‘সমাস’ একটি দ্বিমুখী শব্দ (Palindrome word)। অর্থাৎ বাম থেকে ডানে বা ডান থেকে বামে− যেদিকেই যাই− ‘সমাস’ শব্দটি অপরিবর্তিত থাকে। তদ্রূপ, দরদ, জমজ, নতুন, বাহবা। 
ব্যাকরণমতে, সম্ + অস্ + অ (ঘঞ্) = সমাস। এর অর্থ ‘সংক্ষেপণ’।

সমাসবদ্ধ শব্দ ও বানান

‘সমাস’ একটি দ্বিমুখী শব্দ (Palindrome word)। অর্থাৎ বাম থেকে ডানে বা ডান থেকে বামে− যেদিকেই যাই− ‘সমাস’ শব্দটি অপরিবর্তিত থাকে। তদ্রূপ, দরদ, জমজ, নতুন, বাহবা।

ব্যাকরণমতে, সম্ + অস্ + অ (ঘঞ্) = সমাস। এর অর্থ ‘সংক্ষেপণ’। অর্থাৎ বাক্যস্থ অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একীভূত বা সংক্ষিপ্ত রূপই সমাস। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষার নিয়ম, যা বাংলা ভাষায়ও প্রচলিত আছে।

কয়েকটি উদাহরণ দিই :

মহান যে রাজা, তিনি তীর্থে যাবেন।

মহারাজ তীর্থে যাবেন।

অথবা,

আমার হাতে পরার ঘড়িটি দামি।

আমার হাতঘড়িটি দামি।

অথবা,

তিন বাহু (ভুজ) দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র অঙ্কন করো।

ত্রিভুজ অঙ্কন করো।

পূর্বোক্ত তিনটি বাক্যই সমাসের উদাহরণ। এখানে অর্থ ঠিক রেখে বাক্যস্থ পদসমূহকে একীভূত বা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এখানে ‘মহারাজ’ সাধারণ কর্মধারয়, ‘হাতঘড়ি’ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ও ‘ত্রিভুজ’ দ্বিগু/কর্মধারয় সমাস।

আরও উদাহরণ−

এগুলো গাছে পাকা আম।

এগুলো গাছপাকা আম।

অথবা,

লোকটি জন্ম থেকে অন্ধ ।

লোকটি জন্মান্ধ।

অথবা,

মেয়েটি এক অধিক দশ শ্রেণিতে পড়ছে।

মেয়েটি একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।

এখানে লক্ষনীয় যে, সমাসবদ্ধ পদ বাক্যকে সরল, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করেছে। ভাষাদক্ষতা অর্জনে এর প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। 

প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাস (compound word) আর বাক্য সংকোচন (sentence contraction)-এর মধ্যে সাদৃশ্য বা পার্থক্য  কী? আমাদের ধারণা, দুটোই বাক্য সংক্ষেপণ। তবে এদের গঠনপদ্ধতি আলাদা। সমাসের ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদ থাকে এবং সমাসের প্রকারভেদ থাকে, যা বাক্য সংকোচনে থাকে না।

নিচের তালিকাটি লক্ষ করা যাক :

সমাসবাক্য সংকোচন
চতুঃ (চার) অঙ্গের সমষ্টি = চতুরঙ্গ দুঃ (কঠিন) যে পাচ্য = দুষ্পাচ্য পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব ন (নয়) অতি  দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ  অশ্ব, রথ, হস্তী  ও পদাতিক সৈন্যের সমষ্টি – চতুরঙ্গ যা সহজে পরিপাক হয় না – দুষ্পাচ্য যা  পূর্বে ছিল, এখন নেই − ভূতপূর্ব যা খুব  দীর্ঘ নয় −  নাতিদীর্ঘ

এখানে ‘চতুরঙ্গ’ দ্বিগু, ‘দুষ্পাচ্য’ কর্মধারয়, ‘ভূতপূর্ব’ ৭মী তৎপুরুষ ও ‘নাতিদীর্ঘ’ নঞর্থক তৎপুরুষ সমাস।    

উল্লেখ্য, সমাস হচ্ছে অর্থের মিলন আর সন্ধি হচ্ছে পার্শ্বস্থ  বা সংলগ্ন দুটি ধ্বনি/বর্ণের মিলন। সমাস ও সন্ধির গঠনপদ্ধতিও আলাদা। যথা−

সমাসসন্ধি
জায়া ও পতি = দম্পতিজায়া> দম্ + পতি = দম্পতি
কটু যে উক্তি = কটূক্তিকটু  + উক্তি = কটূক্তি
স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল অক্ষর = স্বর্ণাক্ষর স্বর্ণ + অক্ষর =  স্বর্ণাক্ষর
পুষ্প দ্বারা অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলিপুষ্প + অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলি
অহ্নের অপরভাগ = অপরাহ্ণ অপর + অহ্ন = অপরাহ্ণ  

এখানে ‘দম্পতি’ দ্বন্দ্ব, ‘কটূক্তি’ সাধারণ কর্মধারয়, ‘স্বর্ণাক্ষর’ মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, ‘পুষ্পাঞ্জলি’ ৩য়া তৎপুরুষ ও ‘অপরাহ্ণ’ ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।

সংস্কৃত ব্যাকরণমতে, সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যথা : দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, অব্যয়ীভাব ও  বহুব্রীহি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, দ্বিগু ও কর্মধারয় একই শ্রেণিভুক্ত। অর্থাৎ এগুলোতে পূর্বপদে বিশেষণ ও পরপদের অর্থপ্রধান্য থাকে। তা ছাড়া ‘অব্যয়ীভাব’ উপসর্গের নিয়মে সিদ্ধ। সেহেতু বাংলা ব্যাকরণমতে, সমাস প্রধানত ৪ প্রকার। যথা− দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ ও বহুব্রীহি। 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সমাসবদ্ধ পদগঠনের মূল ভিত্তি হচ্ছে দুটি পদ− পূর্বপদ ও পরপদ। কোন পদের অর্থ প্রধান− পূর্বপদ না পরপদ− সেটিই  সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

পদের অর্থপ্রাধান্য অনুযায়ী সমাসের শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ :

সমাসপূর্বপদপরপদঅন্যপদ
দ্বন্দ্বÖÖ 
দ্বিগু Ö 
কর্মধারয় Ö 
তৎপুরুষ Ö 
অব্যয়ীভাবÖ  
বহুব্রীহি  Ö

উল্লেখ্য, একই পদের বিভিন্ন প্রকার সমাস হতে পারে। আরও উল্লেখ্য, ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সমাসের নাম নির্ধারিত হয়। এ ক্ষেত্রে  ব্যাসবাক্যটি শুদ্ধ বা যথার্থ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যথা−

ব্যাসবাক্য = সমস্তপদসমাসের নাম
মুখ পদ্মের ন্যায় = মুখপদ্ম মুখ রূপ পদ্ম = মুখপদ্মউপমিত কর্মধারয় রূপক কর্মধারয়
মোমের বাতি = মোমবাতি মোম নির্মিত বাতি = মোমবাতি৬ষ্ঠী  তৎপুরুষ মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
তেল দ্বারা ভাজা = তেলেভাজা তেলে ভাজা = তেলেভাজা৩য়া তৎপুরুষ অলুক তৎপুরুষ
ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা ঢেঁকিতে ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা৩য়া তৎপুরুষ ৭মী তৎপুরুষ
ন (নেই) ওয়ারিশ = বেওয়ারিশ ওয়ারিশ নেই যার = বেওয়ারিশনঞর্থক তৎপুরুষ নঞর্থক বহুব্রীহি

উল্লেখ্য, দুধ ও ভাত = দুধভাত (দ্বন্দ্ব) শুদ্ধ নয়। দুধ মিশ্রিত ভাত = দুধভাত (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) শুদ্ধ। তদ্রূপ, দুধসাগু। আরও উল্লেখ্য, রাজার পুত্র = রাজপুত্র (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ) শুদ্ধ। কিন্তু রাজার হংস = রাজহংস (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ) শুদ্ধ নয়। হংসের রাজা = রাজহংস (৬ষ্ঠী তৎপুরষ) শুদ্ধ। তদ্রূপ, রাজপথ। এখানে প্রথম ‘রাজা’ (King) এবং দ্বিতীয় ‘রাজা’ শ্রেষ্ঠ/বড় অর্থ বোঝাচ্ছে।

কয়েকটি বিশেষ নিয়ম :

১. সমস্তপদ পুরুষবাচক থাকলেও ব্যাসবাক্যে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়। যথা :

    কুকুরীর ছানা = কুকুরছানা, ছাগীর দুগ্ধ  = ছাগদুগ্ধ, হংসীর ডিম্ব = হংসডিম্ব । তদ্রূপ− সুন্দরীবৃক্ষের  বন =

    সুন্দরবন। এগুলো তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ। আরও উদাহরণ – মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি (সাধারণ কর্মধারয়),

    পঞ্চ নদীর সমষ্টি = পঞ্চনদ (দ্বিগু/কর্মধারয়)।

২. সমস্তপদে ‘ক’/কা’/‘কদ’ থাকলেও ব্যাসবাক্যে ‘কু’ ব্যবহৃত হয়। যথা :

