প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

প্রত্যয়যুক্ত শব্দ ও বানান

(পরবর্তী অংশ)

০৫. -স্ত/-স্থ

ত্রাস > ত্রস্তসন্ত্রাস > সন্ত্রস্ত (− জনপদ)
গ্রাস > গ্রস্তঅভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, চন্দ্রগ্রস্ত চিন্তাগ্রস্ত, দায়গ্রস্ত, দ্বিধাগ্রস্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত, নেশাগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত, মোহগ্রস্ত, ভূতগ্রস্ত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, রাহুগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত
স্থ বা স্থিতঅন্তঃস্থ (− বর্ণ), বহিস্থ, আত্মস্থ, আতঙ্কগ্রস্ত, উদরস্থ, উপরস্থ/উপরিস্থ,   কণ্ঠস্থ, মুখস্থ, গৃহস্থ , ঢাকাস্থ, তটস্থ, দ্বারস্থ, ধাতস্থ,  ধ্যানস্থ, নিকটস্থ, দূরস্থ, পকেটস্থ, প্রকৃতিস্থ,  পদস্থ, পাত্রস্থ, পার্শ্বস্থ (দক্ষিণ− ), ভবনস্থ, ভূগর্ভস্থ, মঞ্চস্থ, মনস্থ, মধ্যস্থ,   সম্মুখস্থ, সমাধিস্থ  

উল্লেখ্য, ‘অধীনস্থ‘ নয়− ‘অধীন’ শুদ্ধ । আরও উল্লেখ্য, ‘দুস্থ’ ও ‘‘সুস্থ’ শুদ্ধ।

আরও উদাহরণ –

‘স্থ’ নয়− ‘স্ত‘ 

অস্ত (সূর্যাস্ত), আস্ত (− রোস্ট), ন্যস্ত, ব্যস্তসমস্ত, ব্যতিব্যস্ত, পোস্ত (-গোলা), সাব্যস্ত।

বিশেষ্য > বিশেষণ:

অভ্যাস > অভ্যস্ত, আশ্বাস > আশ্বস্ত, বিন্যাস > বিন্যস্ত, বিশ্বাস > বিশ্বস্ত, বিধ্বংস > বিধ্বস্ত, বিস্রংস > বিস্রস্ত (− বেশভূষা), নিবৃত্ত > নিরস্ত, পরাহত > পরাস্ত।

বিপরীত শব্দ:

অস্তি – নাস্তি, নিন্দা – প্রশস্তি, স্বস্তি – অস্বস্তি, সংকীর্ণ – প্রশস্ত। কিন্তু দৈর্ঘ্য – প্রস্থ।

বিদেশি শব্দ:

দরখাস্ত (ফা.), বরখাস্ত (ফা.) ।  

০৬. ‘স্থান’ নয় – ‘স্তান’

‘গুলিস্থান’ নয়− ‘গুলিস্তান’ । তদ্রূপ, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কিস্তান, পাকিস্তান।

০৭. মতুপ্ > মান। যথা:

প্রবাহ– প্রবহমান (− নদী), বিকাশ− বিকশমান (− নগর), বিবাদ– বিবদমান (− দুপক্ষ)।

আরও উদাহরণ: -ইত

উচ্ছ্বাস – উচ্ছ্বসিত, উল্লাস – উল্লসিত। কিন্তু উদ্ভাস – ‘উদ্ভাসিত’ শুদ্ধ।

কতিপয় প্রত্যয়যুক্ত শব্দের শুদ্ধরূপ:

 উদ্-√গৃ+ অন (অনট) = উদগিরণ

 ব্যবহার + ইক = ব্যাবহারিক

 প্রশাসন + ইক = প্রাশাসনিক

 গড্ডল + ইকা = গড্ডলিকা (− প্রবাহ)

 অভ্যন্তর + ঈন = অভ্যন্তরীণ (− সড়ক)

 সর্বাঙ্গ + ঈন = সর্বাঙ্গীণ

 বর্ষ + ঈয়সী =বর্ষীয়সী (− নারী)

 বহু + ঈয়সী = ভূয়সী (− প্রশংসা)

 মহী + ঈয়সী = মহীয়সী (− নারী)

√জাগৃ + ঊক = জাগরূক (স্মৃতি −)

√রুজ্ + ত (ক্ত) = রুগ্ণ (− প্রতিষ্ঠান)

 পশ্চাৎ + ত্য (ত্যণ) = পাশ্চাত্ত্য (−দর্শন )

