Daffodil College Alumni Students(Anik Halder)

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এ ইলেকট্রনিকস এন্ড টেলিকমউনিকেসন বিভাগে আমাদের অনিক হালদার

অনিক হালদার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সে ২০১৭ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এ ইলেকট্রনিকস এন্ড টেলিকমউনিকেসন (ETE) বিভাগে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছে।
আমাদের গল্পের দশম পর্বে অনিক হালদার তার স্মৃতিচারণ করেছে এভাবেই –

স্কুলে থাকাকালীন সময়ই চিন্তা ছিলো ঢাকায় কোনো কলেজে ভর্তি হব। বড় ভাই ড্যাফোডিল কলেজে পড়াশোনা করায় ভর্তি হলাম ড্যাফোডিল কলেজেই। কলেজের সব শিক্ষকবৃন্দ প্রথম থেকেই ভালো করে চিনতো এবং সকলেই অনেক স্নেহ করতেন। কলেজের সকল শিক্ষকবৃন্দ খুবই আন্তরিক ছিলেন, সকলেই খুব যত্নসহকারে পড়াতেন। পড়াশোনার কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে কলেজ ছুটির পরেও শিক্ষকদের কাছে গেলে তারা সময় নিয়ে বুঝিয়ে দিতেন ৷ কলেজে পড়াকালীন ইন্জিনিয়ারিং – এ পড়ার চিন্তা মাথায় ছিলো। সেই চিন্তা নিয়েই পড়াশোনা করে যাচ্ছিলাম। দেখতে দেখতে এইচ এস সি পরীক্ষা চলে আসলো। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর, ইন্জিনিয়ারিং ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করলাম। প্রায় দুইমাস পর এইচ এস সি রেজাল্ট হলো; অল্পের জন্য এ+ পেলাম না তখন, ভাবলাম হয়তো আর ইন্জিনিয়ারিং পড়া হবেনা।

কয়েকদিন মন খারাপ ছিল কিন্তু এভাবে তো জীবন চলবে না; তাই ভালমত পড়াশোনা শুরু করলাম আর ভাবলাম, যেভাবেই হোক ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে। 

কিছুদিন পর সার্কুলারে দেখলাম বুয়েট ছাড়া বাকি সব ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিগুলোতে পরীক্ষা দিতে পারবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্ট হলো কিন্তু পজিশন ভাল না। রাজশাহীতে গেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকলাম, সকালে উঠে পরীক্ষা দিলাম। তারপরদিন আরো একটা ইউনিট এ পরীক্ষা দিয়ে কলেজর বন্ধু কামরুল সহ আরো কয়েকজন চলে গেলাম পাবনার উদ্দেশ্য। পরদিন বিকেলে পরীক্ষা দেওয়ার পর সন্ধ্যার পরপর ঈশ্বরদী স্টেশনে চলে আসলাম ঢাকা আসবো বলে, ঐ দিন বাসের কোনো টিকিট ছিলোনা তাই ট্রেনই ছিলো একমাত্র ভরসা। স্টেশনে এসে কোনো টিকিট না পাওয়ায় রাতে স্ট্যান্ডিং টিকেট কাটলাম। সেই রাতটি ছিল আামার জীবনে স্মৃতিময় একটি রাত। স্টেশনে আসার পর দুই-তিন জনের সাথে পরিচয় হলো। ট্রেন আসার কথা রাত ১১ টায় হলেও ট্রেন আসলো রাত ১ টার পর। যাদের সাথে স্টেশনে পরিচয় হলো তাদের সাথে আমরা ট্রেনে উঠলাম। উঠার পর দেখলাম পুরো বগি ভরা এডমিশন ক্যান্ডিডেট।  একজন দুইজন করে ১০-১২ জনের একটা সার্কেল হয়ে গেলো।  পুরোরাত সকলে গল্প গুজব করে কাটিয়ে দিলাম। একদল অচেনা মানুষের সাথে এতো সুন্দর একটা রাত পার হবে সেটা কল্পনার বাইরে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট হলো সেখানে মেরিট লিস্টে নাম দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম তখনো রুয়েট এর পরীক্ষা হয়নি। কিছুদিন পর আবার রাজশাহীতে গেলাম রুয়েট এর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পরীক্ষা দিয়ে মনে হলো হয়তো ভাল পজিশন আসবে। দুপুরেই বাসে উঠলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। দুপুর থেকে প্রায় ভোর পর্যন্ত বাসেই কাটে গেল। রুয়েট এর রেজাল্ট দিলো, মনের ভিতর কিছুটা সংশয় নিয়ে রেজাল্ট দেখতে ঢুকলাম। পজিশন দেখে মনে হলো হয়তো ইন্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পারব। সেই মুহূর্তের অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবেনা। তার কয়েকদিন পর ভর্তির জন্য ডাক পড়ল। সব কাগজ এবং কিছু মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ভর্তি হতে গেলাম। ভর্তির পর মনে হলো মাথা থেকে ভারী বোঝাটা নামল। ভর্তির পর বিকেলে একটা মেস ঠিক করে তার পরদিন ঢাকায় ফিরে আসলাম।

এক মাস পর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার ডেট পেলাম। এক মাস দেখতে দেখতে কেটে গেল। পরিবার থেকে অনেক দূরে যাচ্ছি এই নিয়ে মনে সংশয় ছিলো, কিভাবে সবার সাথে মানিয়ে উঠবো! এই সংশয় নিয়ে পরদিন সকালে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তারপরের দিন ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে চলে গেলাম। সেখানে আমার নিজের ডিপার্টমেন্টের কয়েকজনের সাথে পরিচয় হল। পরদিন সকালে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। প্রথম ক্লাসে সব শিক্ষক আমাদের সবার পরিচয় নিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনেক ধারণা এবং কিছু উপদেশ দিলেন। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, সবার সাথে মানিয়ে চলা শুরু করলাম। নতুন শহরে ঘুরাঘুরি এবং সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে দিন কাটতে লাগল। দেখতে দেখতেই পায় প্রথম সেমিস্টার এক্সাম চলে আসলো। প্রথম সেমিস্টারের ফিজিক্স ল্যাব পরীক্ষা নিয়ে বেশ ভয়ে ছিলাম। বোর্ড ভাইভা ছিল নতুন আরেক অভিজ্ঞতা। আস্তে আস্তে সবকিছুতে মানিয়ে উঠলাম। প্রায় দেড় বছর পর একটা টিউশন ম্যানেজ করলাম। এভাবেই  চলতে থাকলো জীবন। ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে আছে। সকলে দোয়া করবেন যাতে, আমি আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারি।

Comments are closed.