    কু যে অর্থ = কদর্থ, কু যে পুরুষ = কাপুরুষ, কু যে আকার = কদাকার।

৩. পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ (পদ্ম), জলে জন্মে যা = জলজ  (− উদ্ভিদ)। কিন্তু ফল দান কারে যা– ‘ফলদ’। অর্থাৎ    

    ‘ফলজ’ নয়− ‘ফলদ’ বৃক্ষ শুদ্ধ।

‘সমাস’ একটি দ্বিমুখী শব্দ (Palindrome word)। অর্থাৎ বাম থেকে ডানে বা ডান থেকে বামে− যেদিকেই যাই− ‘সমাস’ শব্দটি অপরিবর্তিত থাকে। তদ্রূপ, দরদ, জমজ, নতুন, বাহবা। 
ব্যাকরণমতে, সম্ + অস্ + অ (ঘঞ্) = সমাস। এর অর্থ ‘সংক্ষেপণ’।

সমাসবদ্ধ শব্দ ও বানান

‘সমাস’ একটি দ্বিমুখী শব্দ (Palindrome word)। অর্থাৎ বাম থেকে ডানে বা ডান থেকে বামে− যেদিকেই যাই− ‘সমাস’ শব্দটি অপরিবর্তিত থাকে। তদ্রূপ, দরদ, জমজ, নতুন, বাহবা।

ব্যাকরণমতে, সম্ + অস্ + অ (ঘঞ্) = সমাস। এর অর্থ ‘সংক্ষেপণ’। অর্থাৎ বাক্যস্থ অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একীভূত বা সংক্ষিপ্ত রূপই সমাস। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষার নিয়ম, যা বাংলা ভাষায়ও প্রচলিত আছে।

কয়েকটি উদাহরণ দিই :

মহান যে রাজা, তিনি তীর্থে যাবেন।

মহারাজ তীর্থে যাবেন।

অথবা,

আমার হাতে পরার ঘড়িটি দামি।

আমার হাতঘড়িটি দামি।

অথবা,

তিন বাহু (ভুজ) দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র অঙ্কন করো।

ত্রিভুজ অঙ্কন করো।

পূর্বোক্ত তিনটি বাক্যই সমাসের উদাহরণ। এখানে অর্থ ঠিক রেখে বাক্যস্থ পদসমূহকে একীভূত বা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এখানে ‘মহারাজ’ সাধারণ কর্মধারয়, ‘হাতঘড়ি’ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ও ‘ত্রিভুজ’ দ্বিগু/কর্মধারয় সমাস।

আরও উদাহরণ−

এগুলো গাছে পাকা আম।

এগুলো গাছপাকা আম।

অথবা,

লোকটি জন্ম থেকে অন্ধ ।

লোকটি জন্মান্ধ।

অথবা,

মেয়েটি এক অধিক দশ শ্রেণিতে পড়ছে।

মেয়েটি একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।

এখানে লক্ষনীয় যে, সমাসবদ্ধ পদ বাক্যকে সরল, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করেছে। ভাষাদক্ষতা অর্জনে এর প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। 

প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাস (compound word) আর বাক্য সংকোচন (sentence contraction)-এর মধ্যে সাদৃশ্য বা পার্থক্য  কী? আমাদের ধারণা, দুটোই বাক্য সংক্ষেপণ। তবে এদের গঠনপদ্ধতি আলাদা। সমাসের ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদ থাকে এবং সমাসের প্রকারভেদ থাকে, যা বাক্য সংকোচনে থাকে না।

নিচের তালিকাটি লক্ষ করা যাক :

সমাসবাক্য সংকোচন
চতুঃ (চার) অঙ্গের সমষ্টি = চতুরঙ্গ দুঃ (কঠিন) যে পাচ্য = দুষ্পাচ্য পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব ন (নয়) অতি  দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ  অশ্ব, রথ, হস্তী  ও পদাতিক সৈন্যের সমষ্টি – চতুরঙ্গ যা সহজে পরিপাক হয় না – দুষ্পাচ্য যা  পূর্বে ছিল, এখন নেই − ভূতপূর্ব যা খুব  দীর্ঘ নয় −  নাতিদীর্ঘ

এখানে ‘চতুরঙ্গ’ দ্বিগু, ‘দুষ্পাচ্য’ কর্মধারয়, ‘ভূতপূর্ব’ ৭মী তৎপুরুষ ও ‘নাতিদীর্ঘ’ নঞর্থক তৎপুরুষ সমাস।    

উল্লেখ্য, সমাস হচ্ছে অর্থের মিলন আর সন্ধি হচ্ছে পার্শ্বস্থ  বা সংলগ্ন দুটি ধ্বনি/বর্ণের মিলন। সমাস ও সন্ধির গঠনপদ্ধতিও আলাদা। যথা−

সমাসসন্ধি
জায়া ও পতি = দম্পতিজায়া> দম্ + পতি = দম্পতি
কটু যে উক্তি = কটূক্তিকটু  + উক্তি = কটূক্তি
স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল অক্ষর = স্বর্ণাক্ষর স্বর্ণ + অক্ষর =  স্বর্ণাক্ষর
পুষ্প দ্বারা অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলিপুষ্প + অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলি
অহ্নের অপরভাগ = অপরাহ্ণ অপর + অহ্ন = অপরাহ্ণ  

এখানে ‘দম্পতি’ দ্বন্দ্ব, ‘কটূক্তি’ সাধারণ কর্মধারয়, ‘স্বর্ণাক্ষর’ মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, ‘পুষ্পাঞ্জলি’ ৩য়া তৎপুরুষ ও ‘অপরাহ্ণ’ ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।

সংস্কৃত ব্যাকরণমতে, সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যথা : দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, অব্যয়ীভাব ও  বহুব্রীহি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, দ্বিগু ও কর্মধারয় একই শ্রেণিভুক্ত। অর্থাৎ এগুলোতে পূর্বপদে বিশেষণ ও পরপদের অর্থপ্রধান্য থাকে। তা ছাড়া ‘অব্যয়ীভাব’ উপসর্গের নিয়মে সিদ্ধ। সেহেতু বাংলা ব্যাকরণমতে, সমাস প্রধানত ৪ প্রকার। যথা− দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ ও বহুব্রীহি। 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সমাসবদ্ধ পদগঠনের মূল ভিত্তি হচ্ছে দুটি পদ− পূর্বপদ ও পরপদ। কোন পদের অর্থ প্রধান− পূর্বপদ না পরপদ− সেটিই  সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

পদের অর্থপ্রাধান্য অনুযায়ী সমাসের শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ :

সমাসপূর্বপদপরপদঅন্যপদ
দ্বন্দ্বÖÖ 
দ্বিগু Ö 
কর্মধারয় Ö 
তৎপুরুষ Ö 
অব্যয়ীভাবÖ  
বহুব্রীহি  Ö

উল্লেখ্য, একই পদের বিভিন্ন প্রকার সমাস হতে পারে। আরও উল্লেখ্য, ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সমাসের নাম নির্ধারিত হয়। এ ক্ষেত্রে  ব্যাসবাক্যটি শুদ্ধ বা যথার্থ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যথা−

ব্যাসবাক্য = সমস্তপদসমাসের নাম
মুখ পদ্মের ন্যায় = মুখপদ্ম মুখ রূপ পদ্ম = মুখপদ্মউপমিত কর্মধারয় রূপক কর্মধারয়
মোমের বাতি = মোমবাতি মোম নির্মিত বাতি = মোমবাতি৬ষ্ঠী  তৎপুরুষ মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
তেল দ্বারা ভাজা = তেলেভাজা তেলে ভাজা = তেলেভাজা৩য়া তৎপুরুষ অলুক তৎপুরুষ
ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা ঢেঁকিতে ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা৩য়া তৎপুরুষ ৭মী তৎপুরুষ
ন (নেই) ওয়ারিশ = বেওয়ারিশ ওয়ারিশ নেই যার = বেওয়ারিশনঞর্থক তৎপুরুষ নঞর্থক বহুব্রীহি

উল্লেখ্য, দুধ ও ভাত = দুধভাত (দ্বন্দ্ব) শুদ্ধ নয়। দুধ মিশ্রিত ভাত = দুধভাত (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) শুদ্ধ। তদ্রূপ, দুধসাগু। আরও উল্লেখ্য, রাজার পুত্র = রাজপুত্র (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ) শুদ্ধ। কিন্তু রাজার হংস = রাজহংস (৬ষ্ঠী তৎপুরুষ) শুদ্ধ নয়। হংসের রাজা = রাজহংস (৬ষ্ঠী তৎপুরষ) শুদ্ধ। তদ্রূপ, রাজপথ। এখানে প্রথম ‘রাজা’ (King) এবং দ্বিতীয় ‘রাজা’ শ্রেষ্ঠ/বড় অর্থ বোঝাচ্ছে।

কয়েকটি বিশেষ নিয়ম :

১. সমস্তপদ পুরুষবাচক থাকলেও ব্যাসবাক্যে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়। যথা :

    কুকুরীর ছানা = কুকুরছানা, ছাগীর দুগ্ধ  = ছাগদুগ্ধ, হংসীর ডিম্ব = হংসডিম্ব । তদ্রূপ− সুন্দরীবৃক্ষের  বন =

    সুন্দরবন। এগুলো তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ। আরও উদাহরণ – মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি (সাধারণ কর্মধারয়),