 প্রতিযোগী + নী = প্রতিযোগিনী

টীকা:  অভিধানমতে, ‘সৌহার্দ্’/‘সৌহার্দ্য’ শুদ্ধ।

কতিপয় প্রত্যয়যুক্ত শব্দে শিষ্ট কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয়। যথা:

ক. স্বরসঙ্গতির নিয়মে সিদ্ধ−

√চির্ + অনি = চিরনি >চিরুনি (− অভিযান)

√রাধ্ + অনি = রাঁধনি > রাঁধুনি

√জি + অন্ত = জিয়ন্ত > জ্যান্ত (− পুঁটিমাছ)

√উড়্ + আকু = উড়াকু >উড়ুক্কু  

√কুড়্ + আনি = কুড়ানি >কুড়ুনি (ঝিনুক-)

ঠাকুর + আনি = ঠাকুরানি > ঠাকরুন (দিদি-)

ডেঁপো + আমি = ডেঁপোমি

লাঠি + আল = লাঠিয়াল > লেঠেল  

ঝাঁঝ + আল = ঝাঁঝাল > ঝাঁঝালো (− রোদ)

ধার + আল = ধারাল > ধারালো (− ছুরি)

√খা + উকা = খাউকা > খেকো (ভূমি-, নদী-)

√খা + উয়া = খাউয়া> খেয়ো (-খেয়ি)

আধ + উলি = আধুলি > আধলি

বই + ওয়ালা = বইওয়ালা > বইঅলা (− পলান সরকার)

ধুন + চি = ধুনচি > ধুনুচি।

খ. অভিশ্রুতির নিয়মে সিদ্ধ−

মূলশব্দ >অপিনিহিতি > অভিশ্রুতি
√কাঁদ্ + ইয়া = কাঁদিয়া > √শুন্ + ইয়া + শুনিয়া > জাল + ইয়া = জালিয়া > মাটি + ইয়া = মাটিয়া > গাছ +উয়া = গাছুয়া > মাছ + উয়া = মাছুয়া > ভূত + উড়িয়া = ভূতুড়িয়া>. অদ্ভুত + উড়িয়া = অদ্ভুতুড়িয়া ছিঁচ + কিয়া = ছিঁচকিয়া > পুঁচ + কিয়া = পুঁচকিয়া > বখা + টিয়া = বখাটিয়া > ভাড়া + টিয়া = ভাড়াটিয়া > আলি + সা = আলিসা > পানি + সা = পানিসা >কাঁইদ্যা >  কেঁদে শুইন্যা > শুনে জাইল্যা > জেলে (-পাড়া) মাইট্যা > মেটে ( হাঁড়ি) গাউছ্যা > গেছো (− সাপ) মাউছ্যা > মেছো (− কুমির) ভূতুইড়া >  ভূতুড়ে (− বাড়ি) অদ্ভুতুইড়া >  অদ্ভুতুড়ে (– ঘটনা) ছিঁইচকা >  ছিঁচকে (− চোর) পুঁইচকা > পুঁচকে বখাইটা > বখাটে ভাড়াইটা > ভাড়াটে আইলসা > আলসে পাইনসা > পানসে

টীকা:  অৎ + √ভূ + উত = অদ্ভুত।

গ. বিদেশি প্রত্যয়

নল + চা = নলিচা (খোল-) > নলচে

বাগ + চা = বাগিচা (সেগুন-)

বেঙ + চি = বেঙাচি > ব্যাঙাচি

কলম + দানি = কলমদানি > কলমদান

ছাই + দানি = ছাইদানি > ছাইদান

খরিদ + দার = খরিদ্দার > খদ্দের

টেক + সহি = টেকসহি > টেকসই

জুত + সহি = জুতসহি > জুতসই।

উল্লেখ্য, প্রত্যয়যুক্ত বহু শব্দে শিষ্ট কথ্যরূপ ব্যবহৃত হয় এবং তা থেকে এখানে গুটিকয় উদাহরণ দেওয়া হয়েছে মাত্র। আরও উল্লেখ্য, ‘জবাবদিহিতা’ নয়− ‘জবাবদিহি’ শুদ্ধ। ‘ননদি’/‘ননদিনী’ নয়– ‘ননদ’ শুদ্ধ। ‘সচ্চরিত্র’/ ‘চরিত্রবান’ শুদ্ধ।

মমিনুল হক

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা

Tags: No tags

Comments are closed.