মধুর চেয়ে কল্যাণময় দ্রব্য এই বিশ্বমন্ডলে আর নেই। মধু মিষ্টি ,আধা ঘন পদার্থ,বিভিন্ন রকমের শর্করার এক দ্রবন বিশেষ , যার বর্ন গাঢ় বাদামী থেকে হলুদ হয়ে থাকে। মৌমাছি ফুল থেকে সংগৃহীত রস থেকে মধু তৈরি করে এবং তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করে। মধুর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা নিজে কখনও পচে না এবং অন্য জিনিসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত পচন থেকে সংরক্ষিত রাখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আনুমানিক চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসকরা মধুর সাথে গ্রীজ ও নরম কাপড় মিশিয়ে এক প্রকার মলম বানিয়ে রোগ নিরাময়ে এক সাড়া জাগানো ঔষধ প্রস্তুুতের সূচনা করেন।

আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধুকে “সিফাউন লিন্ন্াস অর্থাৎ এতে মানুষের জন্য রয়েছে নিরাময়” ঘোষনা করে রোগ ব্যাধির মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার পথ নির্দেশ করেছেন। আরও বলা হয়েছে ’ আর দেখ তোমার রব  মৌমাছিদের এ কথা ওহির মাধ্যমে বলে দিয়েছেন, তোমার পাহাড়পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মান করো । তারপর সব রকমের ফলের রস চোষো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো ।

প্রান চঞ্চল প্রকৃতির রাজ্যে গুনগুন শব্দ তোলা ছন্দ বিধুর এ পতঙ্গটির একমাত্র উপহার মধু। মধু শুধু আদর্শ খাদ্যই নয়, মধু একটি মহৌষধ, যার গুন বহুমুখি।

মধুর ব্যবহারঃ  
১. রোগ নিরাময়ে মধু সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়।
২. শিশুদের বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়া সব বাবা মায়ের পক্ষেই সম্ভব হয় না, সে প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী ডাঃ এফ ডবিøউ সাফল বলেছেন” শিশুর কচিদেহে রক্ত বর্ধক হিসাবে মধুর তুলনা হয় না । মধু সস্তা সহজ পাচ্য, শিশুর বদ হজম হয় না, ডায়রিয়া হয় না । ফলে ওজন বাড়ে। শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদানের দরকার তার সবটুকু মধুতে আছে। কাশি ও কফের জন্য শিশুদের যত ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ঔষধ মধু ।
৩. মধু পোড়া ,কাটা ও ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্যে করে।
৪. মধু হৃদরোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিখ্যাত পুষ্টি বিজ্ঞানী ডঃ আরনল্ড লোরান্ড বলেছেন ,ইঞ্জিনের শক্তি যেমন পেট্রল, তেমনি হৃদযন্ত্রের শক্তি তেমনি মধু। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ- জার্মান ডাঃ ই কচ বলেন, একটি দুর্বল ঘোড়াকে যদি উপযুক্ত পরিমানে খাদ্য সরবরাহ করা হয় , তাহলে অল্প দিনের মধ্যে সে একটি দুর্দান্ত তেজি ঘোড়ায় পরিনত হবে । ঠিক তদ্রুপ হার্টের জন্য পুষ্টিকর ও উত্তেজক উপাদান হচ্ছে মধু ।
৫. ডায়াবেটিস নিরাময়ে ও মধু ব্যবহৃত হয় ।
৬. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত –হাদিসে বলা হয়েছে,রাসুলুল্লার (সাঃ) কাছে, মধু অত্যন্তÍ প্রিয় ছিল। তিনি এর ব্যখ্যায় উল্লেখ করেন হুজর (সাঃ) এর কাছে মধু এ কারনে প্রিয় ছিল যে, আল্লাহতালা বলেছেন, এতে প্রতিষেধক আছে। মধুর নিরাময় ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি নিমোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন মধু  বাসি পেটে খেলে - শ্লেষ্মা দূর হয়, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, মস্তিষ্ক শক্তিশালী হয়। 

পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর অন্যতম সমাজ বদ্ধ পতঙ্গ মৌমাছি একটি অর্থকারী প্রানী হিসাবে সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে, আর এই পতঙ্গ থেকেই আমরা মধু পাই। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, মধু নিজেই একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ । মধুসংক্রান্ত এ জাতীয় গবেষণা এক দিকে অসুস্থ মানব গোষ্ঠির জন্য বয়ে আনবে নতুন আশার আলো, অন্য দিকে সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে মানুষের এ গবেষনামুখী কর্মতৎপরতা তার জন্য বয়ে আনবে আন্তিক প্রশান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি। সে জন্য আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হেকিমি শাস্ত্র্রে সেসব বিষয়ে গবেষনা শুরু হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সিন্ধুর কাছে বিন্দু বইকি।

