আমি সুয়াইব হাসান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার জন্ম নরসিংদীতে। সেখানেই বেড়ে উঠা। শিক্ষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় শৈশব থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এবং পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতা দুটোই ছিলো। জেএসসিতে দুর্দান্ত রেজাল্টের পর পরিবারের প্রত্যাশার পারদও চূড়ায় উঠে। তবে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই কিছু ঘটনা থাকে যা তাকে বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, অনেক কিছু উপলদ্ধি করতে শেখায়। আমার জীবনে এইরকমই একটা ঘটনা হলো এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। জেএসসিতে ট্যালেন্টপুল এ বৃত্তি পাওয়া আমি SSC তে এ গ্রেড নিয়ে পাশ করলাম। পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী সবাইকে তো হতাশ করলামই আর নিজেকেও ফেললাম বাস্তবতার চরম পরীক্ষায়। পড়াশোনার এই বেহাল দশা দেখে আমার পরিবার আমাকে ঢাকায় ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিলো। বড় ভাই ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র হওয়ার সুবাদে ভর্তি হলাম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে।
শুরু হল যান্ত্রিকতার এই শহুরে জীবন। ঢাকার আবহাওয়া, মিরপুর রোডের জ্যাম আর পদার্থ -রসায়নের জটিলতায় প্রথম কয়েকটা মাস কিছুটা স্ট্রাগল করতে হল। তবে সব কিছুর সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শুরু করলাম। কলেজ বিল্ডিং, মিরপুর রোড, নিউ মার্কেট সব কিছু আপন হতে শুরু করলো। সেইসাথে কলেজে জুটে গেলো বেশ ভালো কয়েকজন বন্ধু। টিচারদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গণিত-পদার্থের জট আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো। তবে আজ কলেজ জীবনের দিকে তাকালে যেই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে সেইটা হল “পত্রিকা পড়া।” তখন দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের সময়। কলেজে ঢোকার সাথে সাথেই পত্রিকা পড়তে শুরু করতাম। প্রথম পেইজ থেকে শুরু করে সম্পাদকীয়, কলাম, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক সবকিছু। এমনকি টিফিন টাইমেও ডুবে থাকতাম পত্রিকায় (এই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস টা এডমিশন টেস্টে দারুণ কাজে দিয়েছিলো)। মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়েও পত্রিকা পড়তাম। একদিন তো রসায়নের ম্যাম দেখে বলেই বসলেন “তুমি কি পত্রিকা পড়তে কলেজে আসো? “🤣🤣।
যাইহোক প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম। বিজ্ঞান বিভাগে কলেজে ২য় স্থান অধিকার করলাম। ততদিনে এই শহুরে জীবনের সাথে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সামনে চলে এলো এক জটিল সমস্যা। একান্তই পারিবারিক হওয়ার সেটা বিস্তারিত আর না বলি। কিন্তু সেই সময় কলজে অথরিটি যদি পাশে না দাড়াতো তাহলে আমার শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত ঘটার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো। পারিবারিক সংকট পাশ কাটিয়ে আবার পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু জৈব রসায়ন আর ইন্টিগ্রেশন এর চাপে পড়াশোনাও অনেক কঠিন মনে হতে লাগলো। কলেজ থেকে কোচিং এর ব্যাবস্থা করা হলো। স্যার – ম্যামরা তদের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে চেষ্টা করলেন। আমিও আমার সাধ্যমত চেষ্টা করলাম যথাসময়ে সিলেবাস শেষ করার।
অবশেষে উনিশের এপ্রিলে এইচএসসি এক্সামে বসলাম। শিক্ষকবৃন্দের অক্লান্ত শ্রম, দোয়া আর নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় সম্মানজনক জিপিএ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলাম। তারপর এডমিশন কোচিংয়ে ভর্তি হলাম। ঢাবি এবং জাবি এই দুইটি ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেই এবং আল্লাহর রহমতে দুইটিতেই চান্স পাই। পরবর্তীতে পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। শুরু হয় জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।
২০১৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করি। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্র হিসেবে শুরু করি ভার্সিটি লাইফ। যুক্ত হই সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, JU Chess Society, Jahangirnagar University Career Club, ধ্বনি সহ নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে।
তবে আজ এই ভার্সিটি জীবনের ব্যাস্ত সময়েও কলেজের স্মৃতি হরহামেশাই মনে পড়ে যায়। সেই কলেজ বিল্ডিং, ক্যাফেটেরিয়া, পেপার ডেস্ক সব কিছু যেনো এখনো আমাকে ভীষণ টানে।এই কলেজের সাথে মিশে আছে আমার জীবনের এক সংগ্রামী অধ্যায়, এইখান থেকেই পেয়েছি জ্ঞানচর্চার প্রতি এক ব্যাকুল আগ্রহ, পেয়েছি ইট পাথরের নগরে মানিয়ে চলার শিক্ষা।
অবশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা -ভালো থাকুক আমার কলেজ, ভালো থাকুন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী, আর ড্যাফোডিল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাফল্য, খ্যাতি, জ্ঞানের দ্যোতি ছড়িয়ে পড়ুক দেশ বিদেশ।