    পঞ্চ নদীর সমষ্টি = পঞ্চনদ (দ্বিগু/কর্মধারয়)।

২. সমস্তপদে ‘ক’/কা’/‘কদ’ থাকলেও ব্যাসবাক্যে ‘কু’ ব্যবহৃত হয়। যথা :

    কু যে অর্থ = কদর্থ, কু যে পুরুষ = কাপুরুষ, কু যে আকার = কদাকার।

৩. পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ (পদ্ম), জলে জন্মে যা = জলজ  (− উদ্ভিদ)। কিন্তু ফল দান কারে যা– ‘ফলদ’। অর্থাৎ    

    ‘ফলজ’ নয়− ‘ফলদ’ বৃক্ষ শুদ্ধ।

প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

(পরবর্তী অংশ)

০৫. -স্ত/-স্থ

ত্রাস > ত্রস্তসন্ত্রাস > সন্ত্রস্ত (− জনপদ)
গ্রাস > গ্রস্তঅভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, চন্দ্রগ্রস্ত চিন্তাগ্রস্ত, দায়গ্রস্ত, দ্বিধাগ্রস্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত, নেশাগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত, মোহগ্রস্ত, ভূতগ্রস্ত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, রাহুগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত
স্থ বা স্থিতঅন্তঃস্থ (− বর্ণ), বহিস্থ, আত্মস্থ, আতঙ্কগ্রস্ত, উদরস্থ, উপরস্থ/উপরিস্থ,   কণ্ঠস্থ, মুখস্থ, গৃহস্থ , ঢাকাস্থ, তটস্থ, দ্বারস্থ, ধাতস্থ,  ধ্যানস্থ, নিকটস্থ, দূরস্থ, পকেটস্থ, প্রকৃতিস্থ,  পদস্থ, পাত্রস্থ, পার্শ্বস্থ (দক্ষিণ− ), ভবনস্থ, ভূগর্ভস্থ, মঞ্চস্থ, মনস্থ, মধ্যস্থ,   সম্মুখস্থ, সমাধিস্থ  

উল্লেখ্য, ‘অধীনস্থ‘ নয়− ‘অধীন’ শুদ্ধ । আরও উল্লেখ্য, ‘দুস্থ’ ও ‘‘সুস্থ’ শুদ্ধ।

আরও উদাহরণ –

‘স্থ’ নয়− ‘স্ত‘ 

অস্ত (সূর্যাস্ত), আস্ত (− রোস্ট), ন্যস্ত, ব্যস্তসমস্ত, ব্যতিব্যস্ত, পোস্ত (-গোলা), সাব্যস্ত।

বিশেষ্য > বিশেষণ:

অভ্যাস > অভ্যস্ত, আশ্বাস > আশ্বস্ত, বিন্যাস > বিন্যস্ত, বিশ্বাস > বিশ্বস্ত, বিধ্বংস > বিধ্বস্ত, বিস্রংস > বিস্রস্ত (− বেশভূষা), নিবৃত্ত > নিরস্ত, পরাহত > পরাস্ত।

বিপরীত শব্দ:

অস্তি – নাস্তি, নিন্দা – প্রশস্তি, স্বস্তি – অস্বস্তি, সংকীর্ণ – প্রশস্ত। কিন্তু দৈর্ঘ্য – প্রস্থ।

বিদেশি শব্দ:

দরখাস্ত (ফা.), বরখাস্ত (ফা.) ।  

০৬. ‘স্থান’ নয় – ‘স্তান’

‘গুলিস্থান’ নয়− ‘গুলিস্তান’ । তদ্রূপ, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কিস্তান, পাকিস্তান।

০৭. মতুপ্ > মান। যথা:

প্রবাহ– প্রবহমান (− নদী), বিকাশ− বিকশমান (− নগর), বিবাদ– বিবদমান (− দুপক্ষ)।

আরও উদাহরণ: -ইত

উচ্ছ্বাস – উচ্ছ্বসিত, উল্লাস – উল্লসিত। কিন্তু উদ্ভাস – ‘উদ্ভাসিত’ শুদ্ধ।

কতিপয় প্রত্যয়যুক্ত শব্দের শুদ্ধরূপ:

 উদ্-√গৃ+ অন (অনট) = উদগিরণ

 ব্যবহার + ইক = ব্যাবহারিক

 প্রশাসন + ইক = প্রাশাসনিক

 গড্ডল + ইকা = গড্ডলিকা (− প্রবাহ)

 অভ্যন্তর + ঈন = অভ্যন্তরীণ (− সড়ক)

 সর্বাঙ্গ + ঈন = সর্বাঙ্গীণ

 বর্ষ + ঈয়সী =বর্ষীয়সী (− নারী)

 বহু + ঈয়সী = ভূয়সী (− প্রশংসা)

 মহী + ঈয়সী = মহীয়সী (− নারী)

√জাগৃ + ঊক = জাগরূক (স্মৃতি −)

√রুজ্ + ত (ক্ত) = রুগ্ণ (− প্রতিষ্ঠান)

 পশ্চাৎ + ত্য (ত্যণ) = পাশ্চাত্ত্য (−দর্শন )

 প্রতিযোগী + নী = প্রতিযোগিনী

টীকা:  অভিধানমতে, ‘সৌহার্দ্’/‘সৌহার্দ্য’ শুদ্ধ।

কতিপয় প্রত্যয়যুক্ত শব্দে শিষ্ট কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয়। যথা:

ক. স্বরসঙ্গতির নিয়মে সিদ্ধ−

√চির্ + অনি = চিরনি >চিরুনি (− অভিযান)

√রাধ্ + অনি = রাঁধনি > রাঁধুনি

√জি + অন্ত = জিয়ন্ত > জ্যান্ত (− পুঁটিমাছ)

√উড়্ + আকু = উড়াকু >উড়ুক্কু  

√কুড়্ + আনি = কুড়ানি >কুড়ুনি (ঝিনুক-)

ঠাকুর + আনি = ঠাকুরানি > ঠাকরুন (দিদি-)

ডেঁপো + আমি = ডেঁপোমি

লাঠি + আল = লাঠিয়াল > লেঠেল  

ঝাঁঝ + আল = ঝাঁঝাল > ঝাঁঝালো (− রোদ)

ধার + আল = ধারাল > ধারালো (− ছুরি)

√খা + উকা = খাউকা > খেকো (ভূমি-, নদী-)

√খা + উয়া = খাউয়া> খেয়ো (-খেয়ি)

আধ + উলি = আধুলি > আধলি

বই + ওয়ালা = বইওয়ালা > বইঅলা (− পলান সরকার)

ধুন + চি = ধুনচি > ধুনুচি।

খ. অভিশ্রুতির নিয়মে সিদ্ধ−

মূলশব্দ >অপিনিহিতি > অভিশ্রুতি
√কাঁদ্ + ইয়া = কাঁদিয়া > √শুন্ + ইয়া + শুনিয়া > জাল + ইয়া = জালিয়া > মাটি + ইয়া = মাটিয়া > গাছ +উয়া = গাছুয়া > মাছ + উয়া = মাছুয়া > ভূত + উড়িয়া = ভূতুড়িয়া>. অদ্ভুত + উড়িয়া = অদ্ভুতুড়িয়া ছিঁচ + কিয়া = ছিঁচকিয়া > পুঁচ + কিয়া = পুঁচকিয়া > বখা + টিয়া = বখাটিয়া > ভাড়া + টিয়া = ভাড়াটিয়া > আলি + সা = আলিসা > পানি + সা = পানিসা >কাঁইদ্যা >  কেঁদে শুইন্যা > শুনে জাইল্যা > জেলে (-পাড়া) মাইট্যা > মেটে ( হাঁড়ি) গাউছ্যা > গেছো (− সাপ) মাউছ্যা > মেছো (− কুমির) ভূতুইড়া >  ভূতুড়ে (− বাড়ি) অদ্ভুতুইড়া >  অদ্ভুতুড়ে (– ঘটনা) ছিঁইচকা >  ছিঁচকে (− চোর) পুঁইচকা > পুঁচকে বখাইটা > বখাটে ভাড়াইটা > ভাড়াটে আইলসা > আলসে পাইনসা > পানসে

টীকা:  অৎ + √ভূ + উত = অদ্ভুত।

গ. বিদেশি প্রত্যয়

নল + চা = নলিচা (খোল-) > নলচে

বাগ + চা = বাগিচা (সেগুন-)

বেঙ + চি = বেঙাচি > ব্যাঙাচি

কলম + দানি = কলমদানি > কলমদান

ছাই + দানি = ছাইদানি > ছাইদান

খরিদ + দার = খরিদ্দার > খদ্দের

টেক + সহি = টেকসহি > টেকসই

জুত + সহি = জুতসহি > জুতসই।

উল্লেখ্য, প্রত্যয়যুক্ত বহু শব্দে শিষ্ট কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয় এবং তা থেকে এখানে গুটিকয় উদাহরণ দেওয়া হয়েছে মাত্র। আরও উল্লেখ্য, ‘জবাবদিহিতা’ নয়− ‘জবাবদিহি’ শুদ্ধ। ‘ননদি’/‘ননদিনী’ নয়– ‘ননদ’ শুদ্ধ। ‘সচ্চরিত্র’/ ‘চরিত্রবান’ শুদ্ধ।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

