Daffodil College Alumni Students(Nirob Mojumder)

কর্মমুখর পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো নীরব মজুমদার

দূর থেকে আসাদ গেটে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছিল। আরও একটু এগিয়ে   গেলাম- ওমা! এ তো আমাদের ছাত্র নীরব,নীরব মজুমদার।

তুমি এখানে?

ক্লাস করনি?

 নীরবের প্রত্যুক্তি -না ম্যাডাম।

 একটু রাগ হলো বৈকি। আজকে ক্লাসে ‘হৈমন্তী’ গল্প পড়ালাম-যৌতুকের বলী হৈমন্তী, And she is Dead কিন্তু ছেলেটা যে কিছুই জানতে পারলো না- তার কী হবে?

প্রত্যুত্তরে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, নীরব কাছে এসে বিনীত স্বরে বললো,-

 -ম্যাডাম কোথায় যাবেন?    

 -যাবো তো মিরপুর, কেন?

 -গাড়ি এখনই এসে পড়বে। 

গাড়িতে উঠতে উঠতে বললাম,-কাল ক্লাস করবে। 

পরদিন সকালে ক্লাসে নীরবকে দেখলাম নীরবে বসে আছে; গুরুর নির্দেশ পালন করেছে। ক্লাস শেষে বের হয়ে আসছিলাম, পেছন থেকে নীরব বললো

 -ম্যাডাম, টিফিনে ছুটি লাগবে।  

-না ছুটি হবে না। নীরবের দু‘জন সতীর্থ ওর পাশে দাঁড়ানো ছিল। একে অপরের মুখের দিকে চাইতে লাগলো। বললাম -সবাই ক্লাসে যাও। সতীর্থ দু‘জন এগিয়ে এসে বললো

 – ম্যাডাম ও তো একটা ‘পার্টটাইম’ জব করে -তাই আরকি

– নীরবকে ডেকে নিয়ে যা জানলাম-আমি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। 

চার ভাই এক বোনের সংসারে নীরব সবার বড়, বাবা মারা গিয়েছেন বছর পাচেক হলো। অসহায় মা,ভাই-বোনের সংসারের হালটা ছাত্রাবস্থায় তাই নীরবকেই শক্ত হাতে ধরতে হয়েছিলো।  ওকে ছুটি দিলাম। এরপর যখনই আসাদ গেটে গিয়েছি, আমার দু‘চোখ ওকেই খুঁজে বেড়াতো। দেখা হলেই এগিয়ে আসতো। কালো ব্যাগ-কখনো হাতে, কখনো বা কাঁধে ঝুলতো। নীরব ছুটি নিয়ে চলে গেল। 

ভাবনার অতল সাগরে আমি শুধু ভাবছিলাম-জীবন যুদ্ধ কতটা কঠিন, তা বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়ালে বোঝা যায়, যেমনটা বুঝেছিলো নীরব। সিটিং সার্ভিস বাসের সামান্য টিকিট বিক্রেতা নীরব মজুমদার বুঝেছিলো- মানুষ নিজেই নিজের সৌভাগ্যের স্থপতি, তার সাফল্যের একনিষ্ঠ কারিগর। এ পৃথিবী অলস কর্মভীরুদের জন্য নয়। বুঝেছিলো- কর্মই জীবন, কর্মের মধ্যেই জীবনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা। পর মুখাপেক্ষী নয়,নীরব কর্মমুখর পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল নিজের ভাগ্যকে গড়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়ে। সে এখন দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ালটন’ এর ‘অথরাইজড সার্ভিস পার্টনার’ হিসেবে ব্যবসা করছে।

জীবনের এই পর্যায়ে এসেও নীরব তার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল কলেজের কথা ভুলতে পারেনি। সে বার বার তার কলেজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। অনেক শিক্ষকের নাম সে কখনো ভুলতে পারবে না,যারা তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ভুলতে পারবে না কষ্টের মধ্যে সেই মধুময় অতীতকে। বর্তমানে তার নিজের একটা সংসার হয়েছে; তার ঘর আলো করে এসেছে একমাত্র মেয়ে সিদরাতুল নিহা। নীরবের পরিবারের জন্য ড্যাফোডিল পরিবারের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।

Comments are closed.