
ভাষা
- Apr 26, 2025
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়েই তোমরা মুখোমুখি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক যুদ্ধের — এটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী একটাই লক্ষ্য নিয়ে নামে — একটি ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য। একটি মাত্র আসনের জন্য প্রতিযোগিতা করে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী, দিন-রাতের পরিশ্রম আর স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে — এই প্রতিযোগিতা কেন? এর পেছনে এত শ্রম, এত প্রস্তুতি কেন প্রয়োজন?
কারণ, একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ তোমার ভবিষ্যৎ গঠনে, ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় এবং চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিতে পারে। একটি মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল পাঠদানই নয়, বরং তোমার চিন্তাধারার জগৎকে প্রসারিত করে, বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তোমাকে একজন দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
এই যাত্রা কঠিন হতে পারে, তবে এটি সম্ভব। প্রয়োজন শুধু লক্ষ্য ঠিক রাখা, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস। সামনে যে যুদ্ধ, তা জয়ের জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু করো — কারণ এটি শুধুই একটি পরীক্ষা নয়, এটি তোমার স্বপ্নের পথে প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ।
একটি ইট কখনোই দূর থেকে চোখে পড়ে না। কিন্তু সেই ইটগুলো একে একে জোড়া লাগিয়ে যখন একটি বিল্ডিং তৈরি হয়, তখন সেটিই সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। মানুষের সফলতাও তেমনি — তা একদিনে গড়ে ওঠে না। প্রতিটি দিন, প্রতিটি শ্রম, প্রতিটি অধ্যবসায় এক একটি ইটের মতো, যা মিলেই তৈরি করে সফলতার ভবন।
তোমার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই বছর হলো সেই ইট সাজানোর সময়। তুমি এই সময়ে কতটা ইফোর্ট দিয়ে, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছো — ঠিক সেটিই নির্ধারণ করবে তুমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে কি না।
💡 ভর্তি পরীক্ষায় মোট নম্বর বণ্টন: ১২০
📌 ২০ নম্বর নির্ধারিত হয় তোমার SSC ও HSC GPA থেকে
– ১০% SSC GPA
– ১০% HSC GPA
📌 বাকি ১০০ নম্বর নির্ধারিত হয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে , যেখানে তোমার প্রস্তুতি, মেধা ও আত্মবিশ্বাসের প্রকৃত পরীক্ষা হয়।
তাই আজকের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি অধ্যায়, প্রতিটি চেষ্টাই তোমার ভবিষ্যতের ভিত্তি। মনে রেখো, ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে বর্তমানের পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ওপর।
👉 এখনই সময় তোমার সেই “ইট” গুলো ঠিকভাবে সাজানোর — যাতে তোমার সাফল্যের ভবন একদিন দূর থেকেও সবার চোখে পড়ে।
তাই এখনই সময় — সময় নষ্ট না করে, প্রতিটি দিনকে কাজে লাগানোর। আরাম আয়েশ আর অর্জন কখনো একসঙ্গে চলে না। অলসতা কখনোই সফলতার বন্ধু হতে পারে না। সফলতার চারা গাছ দেখতে চাইলে, তোমাকে চেষ্টার বীজ বুনতেই হবে। যোগ্যতা দিয়ে নয়, মানুষ বিচার হয় তার অর্জন দিয়ে। কারণ — “অর্জনই গর্জন।” তাই মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে, তোমাকে অর্জনের প্রক্রিয়ায় ঢুকতেই হবে। “সাকসেস” হওয়ার জন্য শর্টকাট নেই। জীবনে সফল হতে চাইলে মোবাইল নামক ঢিলামির বাক্সে বন্দী থাকা যাবে না।
নিজেকে প্রতিদিনই সাহস দিতে হবে, নিজের উপর জোর করে হলেও প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে। সময় গড়াবে, ক্যালেন্ডারের পাতা ওলটাবে, আর এক সময় হিসেব হবে — তুমি পেলেই বা কতটুকু, হারালে কী কী!