উপসর্গ ও প্রত্যয় বাংলা শব্দগঠনের দুটি পদ্ধতি।

ব্যাকরণমতে, ধাতু ও শব্দের পূর্বে উপসর্গ এবং পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়। যথা: স (উপসর্গ) + মূল = সমূল, মূল + সহ (প্রত্যয়) = মূলসহ। সাধারণত একই শব্দে যুগপৎ উপসর্গ ও প্রত্যয় যুক্ত হয় না। সেহেতু ‘সমূলসহ’ অশুদ্ধ। তদ্রূপ, আ + কাঙ্ক্ষা = ‘আকাঙ্ক্ষা’ এবং কাঙ্ক্ষা + -ইত = ‘কাঙ্ক্ষিত’ শুদ্ধ । কিন্তু ‘আকাঙ্ক্ষিত’ অশুদ্ধ। আ + শঙ্কা = ‘আশঙ্কা’ এবং শঙ্কা + -ইত = ‘শঙ্কিত’ শুদ্ধ । কিন্তু ‘আশঙ্কিত’ অশুদ্ধ। আবার ধাতু ও শব্দে যুগপৎ দুটি প্রত্যয় যুক্ত হয় না। সেহেতু দরিদ্র + -য (ষ্ণ্য) = ‘দারিদ্র্য’ এবং দরিদ্র + -তা = ‘দরিদ্রতা’ শুদ্ধ। কিন্তু ‘দারিদ্র্যতা’ অশুদ্ধ। তদ্রূপ, ‘দৈন্য’/‘দীনতা’ শুদ্ধ। কিন্তু ‘দৈন্যতা’ অশুদ্ধ। ‘সাফল্য‘/‘সফলতা’ শুদ্ধ। কিন্তু ‘সাফল্যতা’ অশুদ্ধ।  

আরও উদাহরণ−

ভুল বানানশুদ্ধরূপ *
উৎকর্ষতা
ঔজ্জ্বল্যতা
কার্পণ্যতা
চাঞ্চল্যতা
বাহুল্যতা 
বৈচিত্র্যতা
বৈশিষ্ট্যতা
বৈষম্যতা
যাথার্থ্যতা
সখ্যতা
স্বাতন্ত্র্যতা
সাদৃশ্যতা
সামঞ্জস্যতা
সারল্যতা
সৌজন্যতা
উৎকৃষ্ট + য (ষ্ণ্য) = উৎকর্ষ
উজ্জ্বল + য = ঔজ্জ্বল্য
কৃপণ + য  = কার্পণ্য
চঞ্চল + য = চাঞ্চল্য
বহুল + য = বাহুল্য
বিচত্র + য = বৈচিত্র্য
বিশিষ্ট + য = বৈশিষ্ট্য
বিষম + য = বৈষম্য
যথার্থ + য = যাথার্থ্য
সখা + য = সখ্য
স্বতন্ত্র + য += স্বাতন্ত্র্য
সদৃশ + য = সাদৃশ্য
সমঞ্জস + য = সামঞ্জস্য
সরল + য = সারল্য
সুজন + য = সৌজন্য

*এখানে শুধু য (ষ্ণ্য)-যুক্ত বানানগুলো নির্দেশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘কৃচ্ছ্রতা’ নয়, ‘কৃচ্ছ্র’ (-সাধন) শুদ্ধ। ‘বদান্যতা’ নয়, বদ্ + আন্য = ‘বদান্য’ শুদ্ধ।  আরও উল্লেখ্য, পাগল + আ + টিয়া = পাগলাটিয়া > ‘পাগলাটে’ শুদ্ধ, প্রমাণ + য + তা = ‘প্রামাণ্যতা’ শুদ্ধ। নৌ + য + তা = ‘নাব্যতা’  শুদ্ধ। হৃদ + য + তা = ‘হৃদ্যতা’ শুদ্ধ। এখানে দুটি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দ গঠিত হয়েছে। তবে এমন উদাহরণ বিরল।  

আধুনিক বানানবিধিমতে, রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব (Double use) হয় না। যথা : অর্চ্চনা > অর্চনা, মূর্চ্ছনা > মূর্ছনা, মার্জ্জনা > মার্জনা, অপূর্ব্ব > অপূর্ব, সর্ব্বোচ্চ > সর্বোচ্চ, কর্ত্তব্য > কর্তব্য, গৃহকর্ত্তা > গৃহকর্তা, ভাবমূর্ত্তি > ভাবমূর্তি, দুর্দ্দিন > দুর্দিন, মর্ম্মবস্তু >মর্মবস্তু।   

আরও উদাহরণ−

ভুল বানানশুদ্ধরূপ
আচার্য্য
আশ্চর্য্য
আহার্য্য
ঐশ্বর্য্য
ঔদার্য্যতা 
কার্য্য
গাম্ভীর্য্যতা
চাতুর্য্যতা
চৌর্য্য
ধৈর্য্য
ধার্য্য
পরিহার্য্য
প্রাচুর্য্যতা
ব্যবহার্য্য
বিচার্য্য
স্বীকার্য্য
স্থৈর্য্য
সূর্য্য
শৌর্য্য
সৌন্দর্য্য
মাধুর্য্য
আ + √চর্ + য (ষ্ণ্য)= আচার্য 
আ + চর্য্য = আশ্চর্য
আহার + য = আহার্য
ঈশ্বর + য = ঐশ্বর্য
উদার + য = ঔদার্য
√কৃ + য  = কার্য
গম্ভীর + য = গাম্ভীর্য
চতুর + য = চাতুর্য
চোর + য = চৌর্য
ধীর + য = ধৈর্য
√ধৃ + য = ধার্য
পরিহার + য = পরিহার্য
প্রচুর + য = প্রাচুর্য
ব্যবহার + য = ব্যবহার্য
বিচার + য = বিচার্য
স্বীকার + য = স্বীকার্য
স্থির + য = স্থৈর্য
√সৃ + য = সূর্য
শূর + য = শৌর্য
সুন্দর + য = সৌন্দর্য
মধুর + য = মাধুর্য

উল্লেখ্য, সমর্থ + য = ‘সামর্থ্য’ শুদ্ধ। তদ্রূপ, দীর্ঘ + য = ‘দৈর্ঘ্য’, মূর্ধন্ + য =‘মূর্ধন্য’ শুদ্ধ। আরও উল্লেখ্য, শ্রদ্ধা + অর্ঘ্য = ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ শুদ্ধ।

প্রত্যয়ের আরও কয়েকটি নিয়ম:

০১. -ত্ব (তৃচ্)

শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে এবং পরে ত্ব (প্রত্যয়) যুক্ত হলে ঈ > ই হয়। যথা:

একাকী + -ত্ব = একাকিত্ব, কৃতী + -ত্ব = কৃতিত্ব, দায়ী + -ত্ব = দায়িত্ব, স্থায়ী + -ত্ব = স্থায়ীত্ব, মন্ত্রী + -ত্ব = মন্ত্রিত্ব, স্বামী + -ত্ব = স্বামিত্ব।

কিন্তু স্ত্রীবাচক শব্দে ঈ-কার অক্ষুণ্ণ থাকে। যথা:

কুমারীত্ব, নারীত্ব, ছাত্রীত্ব।

উল্লেখ্য, ‘মহত্ব’ নয়− মহৎ + -ত্ব = ‘মহত্ত্ব’ শুদ্ধ। তদ্রূপ, ‘তত্ব’ নয়− তৎ + -ত্ব = ‘তত্ত্ব’ শুদ্ধ। আরও উল্লেখ্য, ‘আত্ব’/‘আত্বক’ নয়− ‘আত্ম’/‘আত্মক’ শুদ্ধ। যথা: আত্মজ্ঞান, আত্মগোপন, একাত্ম, আক্রমণাত্মক, ধনাত্মক, ঋণাত্মক, ভ্রমাত্মক, ধ্বংসাত্মক, মারাত্মক, সর্বাত্মক।

০২. -তা (তৃচ্)

শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে এবং পরে তা (প্রত্যয়) যুক্ত হলে ঈ > ই হয়। যথা:

অপরিণামদর্শী + -তা = অপরিণামদর্শিতা, ঊর্ধ্বগামী + -তা = ঊর্ধ্বগামিতা, কার্যকারী + তা = কার্যকারিতা, দ্বিচারী + -তা =দ্বিচারিতা, দূ্রদর্শী + তা = দূ্রদর্শিতা, নিম্নগামী + -তা = নিম্নগামিতা, অন্তর্মুখী + -তা = অন্তর্মুখিতা, বহির্মুখী + -তা = বহির্মুখিতা, কর্মমুখী + -তা = কর্মমুখিতা, প্রতিদ্বন্দ্বী + -তা = প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিবন্ধী + -তা = প্রতিবন্ধিতা, বহুমুখী + -তা = বহুমুখিতা, বাগ্মী + -তা = বাগ্মিতা, স্ববিরোধী + -তা = স্ববিরোধিতা, রাষ্ট্রদ্রোহী + -তা = রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সত্যবাদী + -তা = সত্যবাদিতা, স্বেচ্ছাচারী + -তা = স্বেচ্ছাচারিতা।

