Daffodil International College Teachers Blog by Nasreen Sultana (NS)

নিরাপদ খাদ্য ও সাম্প্রতিক সময়

নিরাপদ খাদ্য ও সাম্প্রতিক সময়

ঈশ্বর গুপ্তের বাণী- ‘ ভাত মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল।’ কিন্ত ভাত মাছ খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়াস বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা আজকাল অসাধু ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ফায়দা লুটতে ইউরিয়া, ফরমালিন, কার্বাইড সহ বিভিন্ন কেমিক্যাল পদার্থ খাদ্যদ্রব্যে মিশিয়ে তা বিষে পরিণত করে ফেলছে।

হাট বাজার ঘুরেও কেমিক্যাল মুক্ত মাছ পাওয়া যায় না কোথাও। আগে পাইকারি আড়ৎ গুলিতে প্রকাশ্যে মাছের স্তুপে ফরমালিন বা কেমিক্যাল যুক্ত পানি স্প্রে করা হতো কিন্তু প্রশাসনের নজরদারিতে তা এখন কমে গেলেও অভিনব উপায়ে মাছে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। যেমন- বড় মাছ তাজা অবস্থায় ফরমালিন ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা, ছোট মাছ ফরমালিন মিশ্রিত পানির ড্রামে চুবিয়ে তুলে ফেলা, ফরমালিন মিশ্রিত বরফ যা দেখতে হালকা বাদামি রঙের তা দিয়ে মাছকে চাপা দিয়ে রাখা ইত্যাদি।

বেকারীর কারখানায় খাবার সতেজ ও আকর্ষণীয় করার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যাডেটিভ পদার্থ, টেক্সটাইল রং সহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারে খাবার বিষাক্ত হয়ে পড়ে।

বাজারে এখন বিভিন্ন ফলের সমাহার যেমন:আম,জাম,কলা, পেঁপে পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল আঙ্গুর নাশপাতিসহ দেশী ও বিদেশী সব ফলই চোখে পড়ে। কিন্তু এই সব ফলই বিষে ভরা। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য ফল গাছে অপরিপক্ক থাকা অবস্থায় ইথিলিন ও ইথরিল হরমোন অতিমাত্রায় স্প্রে করা হয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফল পাকাতে ব্যবহার করা হয়। যারকারণে ফলগুলো রীতিমত  বিষে পরিণত হয়।তবে কেমিক্যাল ব্যবহার করে পাকানো ফলের সব অংশে সমান রং হবে এবং ফলের ভিতরের চামড়ার অংশে একটু তিতা হবে। এছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি লাগবে।

আজকাল মুড়িতেও ইউরিয়া,হাইড্রোজ ব্যবহার করে লম্বা, সাদা ও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।এসব মুড়ির গায়ে অসংখ্য ছিদ্র থাকে, দেখতে খুব সাদা কিন্তু স্বাদ পানসে হয়ে যায়।

এসব ভেজাল- বিষাক্ত  খাদ্য  খেয়ে ক্যান্সার, কিডনি – লিভার বিকল হয়ে যাওয়া  সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে, ডায়াবেটিস রোগে ১ লাখ ৫০হাজার, কিডনি রোগে ২ লাখ লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতা সহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। সুতরাং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি গণ সচেতনতা ও দরকার।

Formalin in Food
Formalin in Food

আমরা  কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে খাদ্যদ্রব্যকে কেমিক্যাল মুক্ত করতে পারি।যেমন – মাছ ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই ফরমালিন মুক্ত করা যায়।মাছ কিনে এনে খুব ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে এর পর প্রায় এক ঘণ্টা তাকে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা পানির প্রভাবে মাছের শরীরের ফরমালিন কিছুটা বেরিয়ে যায়।এর পর লবণ পানি তৈরি করে তাতে কিছুক্ষণের জন্য ভিজিয়ে রাখুন মাছ। লবণ মাছের শরীরের ক্ষতিকর রাসায়নিককে সহজেই বের করে আনে।

এছাড়া প্রথমেই চাল ধোয়া পানি দিয়ে ধুয়ে নিন মাছ। তার পর সাধারণ পানি দিয়ে ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এতে সহজেই ফরমালিন সরে যাবে। 

ফল ও সবজিকে ফরমালিনমুক্ত করার সব চাইতে ভালো পদ্ধতি হলো- ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে (পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখা। এতে প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।

এছাড়া ফলমূল খাবার আগে সেটি হালকা গরম এবং লবণ মিশ্রিত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ দূর হবে।

আশা করি এসব ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করলে আমাদের কিছুটা উপকার হবে। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের নজরদারি আরও কঠোর ও বিস্তৃত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও দৈনিক যুগান্তর

নাসরীন সুলতানা

প্রভাষক (রসায়ন বিভাগ)

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Comments are closed.