এই দুই বছর বেশি উপভোগ করতে গিয়ে যেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টা অনুশোচনায় না হারিয়ে যায় — সেই ব্যাপারেও থাকতে হবে সজাগ।
“আজ না, কাল পড়তে বসবো”,
“আমার তো ভালো করে পড়া উচিত” —
এই ভাবনা আমাদের সবার মনেই আসে। কিন্তু পার্থক্যটা তৈরি হয়- কে সেই চিন্তাটার উপর অ্যাকশন নেয় আর কে শুধু ভাবনার মধ্যেই আটকে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ সফল হয় না, কারণ তারা যাত্রাই শুরু করে না। তাই তোমাদের বলি — আর দেরি নয়, এখনই শুরু করো। প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাও, কারণ সময় চলে গেলে তা আর ফিরে আসে না। প্রতিদিন সময় নষ্ট করার সুযোগ যত বাড়বে, প্রোক্রাস্টিনেশন বা কাজ ফেলে রাখার প্রবণতাও তত বাড়বে।
একটা সহজ সমাধান —
👉 পড়তে বসার সময় মোবাইলকে অন্তত ৩ ঘণ্টা পাশে না রাখলে কোনো ক্ষতি হবে না।
👉 কয়েক ঘণ্টা মোবাইল না থাকলে পৃথিবী বদলে যাবে না।
তোমার লক্ষ্য যদি সত্যিই বড় হয়, তাহলে 📱 মোবাইল নয়, 📘 পড়াশোনাই সবচেয়ে জরুরি।
যতক্ষণ না তুমি মোবাইলকে নিয়ন্ত্রণ করবে,
ততক্ষণ মোবাইল তোমার ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
যদি তুমি মোবাইলের ব্যবহার সীমিত রাখতে পারো, তাহলে দেখবে — তুমি তোমার লক্ষ্যের পেছনে ক্লান্তিহীনভাবে লেগে থাকতে পারছো। এটাই হবে তোমার বড় জয়ের সূচনা।
বর্তমানে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হলেন সুন্দর পিচাই । তিনি ভারতের তামিলনাড়ুর একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন। দুই রুমের একটি ছোট এপার্টমেন্টে বাবা-মা ও ছোট ভাইসহ চার সদস্যের পরিবারে তার শৈশব কেটেছে। সেই সময় তাদের একটি ল্যাপটপ তো দূরের কথা, একটি মোবাইল ফোন কেনার সামর্থ্যও ছিল না।
সুন্দর পিচাই মেধার জোরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিমান টিকিট কেনার অর্থও তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। তখন তার বাবা-মা পরিবারের সঞ্চিত অর্থ এবং এক বছরের মোট আয়ের চেয়েও বেশি অর্থ ঋণ নিয়ে সেই টিকিটের ব্যবস্থা করেন।
আজ সেই মানুষটির বাৎসরিক বেতন ভারতীয় মুদ্রায় ১,৮৮৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা । এ থেকেই বোঝা যায়, পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
"যার প্রয়োজনের আকাঙ্ক্ষা যত বেশি, তার আলসেমি ও অজুহাত তত কম।"
নদীর স্রোত কাউকে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে দেয় না — স্রোত তো সাগরে ভাসায়। সফল হতে হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আনন্দ আর পরিশ্রমের মাঝে সঠিক ভারসাম্য রেখে এগোতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা — মেধাবীরা হেরে যেতে পারে, কিন্তু পরিশ্রমীরা কখনোই হার মানে না। সঠিক পথে থেকে মনোযোগ ও পরিশ্রমের সাথে এগিয়ে চললে সফলতা আসবেই, ইনশাআল্লাহ।
শুভকামনা রইলো তোমাদের স্বপ্ন পূরণের পথে। সাফল্যের এই পথে প্রতিটি পদক্ষেপ হোক দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী ও অর্থবহ।