লিখেছেনঃ মিস নিলুফা ইয়াসমিন,  সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান
 

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কর আমরা সবাই জানি, এটা জেনেও আমরা ধুমপান করি। ধুমপানের কারনে যে ক্ষতি হয় সেটি হয় খুব ধীর গতিতে এবং শরীরের ভিতরে হয়, এজন্য আমরা এর ক্ষতিটা খুব একটা বুঝতে পারি না। ধুমপানের কারনে  শুধু যে আমি মিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তা না, আমার আশেপাশে যারা আছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন- আমি আমার সন্তানকে আমার জীবনের চেয়েও ভালোবাসি , অথচ আমি জানিনা আমার আদরের সোনামনির কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ধুমপান করার কারনে। অনেক সময় অনেক বাচ্চা নিউমোনিয়া  নিয়ে জন্মগ্রহণ  করে, বেশিরভাগ বাচ্চার  এই রোগের কারন ধুমপান করা  বাবা, এটা অনেক পরিসংখ্যানে বেরিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, বাচ্চাদের ফুসফুসের সমস্যা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি এই কারণে  নানাবিধ সমস্যাও হয়।

আমরা যারা মুসলমান  তাদের জন্য ধুমপান করা হারাম। ( সূরা আরাফ এর ১৯৭ আয়াত) এবং কবিরা গুনাহ (কারন আমরা এটা  প্রতিনিয়ত করছি, অনেকে আবার বলেন আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি আল্লাহ আমাকে  মাফ করবেন, হাঁ আল্লাহ কাকে কি দিয়ে মাফ করবেন সেটি মহান আল্লাহ তালাই যানেন। তবে সালাত আদায় করলে সেটি আমাদের পূণ্যের পাল্লায় যাবে, আর ধূমপান গুনাহ এর পাল্লায় যাবে। তবে গুনাহের কাজ করলে মানুষ ধীরে ধীরে সেদিকে ধাবিত হয় এবং পূণ্যের কাজ ছেড়ে দেয়।
 

আমরা যারা ধুমপান করি, ধূমপানের ফলে এগুলো দেহের ভিতরে বিশেষ করে প্রবেশ করে। দেহকে  অসুস্থ করতে শুরু করে  । সিগারেটের যে রাসায়নিক উপাদান  থাকে তার মধ্যে নিকোটিন, আর্সেনিক, মিথেন, অ্যামোনিয়া, কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ইত্যাদি প্রধান। একজন অধুমপায়ী যে কাজ চটজলদি করতে পারে, সে কাজ ধূমপায়ীর জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য  ও সময় সাপেক্ষ প্রমানিত হয়। ধূমপানের কারনে COPD রোগ হয়। এটি ফুসফুসের রোগ যারা সাধারনত এই রোগটি সম্পর্কে যানেন না, যারা ধূমপান করেন তারা  সাধারণত এই রোগটি সম্পর্কে জানেনা তারা যদি জানতেন অবশ্যই এটি ছেড়ে দিতেন অনেকের ধারণা ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হয়, এটি সত্য কথা কিন্তু তার চেয়ে মারাত্মক রোগ হলো COPD।

COPD-২০২০ সালে, তিন নম্বরে উঠে  এসেছে , এটি মারণ ব্যাধি  এবং এটি সৃষ্টি হয় ধূমপানের কারণে।  এটি  চিকিৎসায় ভাল হয় না, এটি  হলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে, এটি সিস্টেমিক  ডিজিজ, এটির কারণে শরীরের সব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে পানি চলে আসে হার্ট অ্যাটাক হয়, হার্ট ফেইলার, স্ট্রোক হয়, ক্যান্সার  হয়।

আসুন আমরা সবাই, ধুমপান পরিহার করি, COPD থেকে মুক্ত  থাকি, নিজের জীবনকে ভালবাসি।

 

লিখেছেনঃ মিস নিলুফা ইয়াসমিন,  সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান

সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে

এর জন্য দায়ী কে?

-বাবা না মা !


