক্কার পোষণ করেছেন। কারণ তারাই বড় চোর অথচ তাদের সামাজিক অবস্থানের কারনে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

“ছোটোদের সব চুরি করে আজ বড়োরা হয়েছে বড়ো।  

যারা যত বড়ো ডাকাত-দস্যু জোচ্চোর দাগাবাজ

তারা তত গুণী জাতি সঙ্ঘেতে আজ।’’

নজরুলের কবিতার মূল সুরই হলো মানবতাবাদ এবং মানবের জয়গান। তিনি শুধু সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকার আদায়ে সচেতন ছিলেন না, তিনি যুগ যুগ ধরে নিষ্পেষণের শিকার হওয়া নারীকুলের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেও কবিতায় শব্দের বাণ নিক্ষেপ করেছেন। নারীরাও সমাজের শোষিতদের কাতারেই দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে।

নারীদের অধিকার আদায়ে এবং তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে কবি সৃষ্টি করেছেন ‘নারী’ এবং ‘বারাঙ্গনা’।

“নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে

 আপনারি রচা অই কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।”

নারীকে শুধু নারী হিসেবে কল্পনা না করে, মানুষ হিসেবে কল্পনা করেছেন কবি। তাই তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে নারীর অধিকার এবং মর্যাদার কথা।

“নাই হ’লে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি

তোমাদের ছেলে আমাদেরই মতো, তারা আমাদের

জ্ঞাতি;”

এই অন্তঃসারশূন্য সমাজব্যবস্থায় মানুষের অধিকার খর্ব করাই যেন মানুষের কাজ। সমাজের চোখে ঘৃণ্য বারাঙ্গনার প্রতি এই অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধই কবিকে করে তুলেছে যুগশ্রেষ্ঠ।

নজরুলের কবিতা সমাজের প্রান্তিক স্তরের মানুষের জন্য মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টির মতোই প্রশান্তিদায়ক। তারা যেন যুগ যুগ ধরে চাতকের মতো কবির অপেক্ষায়ই ছিলেন। তাদের কাস্তে ও কুঠারের ঝনঝনানিতে, শ্রমে ও ঘামে নজরুলের কবিতা বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে। সময় এসেছে নজরুলচর্চা বেগবান করার।

মুন্নি আক্তার সুমি

প্রভাষক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-07-07 at 3.44.57 PM

ডিজিটাল ডেটা

ডিজিটাল ডেটা কী?

ডিজিটাল ডিভাইসে (মোবাইল/কম্পিউটার) আমরা যে ডেটা রাখি তার সবই কম্পিউটারের ভাষা বাইনারি (0,1) এ রুপান্তর হয়ে তারপর তা মেমোরিতে স্থান পায়। আমরা চাইলেই কোন এনালগ ডেটাকে ডিজিটাল ডিভাইসে রাখতে পারি না, রাখতে চাইলে তাদের অবশ্যই ডিজিটাল ডেটায় রুপান্তর করে নিতে হয়।

প্রশ্ন জাগতে পারে, ডিজিটাল ডিভাইস কী? ডিজিটাল ডিভাইস হচ্ছে এমন ডিভাইস যেখানে বিভিন্ন ইলেকট্রিকাল সার্কিটের মাধ্যমে তড়িৎ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করা হয় এবং বাইনারি ভাষার 0 এবং 1 এর মাধ্যমে সেই ডিভাইসের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয়। আর ডিজিটাল ডিভাইসে আমরা যে ছবি, গান, ফাইল রাখি তা সবই ডিজিটাল ডেটা।

মনে করুন, আপনি A কে কম্পিউটারে রাখবেন, এটা কম্পিউটারে স্থান পাবে 01000001 হিসেবে। এভাবে কোন ক্যারেক্টার এবং চিহ্নের জন্য কী বাইনারি হবে তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। আপনি যদি কোন ছবিকে মেমোরিতে রাখতে চান, সেটাও বাইনারিতে থাকবে মেমোরিতে। ছবি তৈরি হয় অসংখ্য পিক্সেল দ্বারা, পিক্সেল মানে ছোট ছোট বর্গাকার ঘর যেটায় বিভিন্ন রং থাকে এবং ঐ রংগুলোরও আলাদা আলাদা বাইনারি মান থাকে, যার ফলে কম্পিউটার বুঝতে পারে কোন পিক্সেলে কী রং আছে।

ডিজিটাল কোন ডেটা আমরা যখন ডিলিট করে দেই তখন তা কোথায় যায়??

আমাদের ডিলিট করার সাথে সাথেই কোন ফাইল, ছবি, ডেটা ডিলিট হয়ে যায় না। কোন ফাইল কম্পিউটারে রাখলে তা কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ একটা ইনডেক্সিং (বইতে যেমন সূচিপত্র থাকে) চার্টের মাধ্যমে স্টোর করে রাখে যে মেমোরির কোথায় কোন ফাইলটাকে রেখেছে। আমরা যখন সেই ফাইলটাকে ডিলিট করে দেই তখন ইনডেক্স থেকে সেই ফাইলটা মুঝে যায় কেবল, কিন্তু মেমোরিতে কিন্তু থেকে যায়, তাই আমরা সেই ফাইলটাকে আর কম্পিউটারে খুঁজে পাই না। আর যখন আমরা নতুন কোন ফাইল রাখি তখন তা আগের জায়গাতেই রিপ্লেস হয়ে যায় শুধু। আর ডেটা রিকোভার সফটওয়্যার দিয়ে আপনার মুঝে ফেলা ডেটাকে ফিরিয়ে আনা যায় যদি আপনি ডেটা রিপ্লেস না করে ফেলেন। তাই কোন ডেটা একেবারে ডিলিট করে ফেললে এরপর কম্পিউটার আর তেমন ব্যবহার না করে ডেটা রিকোভার সফটওয়্যার দিয়ে তা সাথে সাথেই রিকোভার করার চেষ্টা করতে হবে। PhotoRec সফটওয়্যারটা ব্যবহার করা যেতে পারে যা উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্সে কাজ করে।

 

আব্দুল্লাহ ওমর ফারুক

প্রভাষক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