কিন্তু √গ্রহ্ + তৃ (তৃচ্) = গ্রহীতা শুদ্ধ।  

০৩. -আলি

ক. সাদৃশ্য বোঝাতে

      সোনা + -আলি = সোনালি (− যুগ)। তদ্রূপ, রুপালি (− জ্যোৎস্না), পাটালি (− গুড়)।

খ. ভাব বোঝাতে

     মেয়ে + -আলি = মেয়েলি। তদ্রূপ, চতুরালি, মিতালি।

গ. জাত বা উৎপন্ন বোঝাতে

     (চৈত্র>) চৈত + আলি = চৈতালি (− রাত)। তদ্রূপ, পৌষালি (− সন্ধ্যা ), পূর্ব > পুব + আলি = পুবালি।

ঘ. অনুরূপ বোঝাতে

     গোড় + -আলি = গোাড়ালি। তদ্রূপ, সুতা + আলি = সুতালি > সুতলি।

ঙ. বৃত্তি বা কর্ম বোঝাতে

     গৃহস্থ + -আলি = গৃহস্থালি । তদ্রূপ, ঘটকালি, ঠাকুরালি, নাগরালি, রাখালি।

০৪. -আবলি

বহুবচন বোঝাতে

কার্য + আবলি = কার্যাবলি । তদ্রূপ, কবিতাবলি (চতুর্দশপদী −), গুণাবলি, ঘটনাবলি, তথ্যাবলি, দীপাবলি > দীপালি (− উৎসব), দৃশ্যাবলি, নামাবলি, নির্দেশাবলি, নিয়মাবলি, পত্রাবলি, প্রশ্নাবলি, বৈশিষ্ট্যাবলি, রচনাবলি, শর্তাবলি, সূত্রাবলি ।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Alia madam blog 2

Learn English with Easy Solution

                                  Part-01:

 Conditional Sentences in English 

            If you are an English learner of Higher Secondary level, you must have come across the term ‘If Conditionals’. However, this is an aspect of English Grammar. While studying different types of ‘conditionals’, you may feel a little confused,

complicated, difficult and tedious also. But if you learn some basic rules regarding the conditional sentences, you will be able to use these sentences in your daily conversation easily and smoothly.

  In English, ‘conditional’ sentences indicate certain structures of the sentences that establish what will happen if a certain incident takes place. This means that if a certain action is done, a certain result occurs.

Basically, four types of conditional sentences are used in English language.

01. 1st Conditional Sentences:

This type of sentence refers to the future events that might happen in course of action.

[If + Present Indefinite + Future Indefinite]

Structure: If + sub1 + V1 + object1 + (,) + sub2 + will + V1 + object2

Example:

  • If you get up early, you will keep fit.
  • If it rains, we will postpone the tour.
  • If I get the scholarship, I will apply for PhD.
  • If they want, I will assist them.
  • If she studies more, she will be able to fulfill her parents’ dream.

02. 2nd Conditional Sentences:

This conditional sentence is used to describe the unreal possibility. It shows the course of action that would/ could happen in the past.

[If + Past Indefinite + Past Conditional (Sub + would/could +V1 + object)]

                                    Structure: If + sub1 + V1+ object1 + (,) + sub2 + would/ could + V1 + object2  

   Example:

  • If they wanted, we would help them.  
  • If I got the scholarship, I would apply for higher studies.
  • If I were a millionaire, I would travel the whole world.
  • If you won the lottery, you could stop working.
  • If she studied more, she could achieve a desired result.

03. 3rd Conditional Sentences:

This conditional sentence discusses the past. These conditions are impossible also. Because they have occurred but won’t anymore.

            [If + Past Perfect tense + perfect conditional (Sub+ would have/could have + V3 + object)]

            Structure: If + sub1 + had + V3 + object1 + (,) + sub2 + would have/could have + V3 + object2

Example:

  • If they had wanted, we would have helped them.
  • If I had studied more, I would have obtained a better result.
  • If I had been a millionaire, I would have traveled the whole world.
  • If you had won the lottery, you could have stopped working.
  • I could have informed him the matter, if I had known it.

04. Zero Conditional Sentences:

Zero conditional deals with the facts. It refers to absolute certainty and does not refer to the future or the past.

[If + Present Indefinite + Present Indefinite]

Structure: If + sub1 + V1 + object1 + (,) + sub2 + V2 + object2

Example:

  • If you cry a lot, you get headache.
  • If you cool water to zero degrees, it turns into ice.
  • If you touch fire, you get burned.
  • If it snows, the ground gets icy.
  • If we make too much noise, the baby wakes up.                                           

N. B.

V1: Base form/ Present form of Verb

V2: Past form of Verb

V3: Past Participle form of Verb

Alia Rawshan Banu

Senior Lecturer (English)

Daffodil International College

WhatsApp Image 2022-09-04 at 9.30.16 AM

ব্যবস্থাপনার নীতি

আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল (Henry Fayol) ১৯১৬ সালে ফ্রান্সে তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ জেনারেল অ্যান্ড ইনডাসট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট (General and Industrial Management) এ ১৪টি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রদান করেছেন; এই নীতিগুলোই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হিসেবে মানা হয়।

হেনরি ফেয়লের ব্যবস্থাপনার ১৪ টি নীতি:

১. কার্যবিভাগ (Division of work)

 প্রতিষ্ঠানের কাজকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে সুষ্ঠুভাবে নির্দিষ্ট করার নীতিকেই কার্য বিভাজন নীতি বলে।

২. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব (Authority and Responsibility)

 কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব পরস্পর ঘনিষ্ঠতার সাথে সম্পর্কিত। কোনো কর্মীকে কার্য সম্পাদন করার জন্য কর্তৃত্ব অর্পন করার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও প্রদান করতে হবে। আবার এরূপ কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত অন্যথায় কার্যক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

৩. আদেশের ঐক্য (Unity of Command)

আদেশের  ঐক্য নীতির মূল কথা হলো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মী শুধু একজন বসের (Boss) অধীনে থাকবে এবং তার আদেশ গ্রহণ করবে। কারণ একাধিক বসের অধীনে একজন কর্মী সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না। এক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা এবং সমস্যাই দেখা দেয়।

৪. নির্দেশনার ঐক্য (Unity of Direction)

উদ্দেশ্যে অর্জনের জন্য পূর্ব নির্দেশনার সাথে মিল রেখে পরবর্তী নির্দেশনা প্রদানের কাজকে ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনার ঐক্য নীতি বলে।

৫. কেন্দ্রীকরণ      বিকেন্দ্রীকরণ(Centralization and Decentralization)

উওরঃ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিচের পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে তাকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে।

৬. সাম্য (Equity) 

সকল শ্রমিক ও কর্মীর প্রতি সমান এবং সম্মানজনক আচরণ করা উচিত। একজন ব্যবস্থাপক বা প্রশাসকের দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কেউ যেন  বৈষম্যের সম্মুখীন না হয়। 

৭. নিয়মানুবর্তিতা (Dicipline)

প্রতিষ্ঠানের জন্য উত্তম নিয়ম নীতি নির্ধারণ এবং তা মেনে চলার নীতিকেই ব্যবস্থাপনায় নিয়মানুবর্তিতার নীতি বলে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনগণ যদি নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন তবে প্রতিষ্ঠানে নিয়মানুবর্তিতার নীতি অনুসরণ সহজ হয়।

৮. শৃঙ্খলা (Principal of Order)

যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে এবং সঠিক বস্তুকে সঠিক স্থানে স্থাপনের নীতিকে ব্যবস্থাপনায় শৃঙখলার নীতি বলে ।

৯. সাধারণ স্বার্থের জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ (Subordination of individual to general interest)   

ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে প্রাতিষ্ঠানিক বা সাধারণ স্বার্থকে অগ্রাধিকার প্রদান এর নীতিকে ব্যবস্থাপনায় সাধারণ স্বার্থে নিজস্ব স্বার্থ ত্যাগের নীতি বলে ।

১০. চাকরির স্থায়িত্ব (Stability of tenure)   

এই নীতি অনুযায়ী মনে করা হয় যে, কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করা হলে তা কর্মীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগ্রহ ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। চাকরির স্থায়ী কে কর্মীরা  গৌরবের বিষয় মনে করে।

১১. উদ্যোগ (Initiative)

নতুন নতুন পদ্ধতি বা উপায় উদ্ভাবন ও আবিস্কার করার পক্ষে কর্মীদেরকে উৎসাহ প্রদান করা হেনরি ফেয়লের গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বাড়ে এবং উন্নত কর্মনৈপুণ্য প্রদর্শন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। 

১২. জোড়া-মই-শিকল (Scalar Chain)

প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত কর্তৃত্ব প্রবাহের একটি শিকল বা চেইন থাকবে। এই শিকল কর্তৃত্বের প্রবাহ ও যোগাযোগের উর্ধ্বগতি বা নিম্নগতি নির্দেশ করে। জরুরি কাজে সংগঠনের নীচু স্তরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা থাকবে। 

 

১৩. পারিশ্রমিক (Remuneration)

ন্যায্য বেতন এবং মজুরি নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মীদের প্রাপ্য। তাই বেতন ও মজুরির একটি উপযুক্ত কাঠামোর প্রবর্তন করে শ্রমিক-কর্মীদেরকে সর্বাধিক সন্তুষ্টি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। হেনরি ফেয়লের মতে, পারিশ্রমিক ন্যায্য হতে হবে এবং তা প্রদান করার যুক্তিসংগত বা সঠিক পন্থা থাকতে হবে। 