আমাদের সমাজসংসারে প্রচলিত আছে, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবার জন্য দায়ী মা। এই প্রচলিত

কথাটা মোটেই সত্য নয়। আসল সত্য টা না জানায় অনেক মাকে সংসার ত্যাগ করতে হয়,

মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, এমন কি অনেক মাকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। অথচ

আসল সত্য টা হলো যে, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবার জন্য দায়ী বাবা, মা নয়।

আমাদের বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তাই এই কথাটা যদি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম এবং দৈনিক পত্রিকায় বেশি বেশি সরকারীভাবে প্রচার করা হয়, তাহলে আমাদের মায়েরা এই নির্মম অসত্য থেকে মুক্তি পাবে।


সন্তান ছেলে হবার জন্য যে বাবা দায়ী এই নির্মম সত্যির আমি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিচ্ছি- 


মানুষের প্রতিকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে, এর মধ্যে ২২ জোড়া নারী ও পুরুষ উভয় সদস্যে একই রকম, সেগুলোকে বলা হয় অটোজোম। ১ জোড়া ক্রোমোজোম নারী ও পুরুষ

সদস্যে আলাদা, এদেরকে বলা হয় সেক্স ক্রোমোজোম। নারীসদস্যে যেসব গ্যামেট তৈরি হয়

তাতে শুধু X ক্রোমোজোম থাকে, এ কারণে নারীকে হোমোগ্যামেটিক (XX) বলে। পুরুষ

সদস্যে দু ধরনের গ্যামেট তৈরি হয়, এক ধরনের গ্যামেটে থাকে X ক্রোমোজোম এবং অন্য 

গ্যামেটে  থাকে Y ক্রোমোজোম, পুরুষকে তাই হেটারোগ্যামেটিক (XY) বলে। স্ত্রী শুধুমাত্র

এক ধরনের ডিম্বাণু (X) উৎপন্ন করে। কিন্তু পুরুষ ২ ধরনের শুক্রাণু (X এবং Y) উৎপন্ন

করে। যখন X বাহী ডিম্বাণুর সাথে X বাহী শুক্রাণুর মিলন হবে, তখন সন্তান হবে কন্যা (XX) এবং যখন X ডিম্বানুর সাথে Y বাহী শুক্রাণুর মিলন হবে, তখন সন্তান হবে ছেলে (XY)।


এই ব্যাখ্যা থেকে আমরা আরও স্বচ্ছ ধারণা নিলাম যে, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবার জন্য দায়ী বাবা।

 

লিখেছেনঃ মিস নিলুফা ইয়াসমিন,  সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান


 

কলা আপেলের চেয়ে দামি বাজারে আপেলের দাম বেশি কলার দাম কম, কিন্তু কলার পুষ্টিগুন আপেলের দ্বিগুন যেমন- আপেলে যে পরিমান প্রোটিন আছে তার চেয়ে চার গুন বেশি প্রোটিন কলায় আছে। এছাড়াও কলার- কাবোর্হাইড্রেই আছে। দ্বিগুন ফসফরাস আছে তিনগুন ভিটামিন ‘এ’ও আয়রন আছে। পাঁচগুন, এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে এজন্য কলা আপেলের চেয়ে দামি। 

 

* শক্তি জোগাতে কলা-
কলার সুক্রোজ, ফ্রুরেষ্টিজ ও গ্লুকোজ তিন ধরনের প্রাকৃতিক সুগার আছে এবং প্রচুর পরিমানে আঁশ পাওয়া যায়। খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই শক্তি পাওয়া যায়।

* হতাশগ্রস্ত মানুষের জন্য কলার ম্যাজিক - অধিকাংশ মানুষই হতাশায় ভোগেন, তাদের জন্য সুখবর হলো, এ হতাশ দুর করার জন্য কলার জুড়ি নাই, কলায় আছে ট্রিপটোফ্যান নামক প্রোটিন, যা ম্যাজিকের মতো হতাশা দূর করে। রক্তশূন্যতা থেকে পরিত্রান— আমাদের বিশেষ করে মেয়েদের হিমোগ্লোবিনের পরিমান অনেকেরই কম থাকে  অনেক সময় রক্তশূন্যতা তা দেখা দেয়, যাকে অ্যানিমিয় বলে, এটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা আয়রন ট্যাবলেট খাই, যদি প্রতিদিন একটি করে কলা খাই তাহলে এ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

* বুক জ্বালাপোড়ায়— অনেক সময় হঠাৎ বুক জ্বালাপোড়া শুরু হয়, বুক থেকে শুরু হলেও এক সময় ঘাড়, গলা চোয়ালের কোনে কোনে ছাড়িয়ে পড়ে রোগটির নাম হার্টবার্ন, হার্টবার্ন হলে আমরা অ্যান্টিসিড জাতীয় ঔষধ সেবন করি। যদি আমরা ঔষধ না খেয়ে কলা খাই তাহলেই রক্ষা পাই কারন কলা অ্যান্টিসিড ইজেক্ট তৈরি করে।

