Daffodil International College Blog(Afroza Sultana)

মাশরুম-ওষুধ, টনিক ও হালাল সবজি

মাশরুম-ওষুধ, টনিক ও হালাল সবজি
মাশরুম-ওষুধ, টনিক ও হালাল সবজি

মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি, যা সম্পূর্ণ হালাল। মাশরুম Fungi রাজ্যের Eumycota বিভাগের Basidiomyoetes শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত পরজীবি ছত্রাক। অনেকের ধারণা ব্যাঙের ছাতাই মাশরুম। কিন্তু ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম এক জিনিস নয়। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বিষাক্ত ছত্রাক। আর মাশরুম হলো গবেষণাগারে উদ্ভাবিত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক।

প্রকৃতিতে অসংখ্য মাশরুম রয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার মাশরুম ভক্ষণযোগ্য হলেও বিশ্বে মাত্র ২০ টি জাতের মাশরুম চাষ করা সম্ভব হয়েছে এবং কিছু কিছু বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ঝিনুক, কান, বোতাম, ঋষি, খড় ও শিতাকে মাশরুম চাষ করা সম্ভব।

মাশরুমের স্পোর গজিয়ে যে হাইফা তৈরি হয় , সেই হাইফা সমষ্টি বা মাইসেলিয়াসকে “স্পন” বলা হয়। টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও মাশরুমের কোষকলা থেকে স্পন উৎপাদন করা হয়। এই স্পনের মাধ্যমেই মাশরুমের চাষ করা হয়ে থাকে। মাশরুম চাষের জন্যে আবাদি জমি দরকার হয় না। অসবুজ হওয়ায় সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না বিধায় ঘরের মধ্যেই চাষ করা যায়। অপরদিকে বাংলাদেশের জলবায়ু, আবহাওয়া মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগী। মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য। তাই চাষিরা কম পুঁজি ও অল্প শ্রমে মাশরুম সেন্টার থেকে স্পনভর্তি সাবস্ট্রেটসহ পিপি ব্যাগ সংগ্রহ করে । যে কোন ছোট পরিসরে কাঠ বা বাঁশের তাকে সারিবদ্ধভাবে চাষ করে অল্প সময়ে(৭-১০ দিন) মাশরুম পেতে পারেন, যা বিশ্বের কোনো ফসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। মাশরুম তাজা অবস্থায় পিপি ব্যাগে ভরে সিল করে ফ্রিজে রাখলে বেশ কয়েকদিন ভালো থাকে। তাছাড়া তিন চারদিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং শুকনো মাশরুম ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

মাশরুম-ওষুধ, টনিক ও হালাল সবজি-
মাশরুম-ওষুধ, টনিক ও হালাল সবজি-

প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমের পুষ্টিগুণ

প্রোটিন: ২৫-৩৫%, ফ্যাট: ৪-৬% ভিটামিন ও খনিজ: ৫৭-৬০%, কার্বোহাইড্রেট: ৫%-৬%। উন্নত বিশ্বে মাশরুম অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। বর্তমানে বাংলাদেশে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও বড় বড় হোটেল এবং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পছন্দের কারণে সবজি হিসেবে মাশরুম খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। মাশরুমের মুখরোচক স্বাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রাচীনকাল থেকেই উন্নত বিশ্বের মানুষ খাদ্য তালিকায় মাশরুমকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যবহৃত হতো অসাধারণ লোভনীয় স্বাদের মাশরুম। বিশ্বব্যাপী ভোজন রসিকরা মাশরুমের স্বাদকে তুলনা করেন মাংসের সাথে। আর সে কারণে মাশরুমকে বলা হয় সবজি মাংস।

মাশরুম এমন একটি সবজি যা বিচিত্রভাবে আমাদের দেশীয় পদ্ধতিতে মাংস, ছোট-বড় যে কোনো মাছ, সবজি প্রভৃতি যে কোনো আইটেমের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করলে খাবারের স্বাদ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই-ই নয়, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুডে (বার্গার, স্যান্ডউইচ, শিঙ্গাড়া, নুডুলস, ফ্রাই) মাশরুম ব্যবহার করে জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়।

বিদেশে মাশরুম ‘ওষুধ, টনিক ও খাদ্য’ একের ভেতরে তিন হিসেবে পরিচিত।

তাই,

‘রোগমুক্ত স্বাস্থ্য চান

নিয়মিত মাশরুম খান’

কারণ

মাশরুম শরীরের জমাকৃত কোলেস্টেরল মুক্ত করে। এতে রয়েছে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, নোভাস্টানিন এবং এনটাডেনিন।

মাশরুমে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ থাকায় শরীর স্লীম রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

কমচর্বি। কোলেস্টেরলমুক্ত এবং লিনোলেয়িক এসিডসমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুম হৃদরোগীদের জন্যেও অত্যন্ত উপকারী খাবার।

মাশরুম এমন একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি এবং টনিক যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিক, উচ্চরক্ত চাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টিউমার, হেপাটাইটিস-বি, জন্ডিস, এইডস, প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিরোধক।

শুধু তাই নয়, নিয়মিত মাশরুম খেলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। মেরুদণ্ড দৃঢ় হয়, ব্রেইন সুস্থ থাকে, এমনকি চুল পড়া ও চুল পাকা বন্ধ করে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মাশরুম একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। শুধু তাই নয়, মাশরুম চাষের মাধ্যমে এ দেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এমনকি বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে যে কেউ অল্প পুঁজি ও অল্প পরিশ্রমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। নিয়মিত মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে নিজেকে রাখতে পারেন রোগমুক্ত ও সুস্থ সবল।

-আফরোজা সুলতানা

সিনিয়র প্রভাষক, জীববিজ্ঞান।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Comments are closed.