১৪. একতাই বল (Esprit de corps/Unity Is Strength) 

যেখানে একতা সেখানেই শক্তি। ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান নীতি হলো একে অপরকে  অনুপ্রাণিত করা এবং নিয়মিতভাবে একে অপরের সহায়ক হওয়া। একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার বিকাশ একটি ইতিবাচক ও প্রত্যাশিত কর্মপরিবেশ ও ফলাফলের দিকে পরিচালিত করবে। ব্যবস্থাপকের উচিৎ তার অধীনস্থ কর্মচারীদের দলগত প্রচেষ্টা, একতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং এভাবেই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব।

ব্যবস্থাপনা নীতিমালা হচ্ছে ব্যবস্থাপকীয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভবে সম্পাদনের নির্দেশিকা স্বরূপ। 

জারকা সুলতানা

ভাইস প্রিন্সিপাল এন্ড সহকারী অধ্যাপক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Nelufa madam blog

কলা ও এর পুষ্টিগুন

কলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল। কলা এমন একটি ফল যা সারাবছর পাওয়া যায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কলা পাওয়া যায়— যেমন, শবরি কলা, চম্পা কলা, সাগর কলা ইত্যাদি। এগুলো আমরা সবাই  চিনি তবে আমাদের বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের  উদ্ভাবিত কিছু জাত আছে— যেমন— অগ্নিশ্বর, কানাইবাসী, মোহনবাসী, জামাইষষ্টী অনেকেই চিনি না। কলা খুবই সুস্বাদু সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর ফল। কলা দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার বানানো যায়। বনের সব চেয়ে বড় প্রাণী অর্থাৎ বড়বাবু হাতির প্রিয় খাবার কলা মানে কলাগাছ। ফল হিসেবে কলার অনেক ঔষধি গুন রয়েছে। প্রচলিত একটি কথা আছে, কেউ যদি দিনে একটি কলা খায়; তাহলে তার বাড়িতে ডাক্তারের দরকার হয় না। তাহলে চলুন আমরা এই কলার পুষ্টিগুণ জেনে নেই।

কলা আপেলের চেয়ে দামি বাজারে আপেলের দাম বেশি কলার দাম কম, কিন্তু কলার পুষ্টিগুন আপেলের দ্বিগুন যেমনÑ আপেলে যে পরিমান প্রোটিন আছে তার চেয়ে চার গুন বেশি প্রোটিন কলায় আছে। এছাড়াও কলার Ñ কাবোর্হাইড্রেই আছে। দ্বিগুন ফসফরাস আছে তিনগুন ভিটামিন ‘এ’ও আয়রন আছে। পাঁচগুন, এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে এজন্য কলা আপেলের চেয়ে দামি।

* শক্তি জোগাতে কলা-

কলার সুক্রোজ, ফ্রুরেষ্টিজ ও গ্লুকোজ তিন ধরনের প্রাকৃতিক সুগার আছে এবং প্রচুর পরিমানে আঁশ পাওয়া যায়। খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই শক্তি পাওয়া যায়।

* হতাশগ্রস্ত মানুষের জন্য কলার ম্যাজিক – অধিকাংশ মানুষই হতাশায় ভোগেন, তাদের জন্য সুখবর হলো, এ হতাশ দুর করার জন্য কলার জুড়ি নাই, কলায় আছে ট্রিপটোফ্যান নামক প্রোটিন, যা ম্যাজিকের মতো হতাশা দূর করে। রক্তশূন্যতা থেকে পরিত্রান— আমাদের বিশেষ করে মেয়েদের হিমোগ্লোবিনের পরিমান অনেকেরই কম থাকে  অনেক সময় রক্তশূন্যতা তা দেখা দেয়, যাকে অ্যানিমিয় বলে, এটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা আয়রন ট্যাবলেট খাই, যদি প্রতিদিন একটি করে কলা খাই তাহলে এ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

* বুক জ্বালাপোড়ায়— অনেক সময় হঠাৎ বুক জ্বালাপোড়া শুরু হয়, বুক থেকে শুরু হলেও এক সময় ঘাড়, গলা চোয়ালের কোনে কোনে ছাড়িয়ে পড়ে রোগটির নাম হার্টবার্ন, হার্টবার্ন হলে আমরা অ্যান্টিসিড জাতীয় ঔষধ সেবন করি। যদি আমরা ঔষধ না খেয়ে কলা খাই তাহলেই রক্ষা পাই কারন কলা অ্যান্টিসিড ইজেক্ট তৈরি করে।

* আঘাত থেকে সুরক্ষা মানুষ কোন কারনে আঘাত প্রাপ্ত হলে শরীরের বিপাকীয় হার বেড়ে যায় ফলে শরীরের পটাশিয়াম লেভেলটা ও কমতে থাকে। কলায় প্রচুর পটাশিয়াম আছে যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাজতে ও পটাশিয়ামের লেভেল ঠিক রাখতে সাহয্য করে।

আসলে ফল আল্লাহর নিয়ামত প্রত্যেকটা ফলের মধ্যেই আল্লাহ তাআলা পুষ্টিগুন দিয়েছেন যা তার সৃষ্টির সেরা জীব অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাতের জন্য রোগ নিরাময়ের মহাঔষধ।

নিলুফা ইয়াসমিন

সিনিয়র প্রভাষক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-08-31 at 11.32.35 AM

বাঙালির চোখে সাদা-কালো

দেশে দেশে কালে কালে সাদার মাহাত্ম্য ধ্বনিত হয়েছে। সাদা মানেই সুন্দর। সাদা মানেই স্বর্গীয় কোনোকিছু। সাদা মানেই চোখ ধাঁধানো মন ভোলানো অপার রহস্যাবৃত মানসিক প্রশান্তির নিবাস। অপরদিকে কালো মানেই অন্ধকার। সব মুছে দেওয়ার কারিগর। কালো মানেই বিদঘুটে কোনোকিছু। কালো মানেই দুর্যোগের আভাস। কালো মানেই অভিশপ্ত নগরীর ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটের গাঁথুনি থেকে ভেসে আসা ক্রন্দনরতার চিৎকার।

সাদার প্রতি দুর্বলতা এবং কালোর প্রতি প্রচ্ছন্ন ঘৃণা স্থান বিশেষে প্রকাশ্যে ঘৃণা আমাদের চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। আমাদের পোষা বিড়াল কিংবা কুকুরটির বহিরাবরণ যদি সাদা কিংবা সাদা গোত্রীয় রঙের হয়ে থাকে তাহলে পোষ্যগুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসাও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। আবার, কোনো প্রতিষ্ঠানের কিংবা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, সাদা কবুতর ওড়ানো হচ্ছে কারণ সাদা কবুতরকে শান্তির প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সাদা কবুতরের পরিবর্তে যদি কালো কবুতর ওড়ানো হতো তাহলে কী পৃথিবী অশান্তির ভাগাড় হতো! এতো গেলো মামুলি পোষা প্রাণীর কথা। চামড়ায় মেলানিনের আধিক্যের দরুন মানুষের পৃথিবীতে মানুষের দ্বারা মানুষই সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের শিকার হয়।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ শোষণ, নিষ্পেষণ এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে চামড়ার রঙের তারতম্যের জন্য। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বর্বরতার ইতিহাস অনেক পুরাতন। সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গদের নিগ্রো, আফ্রিকান কাফ্রি, বর্বর, জন্তু-জানোয়ার ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করতে আমরা অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর এই স্বাচ্ছন্দ্য মূলত ছন্দ-তাল-লয় পায় আমাদের শৈশব থেকেই। সাধারণত, শৈশব থেকেই আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় যে, ফর্সা মানেই সুন্দর এবং কালো মানেই ভয়ঙ্কর এবং কুৎসিত। কালোকে পূর্বেই একটি ছাঁচে ফেলে দেওয়া হয় এবং এই ছাঁচেই কালো সম্পর্কিত সমুদয় আদিম ধারণা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মস্তিষ্কের এই ছাঁচই যত্নের সাথে লালন করা হয়। ইউরোপে কৃষ্ণাঙ্গের প্রতি শ্বেতাঙ্গের ঘৃণা-বিদ্রূপ-অবহেলা অনেকটাই প্রকাশ্যে ঘটে থাকে। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলে অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে কালোর প্রতি অবহেলা অনেকটা প্রচ্ছন্ন হলেও প্রবল।

এখনও যদি প্রতিবেশীর ঘর থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে তখন গৃহকর্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন থাকে – ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে? ফর্সা নাকি কালো? আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই। মেয়েদের বেলায় ফর্সা হওয়া ফরজ। আর যদি ফর্সা না হয় তাহলে তার আশু ভবিষ্যতের করুণ পরিণতির কথা চিন্তা করে মা-বাবা শিউরে ওঠেন। ভবিষ্যতে মেয়ে বিয়ে দিতে যৌতুক লাগবে এবং যৌতুকের অর্থ সঞ্চয়ের বয়স এবং মেয়ের বয়স সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। আবার, কোনো কালো চামড়ার পুরুষ যদি সৌভাগ্যক্রমে সাদা চামড়ার কোনো মেয়েকে বিয়ে করার গৌরব অর্জন করতে পারে, তাহলে সমাজের মানুষের উপমা ব্যবহারের ঘনঘটা দেখে যে কেউ মূর্ছা যেতে পারে। এহ! বাদুড়ের গলায় মুক্তোর মালা কিংবা কাকের গলায় সীতাহার – ইত্যাদি বলে ঐ পুরুষকে বিদ্রুপবাণে জর্জরিত করা হয়।