* আঘাত থেকে সুরক্ষা মানুষ কোন কারনে আঘাত প্রাপ্ত হলে শরীরের বিপাকীয় হার বেড়ে যায় ফলে শরীরের পটাশিয়াম লেভেলটা ও কমতে থাকে। কলায় প্রচুর পটাশিয়াম আছে যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাজতে ও পটাশিয়ামের লেভেল ঠিক রাখতে সাহয্য করে।

আসলে ফল আল্লাহর নিয়ামত প্রত্যেকটা ফলের মধ্যেই আল্লাহ তাআলা পুষ্টিগুন দিয়েছেন যা তার সৃষ্টির সেরা জীব অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাতের জন্য রোগ নিরাময়ের মহাঔষধ। 

লিখেছেনঃ মিস নিলুফা ইয়াসমিন,  সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান
 

চাকরিদাতা, সফল উদ্যোক্তা পেশা পরামর্শকদের কথায় ইদানীং বারবার ঘুরেফিরে আসে ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ বা ‘যোগাযোগ–দক্ষতা’র কথা। যে পেশাই আমরা বেছে নেন না কেন, এ বিষয়ে দক্ষ আমাদের হতেই হবে। তাই এ জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো আমাদের ছাত্রজীবন। কিভাবে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারি, সে ধারাবাহিক কিছু কথা।

বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখুনঃ- কেউ ভালো লেখেন, কেউ ভালো বলেন, কেউ ভালো শ্রোতা, কেউবা দারুণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানেন (প্রেজেন্টেশন দেন)। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য সব রকমের যোগাযোগেই নিজেকে সাবলীল ও দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে বলা ও লেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো কিছু বুঝে পড়া এবং মন দিয়ে শোনাও খুব জরুরি। আপনি যা বলছেন, তা আরেকজন বুঝতে পারছে কি না, কিংবা আপনি অন্যের কথা বুঝতে পারছেন কি না—দুটিই যোগাযোগ–দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।

অনেক পড়তে হবেঃ- আমরা খুব সরলভাবে বলে পারি, যাঁরা অনেক পড়েন, তাঁরা অনেক বিষয় সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। কাগুজে বই-সাময়িকী-সংবাদপত্র হোক, কিংবা ইন্টারনেটে ই-পত্রিকা, ই-সাময়িকী বা পেশা- বিজ্ঞান – ব্যবসাবিষয়ক কোনো পোর্টালই হোক না কেন, নিয়মিত চোখ রাখলে সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। “যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য যখনই কোনো লেখা পড়ছেন, মাথায় ‘ফাইভ ডব্লিউ-এইচ’ নামের সূত্রটি গেঁথে নিতে হবে। ফাইভ ডব্লিউ-এইচ হলো হু, হোয়াট, হোয়্যার, হোয়েন, হোয়াই ও হাউ”। লেখাটি লেখক কেন লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, আপনি লিখলে কীভাবে লিখতেন—এসব মাথায় দ্রুত এঁকে ফেলতে হবে। যত বেশি পড়বেন, যত জানবেন, কথা বলার সময় আপনি তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। জানার ঘাটতি থাকলে বুঝিয়ে বলা ও শুনে বোঝা—দুটি কাজই কঠিন হয়ে যায়।

অনুসরণ করতে হবেঃ যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বক্তৃতা (পাবলিক স্পিকিং) বা নিজের ভাবনা উপস্থাপন করার (প্রেজেন্টেশন) কৌশল জানতে হবে। আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চাইলে যেকোনো বিখ্যাত ব্যক্তির কৌশলগুলো সহজে অনুসরণ করতে পারেন। ইউটিউবে পৃথিবীখ্যাত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন স্পিকারের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন। এ ছাড়া পড়তে পারেন ক্রিস অ্যান্ডারসনের লেখা টেড টক: দ্য অফিশিয়াল টেড গাইড টু পাবলিক স্পিকিং। এছাড়াও আমাদের দেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান এবিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কোর্স চালু করেছে। তাই চাইলে সেখানে আপনি আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোর্স গুলো করতে পারেন। তবে অবশ্যই কোর্স করার পূর্বে কোর্স প্রদান কারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোকরে খোঁজ নিবেন। এটি বাংলা প্রবাদ প্রচলিত আছে, “চকচক করলেই সোনা হয় না”

লেখা: মহিউদ্দিন সুমন

প্রভাষক, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ঢাকা



 

