কলেজ জীবনের দুটি বছর

কলেজ জীবনের দুটি বছর

কলেজ জীবনের দুটি বছর

এইতো সেদিন! চোখের নিমিষে চলে গেল ১৮ টি বছর। ২০০৩ থেকে আজ ২০২১ সাল। কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের সাথে আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের ১৮ বছর অতিক্রম করলাম। প্রতিবছর নতুন নতুন ছেলে মেয়ে। নবীন বরণ এর মাধ্যমে আমরা ওদেরকে বরণ করে নেই। দেখতে দেখতে চলে যাওয়ার সময় হয়ে যায় ওদের। এ যেন অন্য রকম অনুভুতি!

 “কেউবা লম্বা, কেউবা খাটো, কেউবা ফর্সা , কেউবা কালো -সবাই আমার প্রিয়। ওদেরকে অনুভব করা যেন আমাদের দায়িত্ব।

আমরা বলি এরা কথা শোনেনা, ওরা লেখাপড়া করে না, নিয়মিত না, মনোযোগী না। আবার কেউ অধিক মনোযোগী, কোনদিন ক্লাস মিস করেনি। কেউবা শুধু নিজের লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা বন্ধুর পড়া হলো কিনা সেটাই নিয়ে ব্যস্ত।

আসলে তো ওরা ছোট। যদিও ওরা কলেজে পড়ে, শুধু হাতে পায়ে লম্বা হয়ে বেড়ে উঠেছে  কিন্তু মনটা রয়ে গেছে শিশুসুলভ।

কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির মধ্যে পার্থক্যটা মাত্র ২ বছর। কিন্তু একটা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে পার্থক্যটা অনেক। দুই বছরেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন।

 দায়িত্ববোধ বেড়ে যাওয়া, নিজের প্রতি এবং পরিবারের প্রতি সচেতন হওয়া, নিজের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া সবই যেন জাদুর মত পরিবর্তন হয়ে যায়। কেউ কেউ যে ব্যতিক্রমী নয় তা নয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রকম দেখা যায়।

এমনো দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীর পিছনে সারাক্ষণ লেগে থেকে তাকে তৈরি করতে হয়েছে, পথ দেখাতে হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীর পথই আমরা এখন অন্য শিক্ষার্থীকে দেখাচ্ছি। এইতো আমাদের জীবন!

কলেজ জীবনের দুইটা বছর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।এটা একটা ঝুলন্ত সেতু। সেতু টা খুব সাবধানে সময়ের মধ্যেই পার হতে হয়। একটু বাঁকা হলেই পড়ে যেয়ে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আমরা শিক্ষকরা ছেলেমেয়েগুলোকে দেখাশোনা করছি, জ্ঞানদানের চেষ্টা করছি, আমরা হলাম ওই সেতুর খুঁটি। আমরা যত মজবুত হবো ততই ওদের সেতু শক্ত হবে, ঝাঁকুনি কম লাগবে।

আমরা ওদের দেখাবো স্বপ্ন। সেতু পার হলেই যে রয়েছে স্থায়ী ঠিকানা। নিজের ক্যাম্পাস, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের চেষ্টা চলে সবসময়। যদি ওরা একবার‌ স্বপ্নটাকে লালন  করতে পারে, নিজের বলে ভাবতে পারে, তাহলেই আমরা সার্থক। ওদেরকে আর আমাদের ঠেলতে হবে না। ওরা নিজেই শিক্ষক এবং অভিভাবকে ঠেলবে, স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করার জন্য। আমরা ওদেরকে ওই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

সকল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কাছে আমার আহ্বান তোমরা সাবধানে সেতুটা পার হও। আনন্দ করো, আমাদেরকে আনন্দিত করো।

রওশন আরা ফেরদৌসি

অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রিন্সিপাল

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

Tags: No tags

Comments are closed.