এমনকি আমাদের এই অঞ্চলের অনেক প্রবাদ-প্রবচন কিংবা গানেও বর্ণবাদ প্রকট। উদাহরণস্বরূপ : নদীর জল ঘোলাও ভালো, জাতের মেয়ে কালোও ভালো। এই প্রবাদটি বিশ্লেষণ করলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কালোর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকানো হয়েছে। মূলত এই প্রবাদটিতে কালো মেয়েকে চূড়ান্তভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। উঁচু বংশের মেয়ে কালো হলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু নিচু বংশের মেয়ে কালো হলেই সমস্যা! অর্থাৎ জাত ভালো হলে কালো আলো ছড়াবে অন্যথায় কালো মানেই অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অনন্য নিদর্শন  ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। বড়ু চণ্ডীদাসের ‘ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ‘দানখণ্ডের ১৩ নম্বর পদে কৃষ্ণের প্রতি রাধার অভিব্যক্তি নিম্নরূপ :

কাল হাণ্ডির ভাত না খাঁও।

কাল মেঘের ছায়া নাহিঁ জাওঁ।

কালিনী রাতি মোঁ প্রদীপ জালিআঁ পোহাঁও।

কাল গাইর ক্ষীর নাহিঁ খাও।

কাল কাজল নয়নে না লওঁ।

কাল কাহ্নাঞিঁ তোক বড় ডরাওঁ।।

অর্থ : কালো হাঁড়ির ভাত খাই না, কালো মেঘের ছায়াতে যাই না, কালো (অর্থাৎ আঁধার) রাত্রি প্রদীপ জ্বেলে কাটাই। কালো গরুর ক্ষীর খাই না, কালো কাজল চোখে নিই না। কালো কানাই তোকে অত্যন্ত ভয় করি।

উপর্যুক্ত ছন্দোবদ্ধ ছত্রগুলো অতীত সাহিত্যে কালোদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ মাত্র। আমাদের এই অঞ্চলে, এরূপ অমূল্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশক সাহিত্য অনেকটাই সহজলভ্য। সাহিত্য হলো সমাজের প্রতিচ্ছবি। জীবনের প্রতিচ্ছবি। সময়ের প্রতিচ্ছবি এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি। সমাজ বিনির্মাণে এবং সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহিত্যের ভূমিকা বর্ণনাতীত। সেই সাহিত্যেও বর্ণবাদ প্রকট।

কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের সৃষ্টিকর্মে নায়িকাদের রূপ-লাবণ্যের বর্ণনা দিয়ে থাকেন। সাধারণত নায়িকার বদনকে দুধে-আলতা মাখানো রঙের সাথে, নায়িকার পদযুগলকে ধবধবে শাদা বকের পালকের সাথে তুলনা করে থাকেন। তদ্রূপ কবিদের পথ অনুসরণ করে প্রণয়ী তার প্রণয়িনীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ফর্সা গোত্রের প্রাণীর সাথে তুলনা করে থাকে। এবং এরূপ তুলনাই স্বতসিদ্ধ রীতি। এর ব্যতিক্রম (যেমন: কাক কিংবা হারগিলার সাথে তুলনা) ঘটলেই অনেক সময় সম্পর্কের তাঁর কেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পুঁজিবাদ এবং বর্ণবাদের সম্পর্ক অনেকটা প্রণয়ী-প্রণয়িনীর সম্পর্কের মতো। কালোকে হীনমন্যতা রোগে আক্রান্ত করাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না পুঁজিবাদ। কারণ বর্তমানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বৃহৎ বাজারের প্রয়োজন হয়। আর এই বৃহৎ বাজার সৃষ্টির জন্য কালোর মধ্যে হীনমন্যতার ইনজেকশন পুশ করা হয়। কালোর সম্মানহানিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আমাদের বর্বর মানসিকতার গণমাধ্যমগুলো। এমনকি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বর্ণবাদ চর্চায় সর্বোচ্চ সম্মানী পাওয়ার দাবিদার।

কালো কিংবা ধলো সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত। তাই ধলো-কালোতে বিভেদ সৃষ্টি মানেই সৃষ্টিকর্তার অপমান। মানুষের আয়ত্ত্বের মধ্যে যা থাকে অর্থাৎ মানুষ যা নিজের প্রচেষ্টায় অর্জন করে সেটি হচ্ছে তার চারিত্রিক গুণাবলি। তাই সুস্থ পৃথিবী গড়তে মানবীয় গুণের কদর এবং পরিচর্যা করা আবশ্যক।

মুন্নি আক্তার সুমি

প্রভাষক, বাংলা

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-08-22 at 11.53.20 AM

উপসর্গ ও বানান

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১) মাইকেল মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এর বিষয়বস্তু ৯টি সর্গে বিভক্ত।

এখানে ‘সর্গ’ (‘স্বর্গ’ নয়) অর্থ অধ্যায় বা কাহিনিভাগ।

উপ + সর্গ = উপসর্গ। এর দুটি অর্থ প্রচলিত আছে− ১. রোগলক্ষণ, ২. অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি । আমরা এখানে দ্বিতীয়টি (Prefix − অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ ধারণা নেব।

আপনি স্বপরিবার নিমন্ত্রিত।

এখানে ‘স্বপরিবার’ না ‘সপরিবার’ শুদ্ধ? 

‘স্ব’ (সর্বনাম) অর্থ নিজ। আর ‘স’ (উপসর্গ) অর্থ সহ। অর্থাৎ পরিবারসহ (with family)। ব্যাকরণমতে, ‘সপরিবার’ শুদ্ধ। তদ্রূপ, ‘স্বস্ত্রীক’ নয়− ‘সস্ত্রীক’ শুদ্ধ। ‘স্ববান্ধব’ নয়− ‘সবান্ধব’ শুদ্ধ। ‘স্বার্থক’ নয়−  স + অর্থক = ‘সার্থক’ শুদ্ধ।

 ব্যাকরণমতে, উপ + √সৃজ্ + অ (ঘঞ্) = উপসর্গ। অথবা, উপ (ক্ষুদ্র) যে সর্গ (সৃষ্টি) = উপসর্গ। অতএব উপসর্গ হচ্ছে একপ্রকার ‘ক্ষুদ্রপদ’ বা ‘ক্ষুদ্রসৃষ্টি ‘। প্রশ্ন হচ্ছে, উপসর্গের সাহায্যে আমরা কী করি? উত্তর হচ্ছে, নতুন অর্থবাচক শব্দ সৃষ্টি করি এবং তাতে বাংলা ভাষা শব্দসম্পদে সমৃদ্ধ হয়। অতএব উপসর্গ ‘ক্ষুদ্র’ হলেও তুচ্ছ বা উপেক্ষণীয়  নয়। এর সৃষ্টিশীলতা অফুরন্ত।  

একটি উদাহরণ দিই :

বাংলা উপসর্গ− আ

অর্থ উদাহরণ
অভাব/না অর্থেআকাঁড়া, আকাটা, আগোছালো, আচাঁছা/আছোলা, আচালা, আছাঁকা, আছাঁটা,আছোঁয়া, আঝাল/আঝালা, আঝোড়া, আঢাকা, আনাড়ি, আবাছা, আবাটা, আভাজা,  আধোয়া, আপেষা, আফাটা, আফোটা, আমোছা, আরাঁধা, আলুনি।
মন্দ/নিকৃষ্ট অর্থেআকাঠ/আকাঠা, আগাছা, আকথা, আকাল, আঘাট/আঘাটা, অকর্ম > আকাম

সংস্কৃত উপসর্গ− আ

অর্থ  উদাহরণ
পর্যন্ত অর্থেআকণ্ঠ, আকর্ণ, আজন্ম, আজীবন, আজানু, আপ্রাণ, আপাদমস্তক, আবক্ষ (− মূর্তি), আবাল্য, আব্রহ্ম, আভূমি, আমরণ, আমৃত্যু, আসমুদ্র 
ঈষৎ অর্থেআকুঞ্চিত, আকম্প, আতাম্র, আনত, আনম্র,  আরক্ত/আরক্তিম, আপাণ্ডুর, আভাস, , আশুষ্ক
বিপরীত অর্থেআদান, আগমন, আরোগ্য
অভিমুখে ক্রিয়া অর্থেআক্রমণ, আকর্ষণ
সম্যকরূপে অর্থেআচ্ছাদন, আবাসন, আবেগ, আভোগ, আবাস
ব্যাপ্ত/পূর্ণ  অর্থেআকীর্ণ (জন + আকীর্ণ = জনাকীর্ণ )
গন্ধগ্রহণ অর্থেআঘ্রাণ (মধুকর কমলের − নিয়েছে)
অসিদ্ধ অর্থেআতপ (− চাল)
দম্ভ অর্থেস্পর্ধা  > আস্পর্ধা (আদি স্বরাগম)

ব্যাকরণমতে,  উপসর্গ ‘শব্দ’ নয়− ‘শব্দাংশ’ বা ‘অব্যয়জাতীয় শব্দাংশ’।

নিচের বাক্য-দুটি লক্ষ করা যাক:

বাঘ ও সিংহ হিংস্র প্রাণী।

বাঘ বা সিংহ বনের রাজা।

এখানে ‘ও’, ‘বা’ অব্যয়পদ, কিন্তু উপসর্গ নয়।

ব্যাকরণমতে, যেসকল অব্যয় ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবাচক শব্দ গঠন করে, সেগুলোই উপসর্গ। অর্থাৎ উপসর্গ হচ্ছে কোনো পদের পূর্বস্থ ক্ষুদ্রপদ। তবে এগুলো স্বাধীন পদ নয়। যথা:  আ + কণ্ঠ = আকণ্ঠ, উপ + কূল = উপকূল, সম্ + প্রীতি = সম্প্রীতি। এখানে ‘আ’, ‘উপ’, ‘সম্’  উপসর্গ।

উপসর্গ ৩ প্রকার−

১. বাংলা উপসর্গ (২১টি)

২. সংস্কৃত উপসর্গ (২০টি)

৩. বিদেশি উপসর্গ (২৫টি?)