মহিষ একটি অতি পরিচিত প্রাণী। সবাই কমবেশি তাকে চিনে, চেহারায় না চিনলেও কথায় কথায় সবাই মহিষের নাম বলে যেমন- কারও চেহারা কালো হলেই সবাি তাকে বলে তুই মহিষের মতো। যার ইংরেজি নাম- Bull বৈজ্ঞানিক নাম - Bos taurus এই প্রাণীটি পানিতে নামলে উঠতে চায় না, এবং আনন্দে মেতে ওঠে। দেখতে কালো হলেও আসলে এর গুন অনেক-   


১. মহিষের দুধ অনেক উপকারী, মহিষের দুধে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা হাড়ের   

    বিকাশের জন্য অধিক দরকারী এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝঁকি কমায়।  

২. ক্যালসিয়াম হাড়ের বিল্ডিং ব্লক হিসাবে পরিচিত, নিয়মিত মাহিষের দুধ পান করলে এর থেকে   

    রেহাই পাওয়া যায়।  

৩. মহিষের দুধে তামা, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস এবং জিঙ্কের মতো অন্যান্য খনিজ পদার্থও থাকে যা   

    হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।  

৪. মহিষের দুধে ঘুমকে প্ররোচিত করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই আপনি যদি রাতে ভালো ঘুম চান   

    এবং যাদের রাতে ঘুম আসে না, তার মহিষের দুধ খেলে এ অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন।  

৫. গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধে প্রোটিন, চর্বি এবং ল্যাকটোজ বেশি থাকে।   

৬.  যাদের ওজন বেশি অর্থাৎ যাদের  স্থুলতা রয়েছে তাদের জন্য মহিষের দুধ খুবই উপকারী, কারন   

     এতে ফ্যাটির চেয়ে বেশি ক্যালোরি রয়েছে।  

৭. মহিষের দুধে পাওয়া যায় মহামূল্যবান ভিটামিন-D যা সচরাচর খুব একট খাবারে পাওয়া   

    যায় না। সাধারণত সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-D প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। ভিটামিন-D হাড়,   

    নার্ভ, মাংসপেশিকে সচল রাখে।  


মহিষের মাংসের উপকারিতা:  

এটি লাল মাংস বা রেডমিট নামে পরিচিত।  

১. গরুর মাংসের চেয়ে ১০% কোলেস্টোরলের পরিমান কম থাকে, তবে আমিষের পরিমান,   

   আয়রনের পরিমান, বি১২ বেশি থাকে, শিশুদের বৃদ্ধিতে এবং মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।  

২. ৭০% কোলেস্টরল কম, চর্বি কম, এলার্জি থাকে না, আয়রন বেশি থাকে যা মানুষের দেহে রক্ত   

    তৈরি ও রক্ত স্বল্পতা দূর করে, লো-প্রেসার দূর করে।  

৩. এতে আয়রনের পরিমান বেশি থাকায় এটি গর্ভবতি মায়েদের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।  

৪. মহিষের মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, কারণ এতে চর্বির পরিমান মাত্র ২ শতাংশ।  

৫. যারা বাতব্যাথার ভয়ে গুরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, তারা নির্ভয়ে এটি খেতে পারেন।  


জাতিসংঘের খাদ্য  ও কৃষি সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিভাগসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, গুণগত মানের দিক থেকে গরুর মাংসের চেয়ে মহিষের মাংস অত্যন্ত স্ব্যাস্থ্য সম্মত।  

পবিত্র কুরআনের সূরা ইয়াসিন আয়াত ৭২ ও ৭৩ নং আয়াতে, আল্লাহতাআলা বলেছেন, আমি চতুষপদী কতকগুলো প্রাণীকে মানুষের বশীভূত করে দিয়েছি, সেগুলো তারা বাহন এবং কতক তারা ভক্ষণ করে, মহিষ চতুষপদী প্রাণী, এটি দ্বারা আমরা গাড়িটানি এবং এর মাংস ও দুধ ভক্ষণ করি, এটি আমাদের জন্য পরিপূর্ণ হালাল একটি প্রাণী- সূরা আল নাহল।  


যারা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে মাংস বাদ দিয়ে দিয়েছেন তারা নির্দ্বিধায় মহিষের মাংস যোগ করতে পারেন।   

আসলে প্রাণী জগতের প্রাণীদের মধ্যে মহিষ একটি  ব্ল্যাক ডায়মন্ড।   

লিখেছেনঃ মিস নিলুফা ইয়াসমিন,  সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান