 (1)-1745993317.webp)
ভাষা
- Apr 26, 2025
ভূমিকা:
আমাদের মন ও মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে, তা নির্ভর করে আমরা কী দেখছি, কী পড়ছি এবং কী নিয়ে চিন্তা করছি তার উপর। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের প্রসারের ফলে আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য তথ্যের সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মানুষের মস্তিষ্ক নেতিবাচক খবরের প্রতি বেশি সংবেদনশীল (হবমধঃরারঃু নরধং)। ফলে আমরা যখন খারাপ খবর, অশালীন কনটেন্ট বা নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় বেশি মনোযোগ দিই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সেসবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে আমাদের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি ও মানসিক শান্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মস্তিষ্কের নিউরন সংযোগ ও নেতিবাচক চিন্তা:
মানব মস্তিষ্কে কোটি কোটি নিউরন রয়েছে, যা আমাদের চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগ (ংুহধঢ়ঃরপ পড়হহবপঃরড়হ) তৈরি হয় আমাদের চিন্তার অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে। যদি আমরা নিয়মিত নেতিবাচক বিষয় পড়ি বা দেখি, তবে এই নেতিবাচক সংযোগ শক্তিশালী হয় এবং ধীরে ধীরে আমাদের চিন্তার ধরণ পরিবর্তিত হয়ে নেতিবাচক হয়ে ওঠে। এর ফলে:
আমাদের সৃষ্টিশীলতা ও গঠনমূলক চিন্তা কমে যায়।
আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হ্রাস পায়।
হতাশা ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়।
ব্যক্তিত্ব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
নেতিবাচক চিন্তা ও মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা:
খারাপ চিন্তা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে এবং তা ধীরগতি করে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক খবর পড়ে বা দেখে, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা ও দ্বিধায় ভোগে। এই সমস্যা ব্যক্তিগত, পেশাগত ও পারিবারিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নেতিবাচক চিন্তার ফলে:
মনে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়।
চিন্তা করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
আত্মউন্নয়ন ও মানসিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
সুখী ও সফল জীবনযাপনের সম্ভাবনা কমে যায়।
তরুণ প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা:
তরুণদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠছে। কারণ তাদের মস্তিষ্ক এখনও বিকাশমান অবস্থায় রয়েছে এবং তারা সহজেই নেতিবাচক কন্টেন্ট প্রতি আকৃষ্ট হয়। ইন্টারনেটের যুগে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক বিষয়বস্তু সহজলভ্য হওয়ায় তরুণদের জন্য এটি একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তরুণদের:
অশ্লীল, বিভ্রান্তিকর বা নেতিবাচক কনটেন্ট এড়িয়ে চলতে হবে।
গঠনমূলক ও ইতিবাচক চিন্তা চর্চা করতে হবে।
তথ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বাছবিচার করতে হবে।
আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
নেতিবাচক কনটেন্ট এড়িয়ে চলার উপায়:
নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে:
১. সচেতনতা: প্রতিদিন কী পড়ছি, কী দেখছি, তার প্রতি সচেতন হওয়া।
২. নেতিবাচক উৎস এড়িয়ে চলা: অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে চলা।
৩. ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস: নিয়মিত গঠনমূলক চিন্তা করা ও ইতিবাচক গল্প বা সফলতার গল্প পড়া।
৪. আত্মউন্নয়ন: নতুন কিছু শেখা, ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা এবং মানসিক বিকাশে মনোযোগ দেওয়া।
৫. আত্মনিয়ন্ত্রণ: নেতিবাচক বিষয়বস্তু দেখার ইচ্ছা হলেও তা এড়িয়ে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা।
পিতামাতা ও অভিভাবকদের করণীয়:
একজন আদর্শ পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অভিভাবকরাই সন্তানদের মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন।
সন্তানদের জন্য গঠনমূলক বই ও শিক্ষামূলক ভিডিও নির্বাচন করুন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সন্তানদের গাইড করুন।
পারিবারিক পরিবেশ ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করুন।
সন্তানদের মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করুন।
উপসংহার
নেতিবাচক চিন্তার ফাঁদ থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতি বুঝতে হবে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ইন্টারনেট যুগে, যেখানে নেতিবাচক কনটেন্ট সহজলভ্য, সেখানে সচেতনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণই হতে পারে একমাত্র রক্ষা কবচ।
আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও আদর্শ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিবাচক জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন, গঠনমূলক চিন্তা চর্চা করুন এবং আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর, সুস্থ ও ইতিবাচক সমাজ উপহার দিন।
মহিউদ্দিন সুমন
প্রভাষক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ঢাকা।