ব্যাকরণমতে, বাংলা উপসর্গ বাংলা শব্দের পূর্বে এবং সংস্কৃত উপসর্গ সংস্কৃত শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দুয়েকটি ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন− ‘অ’। বহু বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পূর্বে ‘অ’ যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত,  বিদেশি উপসর্গ সকল প্রকার (বাংলা, সংস্কৃত ও বিদেশি) ধাতু ও শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তৃতীয়ত, ৪টি উপসর্গ ( আ, সু, বি, নি ) বাংলা ও সংস্কৃত উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

   কতিপয় উপসর্গযুক্ত শব্দ

উল্লেখ্য, প্র + ছায়া = প্রচ্ছায়া, অপ + ছায়া = অপচ্ছায়া, প্রতি + ছায়া = প্রতিচ্ছায়া। এগুলো সন্ধির নিয়মে সিদ্ধ। উৎ + বাহু = উদ্বাহু, উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস, উৎ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল। এগুলোও

সন্ধির নিয়মে সিদ্ধ । আরও উদাহরণ− বি + উৎপত্তি = ব্যুৎপত্তি, প্রতি + উপকার = প্রত্যুপকার, প্রতি + ইতি = প্রতীতি, প্র + অগ্রসর = প্রাগ্রসর, , সম্ + মান = সম্মান (-জনক), সম্ + উজ্জ্বল = সমুজ্জ্বল, সম্ + মার্জনী = সম্মার্জনী (ঝাঁটা) , সম্ + মিলন = সম্মিলন, সম্ + আরূঢ় = সমারূঢ়, সু + অল্প = স্বল্প। অন্যান্য শব্দ: পরা + অয়ন = পরায়ণ (ণত্ব বিধি), পরি + সেবা = পরিষেবা ( ষত্ব বিধি), সু + সুপ্তি = সুষুপ্তি (ষত্ব বিধি) ।

উল্লেখ্য, সাধারণত একটিমাত্র উপসর্গ ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, অ-সম্-পূর্ণ = অসম্পূর্ণ, অন-অতি-বৃহৎ = অনতিবৃহৎ, সম্-প্র-দান = সম্প্রদান। আরও উল্লেখ্য, কতিপয় উপসর্গযুক্ত শব্দে শিষ্ট  কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয়। যথা: অগণিত > অগুনিত, অপিচ (অধিকন্তু) > আরও, আগোছাল > আগোছালো, আফুটা > আফোটা, কমবখ্ত > কমবক্ত, পরিষদ > পর্ষদ, বদমায়েস > বদমাশ, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, সম্বাদ > সংবাদ, সম্বৎসর > সংবৎসর, সম্বরণ > সংবরণ, সম্বিৎ > সংবিৎ, সম্বর্ধনা > সংবর্ধনা।

পরিভাষা সৃষ্টির ক্ষেত্রে উপসর্গ  গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অপরিহার্য।

নিচের তালিকাটি লক্ষ করা যাক:

Anonymous – বেনামী (− লেখক)

Convocation – সমাবর্তন (প্রথম −)

Conference – সম্মেলন (কর্মী-)

Circular – পরিপত্র ( সরকারি −)

Directorate – অধিদপ্তর (স্বাস্থ্য −)

Faculty – অনুষদ (বিজ্ঞান −)

Invention – উদ্ভাবন (টিকা −)

Informal – অনানুষ্ঠানিক ( − পোশাক)

Immigrant – অভিবাসী (তিনি যুক্তরাষ্ট্রে −)

Leap-Year – অধিবর্ষ ( − ২০২৪)

Notice – বিজ্ঞপ্তি (নিয়োগ − )

Opening – উদ্বোধন (অনুষ্ঠান −) 

Perfume – সুগন্ধি (চন্দনের −)

Project – প্রকল্প (আশ্রয়ণ −)

Provost – প্রাধ্যক্ষ (হল −)

Registration – নিবন্ধন (জন্ম-)

Satellite – উপগ্রহ (বঙ্গবন্ধু −)

Supperman – অতিমানব

Synonym – প্রতিশব্দ (বাংলা −)

Terminology – পরিভাষা (রসায়ন −)।

এখানে অনানুষ্ঠানিক, উদ্বোধন, উদ্ভাবন, প্রাধ্যক্ষ, সমাবর্তন, সম্মেলন ও সমারূঢ় সন্ধিবদ্ধ শব্দ। এগুলোর অর্থ, বানান ও ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

WhatsApp Image 2022-08-01 at 3.50.18 PM

Human Migration in Amitav Ghosh’s Gun Island

In Gun Island, Amitav Ghosh deals with two contemporary global issues such as climate change and human migration. In this novel, environmental occurrences have been portrayed as increasingly common issues around the world. The events like storms in Sundarbans, fires in California, tornadoes and floods in Venice have been occurred due to climate change. At the same time, Ghosh links the adventures of a seventeenth century Bengali merchant travelling between the Bay of Bengal and the Mediterranean to the struggles of present-day migrants who are moving across the borders.

            The novel Gun Island begins with Dinanath, a middle-aged Bengali immigrant and rare book dealer living in Brooklyn. In one of his annual visits in Calcutta, he gets entangled in an old legend ‘Gun Merchant’ or ‘Bondooki Sadagar’ who himself got involved with the snake-goddess, Manasa. Ghosh’s skillful use of the legend of Manasa devi along with Dinanath’s quest for resolving the mystery of ‘Gun Merchant’ or ‘Bondooki Sadagar’ allows him to address issues as diverse as climate change, mythology, Venetian history and human migration.

            Amitav Ghosh depicts Dinanath as a successful migrant settled in New York, travelling across the world for his interest and purpose.  He represents the class of ‘Global Citizens’ who enjoys the privileges bestowed upon them in this globalized society, yet he lives an unfulfilled life searching for love, purpose and interests. Another two Bengali teenagers, Tipu, a computer whiz, and Rafi a fisherman, both try to find a route to Europe aided by human smugglers. The stories of Tipu and Rafi were told in the perspective of Bengali refugees in Europe. Gun Island draws a direct parallel between the migrants leaving their homes in quest of better life and the dolphins and other animals are forced to abandon their old and familiar habitats due to rising temperature and pollution revealing the entangled destinies of human and non-human beings on earth.

            Ghosh portrays Tipu and Rafi as having had access to technology since their boyhood and they are good at using digital devices like smartphones, computers. Through internet browsing, they come to know about the safe and secured life in foreign country and have been fascinated by those allurements. Tipu thinks that “the internet is the migrants’ magic carpet; it’s their conveyor belt” (Ghosh 2019, p. 61). This novel reveals the drawbacks and destructive impacts of wrong usage of technology. In an interview, Amitav Ghosh remarks,

            A lot of this is happening because the systems exist, and these systems are not trivial systems.      The human trafficking business is the biggest clandestine industry in the world, even bigger than the drug trade. It reaches very deep into society, especially poor societies. On top of that,

            you have the information system. If you are a poor kid, say in Bangladesh or Pakistan—both of   these countries have higher rates of internet penetration rates than the U.S.—you see these         pictures on your cheap smartphone. You have social media and you are connected to people who can help you move. These technologies are absolutely at the heart of movement.

From internet, Tipu collects information regarding irregular routes to cross national boundaries but people need to have permission from the government in order to cross the borders which have been constrained by the authority of the respective countries. However, in ancient times, such restrictions had not been so strict when people migrated from one country to another.

            Another important issue Ghosh wants to clarify the readers that the systems of the past differ from those of the present as the migrants from India to Venice like Rafi, Tipu and similar expatriates cannot be termed as slaves and they willingly plan to migrate. Here, the author informs us that “the world had changed too much, too fast; the systems that were in control now did not obey any human master; they followed their own imperatives, inscrutable as demons” (Ghosh, 2019, p. 280). In this novel, we find that 21st century Italians are dependent on the labour of the immigrants who have left their birth place deliberately and cross international boundaries to reach economically affluent countries for a secured and improved life.

            In Gun Island, Amitav Ghosh blends ancient myths and legends with the tales of adventurous migrants from various developing countries to explore the endless saga of human migration from diverse developing countries for better future or career.

Alia Rawshan Banu

Senior Lecturer

Daffodil International College