Daffodil College Alumni Md. Ali Emam(05-06)

চীনের সাংহাই ওশান ইউনিভার্সিটিতে PhD করছে আলী-ইমাম

আজকের গল্পটা যদি এভাবে শুরু হয়-

হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান,

তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সন্মান,

কন্টক-মুকুট-শোভা।

কবির কন্ঠে সুর মিলিয়ে যদি বলি-দারিদ্রতাই মানুষের প্রতিভা ও অন্তর্নিহিত শক্তির প্রকাশকে সম্ভব করে তোলে-তাহলে বোধ হয় কিছু ভুল বলা হবে না। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের ২০০৫-০৬ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আলি ইমাম প্রসঙ্গে যে কথাগুলো না বললেই নয়। আঘাত-সংঘাতের মধ্যেই ব্যক্তির সাহস ও সামর্থ্যের প্রকাশ ঘটে। আঘাত আসে আসুক, ব্যাঘাত আসে আসুক। পৃথিবীতে জীবন সংগ্রামের আছে সাফল্য, আছে ব্যর্থতা। তাতে কি যায় আসে ?

গত ২২/৭/২১ তারিখ অন-লাইনে কথা বলছিলাম ইমামের সাথে। অনেক ব্যস্ততার মাঝে সে কিছুটা সময় আমাকে দিয়েছিল যা রেকর্ডে ধারণ করেছিলাম, কয়েকবার কথাগুলো শুনেছি – জীবন কত বিচিত্র! এবার গল্পটা শোনা যাক ।

আমি মোঃ আলী-ইমাম । আমি চীনের সাংহাই ওশান ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরাল ডিগ্রি করছি এবং আমার গবেষণার বিষয় Fishery Economics । আমি  চীনের নানজিং তথ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিনান্সে ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি  অর্জন করেছি। মালয়েশিয়ার মালভার্ন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি থেকে বিজনেস স্টাডিজ এ ২০১৭ সালে ডিপ্লোমা অর্জন করেছি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের  আতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে মালয়েশিয়াতে এসেছিলাম কর্মসংস্থানের জন্য। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ২০০৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।

এবার পেছনের কথাগুলো বলতে চাই। আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ করার পরে আমার শিক্ষার খরচ বহন করা আমার বাবা-মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল  না। কারণ, আমার আরও ছয়টি ভাই-বোন  ছিল ।

আমি সত্যিই দুশ্চিন্তায় ছিলাম, এরপর  কী হবে আমি কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি কি আর পড়াশোনা চালিয়ে  যেতে পারবো না ? ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে, উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মাথা উচু করে বাঁচবো।

এমন সময় সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ সম্পর্কে জানতে পারি । জিপিএ -এর ভিত্তিতে  ৫০%  ছাড়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। ব্যাপারটা তখনই আমার বাবা- মায়ের সাথে আলোচনা করি। এবং আমার বাবা আমার এক আত্মীয়ের  কাছ থেকে  ভর্তির জন্য টাকা ধার করে আনেন। ভর্তি ফি জোগাড় হওয়ার পরে  কলেজে ভর্তি হলাম বটে, কিন্তু  আমি পড়াশোনার জন্য বই কিনতে পারিনি। এমনকি নিয়মিত কলেজ টিউশন ফিও দিতে পারছিলাম না। তবে আমি ভাগ্যবান যে, আমাদের তৎকালীন অধ্যক্ষ মহোদয় জামশেদুর রহমান স্যার আমাকে বই এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে প্রচুর সহযোগিতা করেছিলেন ।

আমি  অধ্যক্ষ জামশেদুর রহমান স্যারকে ধন্যবাদ জানাই তার সমর্থন ব্যতীত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আমার পক্ষে সত্যিই কঠিন ছিল ।

ড্যাফোডিল কলেজের পরিবেশ, সেই সময়কার শিক্ষকবৃন্দ, সিনিয়র অফিসার রুনা ম্যাডাম এবং মাসুম ভাইয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাথে আচরণ অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। রুনা ম্যাডাম সর্বদা শিক্ষার্থীদের সমস্যা জানার ও বুঝার জন্য আন্তরিকভাবে কথা বলতেন এবং তাদের সমস্যা সমাধান করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন । সবসময় সবাইকে ভালোভাবে পড়ালেখার ও ভালো রেজাল্টের জন্য উৎসাহিত  করতেন ।

জামশেদুর রহমান স্যারের সহায়তায় এইচএসসি পরীক্ষা সফলভাবে শেষ করেছি বটে, তবে আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই, কিন্তু কীভাবে? আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তবে আমি স্বপ্ন দেখেছি এবং আমার সদিচ্ছাই আমাকে এগিয়ে নিয়েছে । স্নাতক ডিগ্রি পড়ার সময়ে, আমি আমার মাকে হারিয়েছিলাম যিনি সর্বদা আমাকে সমর্থন করেছিলেন এবং তিনি আমার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন। আমার প্রতিটি সিদ্ধান্তই মায়ের চোখে ঠিক ছিল। মায়ের হঠাৎ মৃত্যু আমার গোটা বিশ্বকে অন্ধ করে দিয়েছিলো । এক বছর ভালো করে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারি নি কিন্তু হাল ছাড়িনি, অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করি । আমি যখন মালয়েশিয়ায় ছিলাম, বাবা পরপারে চলে গেলেন ।  তখন ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, বাবার জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। 

জীবনে ভালো কিছু পেতে হলে অনেক সময় অনেক ত্যাগও করতে হয় এটাই বাস্তবতা । 

শিক্ষা জীবন সত্যই আনন্দময়, একজন শিক্ষার্থী যদি সত্যিই নিজ হৃদয়ের কথা শুনে এবং অনুভব করে তবে সে বিজয়ী হবে ।

একজন শিক্ষার্থীর সবসময় মনে রাখতে হবে ” দিনের শেষে সে নিশ্চয়ই বিজয়ী হবে “

Tags: No tags

Comments are closed.